Tuesday, November 22, 2016

পেশায় তারা ভূতওয়ালা।

না ভুল শুনেনি। পেশাই তাদের ভূতওয়ালা। ভূতই তাদের রুটি,রুজি। ভূত নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়ান। গ্রামের ছেলে-বুড়ো সবাই ‍ভূতওয়ালা বলেই জানে তাদের। আর আমিতো ভূত দেখতেই গেলাম। 
সারারাত ট্রেন জার্নি (ভ্রমণ করে) যখন আমরা পৌঁছালাম ভূতওয়ালাদের গ্রামে তখন বেলা শুরু। বছরে এই সময় তাদের কাজের চাপ কিছুটা থাকে। তবে চৈত্র মাসে চাপ খুব বেশি। ঐ সময় ভূতওয়ালাদের ঘুমও নাকি হারাম।
তবে আজ ভূতওয়ালাদের বিন্দুমাত্র সময় নেই আমাদের সাথে কথা বলবে। গত রাতে উত্তর পাড়া থেকে ডাক এসেছিল। সন্ধ্যার আগে আগে যেতে হবে আরো তিন বাড়ি। সারারাত উত্তর পাড়ায় ভূত নিয়ে কাজ করতে হবে। 
এ বাড়ি ঐ বাড়ি সবার ডাকাডাকি ও ভূতওয়ালা আমাদের বাড়ি আসো তোমার ভূত নিয়ে। ভূতের কদর, ভূতওয়ালার কদর। আমাদেরও কদর কম নয়। আমরা মেহমান। তাই হাজার ব্যস্ততার মাঝে বাড়ির লোকজন আমাদের খোঁজ খবর নিচ্ছেন। আমরা তাদের কাজের ব্যাঘাত না ঘটিয়ে চলে আসলাম। অবসরে দেখা হবে। কথা হলে আড্ডা। শহরবাসীও না হয় জানাব কে ভূতওয়ালা । কি ভূত তারা পোষেন।






ওরা তিনজন ভূতওয়ালা।

এ কেমন পেশা?
মাসখানিক পর আমরা আবারও গেল ভূতওয়ালাদের গ্রামে। ওহ ভূতওয়ালা একটু সময় হবে ভাই? না সময় নেই। নতুন ফসল আমাদের তাদের নাওয়া খাওয়া কেড়ে নিয়েছে। আমি তিনজের দলে আর একজন । সারাদিনের জন্য দিনমজুর হয়ে গেলাম। খাওয়া ফ্রি। বিনিময়ে কোন টাকা মিলবে না।

পাবনার বিভিন্ন গ্রামে ভূত ও ভূতওয়ালাদের দেখা মিলবে। তারা গ্রামে গ্রামে ছুটে চলেন ভূত নিয়ে। ভূত এক ধরনের মটর চালিত মাড়াই যন্ত্র। ধান, গম,ভুট্টা, তিল, তিশি, মাসকলাই, সরিষাসহ নানা ফসল মাড়াই করা হয় এই মেশিনের সাহায্যে। এই মেশিনের একদিকে দিয়ে পুরো কান্ডসহ বিভিন্ন ফসল ডুকিয়ে দেওয়া হয়। অন্যদিক দিয়ে ফসল ও উচ্ছিষ্ট আলাদা হয়ে বের।




ফসল মাড়াই যন্ত্র ভূত।

এই মেশিনের নাম স্থানীয় ভাবে ভূত । যারা মেশিন চালায় তারা ভূতওয়ালা। ভূতওয়ালাদের নিয়ে গ্রামে নানা কথা প্রচলিত আছে এখন। বলা হয় ভূতওয়ালাদের পেট নাকি ভূতের ন্যায়। আস্ত গরু খেয়ে ফেলতে পারে তারা। ধান,সরিষা,ভুট্টা,তিল,তিশি, মাসকলাই যাই মাড়াই করা হোক ভূতওয়ালাকে প্রতি মণে তিন কেজি দিতে হয়। সাথে খাবার সারাদিনের খাবার, পান, চা, বিড়ি তো আছেই।




আমি ভূতের ভাগ বুঝে নিচ্ছি। প্রতি মণে তিন কেজি।

উত্তরপাড়া যাবার আগেই আমি ক্লান্ত দেহ নিয়ে চলে আসলাম। সারা শরীরে আমার মাসকলাইয়ের গন্ধ। সবাই আমাকে নবান্নের আমন্ত্রণ দিল। আর মাসখানি পর শুরু হবে নবান্ন উৎসব। শহুরে সেই ব্যানার, পোস্টার, পত্রিকার পাতায় কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সেই স্বাদ-গন্ধহীন কৃত্রিম নবান্ন উৎসব নয়। এই গ্রামে নবান্ন মানে দলে দলে গ্রামের মেয়েরা বাড়ি আসবে। সাথে শিশুরা। জামাইদের জন্য শত পদের পিঠা বানানো হয় এই গ্রামে। 
ভূতের মালিক সামছু ভাই আমাকে এগিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন। ভাই ভূত মেশিন ভাল না। অনেক মানুষ বেকার হইয়া গেছে। দশজনের কাজ একাই করা যায়। এতগুলা মানুষের রুটি-রুজি শেষ করে দিল। 
আসলেন আর যাবেন। একদিন থেকে যান। তিলের পিঠা বানাবে আপনার ভাবি। কিছুই তো খাওয়া হল না। থাকলে সমস্যা কি একদিন বেশি থাকলে। একদিনের সম্পক তার চোখে পানি। একদিনের সম্পর্কের সামছু ভাই আমার স্মৃতি চাঁদের মত উজ্জ্বল হয়ে থাকবেন।
আমি সন্ধ্যার ট্রেনে ঢাকায় ফিরছি। সারা আকাশ জুড়ে আজ চাঁদের রাজত্ব। আজব চাঁদ। আমার ঢাকায় ফিরতে ইচ্ছে করছে না। জয়দেবপুর নেমে গেলেই ভাল হয়। ঢাকার আকাশে চাঁদ ভাল লাগে না। ঢাকার আকাশে ধূলার স্তর অনেক বেশি। তাই চাঁদের রূপ ভাল ভাবে উপভোগ করা যায় না। 
এই নবান্নে না হোক পরে নবান্নে পাবনার, চাটমোহর,অটলংকার গ্রামের সেই চিকনাই নদীর পাড়ের চাঁদ আর ভূতওয়ালা সামছুর দুজনের সাথে আবার দেখা হবে। এই প্রত্যাশা নিয়ে আরো কয়েক যুগ বাঁচতে চাই।

Wednesday, November 2, 2016

নগর চড়াই/চড়ুই

'বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই, কুড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াইআমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে তুমি কত কষ্ট পাও রোদ বৃষ্টি ঝড়ে

স্বাধীনতার সুখ নামক কবিতায়  রজনীকান্ত সেন এর চড়াইয়ে সুখের গল্প সবাই জানলেও। সুপরিচিত চড়াইয়ে নগর জীবনের সুখ শূন্যের কোটায় । বিশেষ করে ঢাকার মত শহরগুলোতে চড়াই/চড়ুই দেখা পাওয়াই কঠিন।

যেকোন লোকালয়ের আশেপাশে চড়ুই একটি সুপরিচিত পাখিএরা জনবসতির মধ্যে থাকতে ভালোবাসে তাই এদের ইংরাজি নাম হাউস স্প্যারো অর্থাৎ "গৃহস্থালির চড়াই/চড়ুই।

পৃথিবীতে মোট ৪৮ প্রজাতির চড়ুই দেখতে পাওয়া যায়জীববিজ্ঞান অনুযায়ী এদের পরিবার ১১টি গণে বিভক্ত। "গৃহস্থালির চড়ুই" এদের মধ্যে সবচেয়ে সুপরিচিতএদের আদি নিবাস ছিল মূলত ইউরেশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশ  

কয়েক দশ আগেও ঢাকা শহরে বাড়ির উঠান, ঘরের কোনে, বারান্দায় চড়ুইয়ের উপস্থিতি ছিল খুবই স্বাভাবিক চড়ুইয়ের ডাকে শুরু হত সকাল। আর সন্ধ্যায় চড়ুইয়ের ডাকে আমরা বুঝতাম মাঠ থেকে বাড়ি ফিরতে হবে। ঘরের ভেন্টিলেটারে চড়াই দম্পতির সংসারটায় সদ্য জন্ম নেওয়া চড়াই আমাদের পরিবারের অংশই ছিল। ভোর রাতে রোজার সময় প্রায়ই দেখতাম চড়াই এসে খাবার নিচ্ছে টেবিল থেকে। মাঝে বারান্দায় রেখে যাওয়া চায়ের কাপে খুই উৎসাহ নিয়ে চড়াই ঠোট ভিজায়। এসব খুব বেশিদিন আগের নয়। গেল দুই দশ আগের গল্প।

শহরটা ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে চড়াইয়ের জন্য। স্বাধীনতার সুখ কবিতার বাবুই তো শহর ছেড়ে পালিয়েছে বহু আগে।  আর চড়াই গত কয়েক শতকে ইট কংক্রিটের নগর জীবনের সাথে শহুরে জীবন যাত্রা মানিয়ে নিতে পারলেও।   বতমানে নগরগুলো চড়াই শূন্য হয়ে পড়ছে। নগরগুলোতে চড়াই কমে যাবার অন্যতম কারণ হল মোবাইল অপারেটরদের টাওয়ারগুলোযেখান দিয়ে তরঙ্গ প্রবাহিত করে সেই জায়গাগুলোই চড়াইদের উড়ার জন্য প্রকৃত উচ্চতাফলে তারা বেশীর ভাগ সময়ই সাবলীলায় উড়তে পারে না, পথ হারায়

ইট কংক্রিটের শহরে মানুষের তৃষ্ণনা মেটাতে নগর কতৃপক্ষে হাজার কোটি টাকা বাজেট থাকলেও কোথাও চড়াইয়ের তৃষ্ণনা মেটাবার জলের ব্যবস্থা নেই। নগরে কোটি টাকা ব্যয়ে সৌন্দযবধনের সারি সারি গাছ লাগনো হয় । কিন্তু ক্ষুদ্র চড়াইয়ে খাদ্যের জোগান দিবে তেমন গাছ নেই। সব মিলিয়ে নগরগুলো চড়াই বান্ধব নয়।

আমাদের এই পরিবেশ বিধ্বংসী উন্নয়নের কারনে হয়ত একদিন নগর থেকে চড়াই বিলুপ্ত হয়ে যাবে।  কিন্তু বিলুপ্ত শুধু চড়াইয়ের মত ক্ষুদ্র পাখিটির বিলুপ্ত হওয়া নয়। চড়াইয়ের বিলুপ্তি নগরগুলো যে ক্রমেই মনুষ্য বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে তারই প্রমান।

এত হতাশার মাঝে ঢাকা শহরে কিছু কিছু স্থানে আমি সুখ নিয়ে চড়াই দেখি। সন্ধ্যায় কিচির মিচির শব্দে কানে তালা লাগার মত অবস্থা। আমি অস্থির চোখে তাকিয়ে দেখি চড়াই দম্পতির ব্যস্ততা। তারপর সন্ধ্যার আলো নেভার আগেই চড়াইগুলো কোথায় যেন মিলিয়ে যায়।

তবে কিছু কিছু এলাকায় ভিন্ন আচরনের চড়াই দেখি। দেখি সারারাত শত শত চড়াই দম্পতি গাছে ডালে বসে থাকে। তাদের কোন ঘর নেই। পাশে বড় বড় অট্টালিকা থাকলে শত শত চড়াইয়ে কেউ সেই অট্টালিকাগুলোতে যায় না। মোহাম্মদপুর বেড়িবাধ এলাকার সাদেক খান ফিলিং স্টেশনে বাগান বিলাশ গাছের ঝোপে আমি এমন কয়েকশ চড়াই দেখেছি। দিনের পর দিন সারা রাত জেগে থেকে লক্ষ্য করেছি পাখিগুলো রাতে কোথাও যায় কিনা। ভোর হবার আগ পযন্ত ওরা ওখানে বসে থাকে। তেল পাম্পের কতৃপক্ষ চড়াইয়ের জন্য খাবার পানি ও খাদ্যের বিশেষ ব্যবস্থা করেছে।

রজনীকান্ত সেন  এর স্বাধীনতার সুখ নামক কবিতা আর আমাদের ভেন্টিলেটারে থাকা চড়াই দম্পতি দেখে বুঝতে শিখে ছিলাম চড়াইরা অট্টালিকায় আশ্রয় নেয়। কিন্তু সাদেক খান পাম্পের নগরের এই চড়াইগুলো দেখি ভিন্ন কিছুতারা সারারাত গাছেই থাকে। হয়তবা প্রতিকূল পরিবেশ বেঁচে থাকার জন্য ভিন্ন কোন কৌশল রপ্ত করছে। 

কৌশল যাই হোক চড়াইগুলোকে বাঁচতে দিতে হবে। আমাদেরও কৌশলী হতে হবে। আমাদের চারপাশের পরিবেশ চড়াইবান্ধব করতে হবে। যে শহরে এই ছোট প্রাণী চড়াই নিরাপদ নয় সেই শহরে আমরা এত বড় প্রাণী আর কতটাই নিরাপদ থাকবে। বিলুপ্ত হওয়া চড়াই রক্ষার স্বার্থে একদল লোক ২০১০ সাল থেকে ২০ মার্চ   পালন করছে চড়ুই দিবসবা World Sparrow Day
 শুধুই নগরে চড়াই বিলুপ্ত হয়ে যাওয়াই সমস্যা নয়। সমস্যা হল এই শহরে চড়াই বিলুপ্ত হওয়াটা আমি দেখছি মানুষ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার পদধ্বনি হিসেবে।


Monday, October 31, 2016

বাংলাদেশের যে গ্রামে ফ্র্রি থাকা খাওয়া ব্যবস্থা আছে ।

পৃথিবীর যে কয়টা মেগাসিটিতে কমদামে থাকার হোটেল পাওয়া যায় তার মধ্যে ঢাকা অন্যতম। এক ডলারের কিছু বেশি খরচ করলে ঢাকায় থাকার হোটেল মিলে। তাও আবার ভাসমান থাকার হোটেল। এই খবর টি এখন আর্ন্তজার্তিক গণমাধ্যমের কল্যানে সারা পৃথিবীর ভ্রমণপিয়াসী মানুষ জানে।  
কিন্তু বাংলাদেশে টাকা ছাড়াই থাকার ব্যবস্থা আছে। আছে খাবারের ব্যবস্থা। নিরাপত্তা, সামাজিক দায়বদ্ধতা, সহযোগিতা আর তারচেয়ে বড় কথা মানুষের বিপদে মানুষের পাশে মানুষ থাকবে। মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার এই সংস্কৃতি একটা দুইটা জায়গা নয়। গ্রামের পর গ্রাম মিলবে এই সংস্কৃতি।
আমার নেশা ঘুরে বেড়ানো। আর এই নেশার সাথে যুক্ত কত কম খরচে ঘুরে বেড়ানো যায়। কোথাও যদি বিনামূল্যে থাকা, খাওয়া যায় তাহলে তো কথাই নেই।
ব্যাগ, পানির বোতল আর সেলফোন নিয়ে উদ্দেশ্যহীন ভাবে বেড়িয়ে পড়লে বাংলাদেশে কোথাও আটকাতে হয় না। প্রতিবার হয়েছে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা। যুক্ত হয়েছি নতুন নতুন মানুষের সাথে। আর ভ্রমনের নেশাটাও তাই গরীবের ঘুরা না হয়ে আর্শিবাদ হয়ে গেল।
গন্তব্য উত্তরবঙ্গ। আমাদের তাড়া নেই। তারপরও দ্রুতযান নামের ট্রেনের চেপে বসলাম। বরাবরের মত শেষ সময়ে ট্রেনে সিটসহ টিকেট পেয়ে গেলাম। ট্রেন দ্রুততার সাথে গন্তব্যেরে দিকে যাচ্ছে। আমার সহ ভ্রমণকারী যাব কোথায়? থাকব কোথায় তা নিয়ে কোন প্রশ্ন করছে না। ট্রেনে কথা বলে আমরা মোটামুটি নিশ্চিত যেখানে যাব সেখানে কোন হোটেল নেই। ট্রেনে সবাই বুদ্ধি দিল সারারাত চাটমোহর স্টেশনে থেকে সকালে হবার জন্য। রাতে এই অঞ্চল নাকি নিরাপদ নয়।
ট্রেন রাত ১.০০টার পর চাটমোহরে পৌছল। স্টেশনের লোকজন জানাল আশেপাশে কোন থাকার হোটেল নেই। একটু ভিতরের গ্রামে গেলে ও“খানকা ঘর” এ থাকতে পারবেন। আমরা রাত একটায় চাটমোহর স্টেশন থেকে বের হয়ে রওনা হলাম। দেখি থাকার কোন ব্যবস্থা হয় কিনা?
মিনিট ৩০ র্নিজন রাস্তা চলার পর চাটমোহর স্টার হোটেলের মোড়ে এসে জানলাম স্টার হোটেল থাক নয়, খাবারের হোটেল।  

আমরা চাটমোহর মোড়ে ৮০+ বয়সী নিরাপত্তা প্রহরী চাচার সাথে রাত কাটিয়ে দেওয়াটাই নিরাপদ ভাবলাম। চাচা জানাল বাস স্ট্যান্ডের মোড়ে একটা থাকার হোটেল আছে।
সেলিম বোডিং। এত রাতে এই বোডিংয়ে অতিথি রাখে না। আমাদের সব সম্ভবের অপু সেলিম বোডিংয়ের মালিককে ঘুম থেকে ডেকে আমাদের জন্য থাকার ব্যবস্থা করে ফেল। ভাড়া ৮০টাকা । সারারাত ছারপোকার সাথে লড়াই করে ভোরে রওনা হলাম আটলংকার উদ্দ্যেশে। চারিদিকে ফসলের মাঠগুলো এখন বিশুদ্ধ সবুজ। এখানে নদীর জলও সবুজ। নদীর নাম চিকনাই। এই নদীর পাড়ের গ্রাম আটলংকা আমাদের গন্তব্য। আটলংকা সত্যি সুখী গ্রাম। এই গ্রামে গোয়াল ভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ, চিকনাই নদীর মিঠা পানি।
গ্রামের মানুষগুলো তাদের গ্রামে দূর দূরান্তের মানুষের বিশ্রাম বা সাময়িক আশ্রয়ের জন্য তৈরি করেছে “খানকা ঘর”। এক সময় প্রতিটি অবস্থা সম্পন্ন বাড়ির সামানে একটি করে খানকা ঘর রাখাই বাধ্যতামূলক ছিল। এখনও আছে তবে তার সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
সেই কমে যাওয়ার মাঝেও একটি খানকা ঘর আটলংকা, বউ বাজার সংলগ্ন বাড়ির খানকা ঘর।
কথা হয় চেয়ারম্যান বাড়ির ছোট ছেলে মো: রফিকুল ইসলাম সাথে। তিনি পেশায় শিক্ষকতা করেন। জন্মের পর থেকে খানকা ঘর দেখে আসছে তিনি। আগে গ্রামের বেশির ভাগ বাড়িতেই ছিল। আমারও এখনও ঘর রক্ষনাবেক্ষন করছি।
ঝড়, তুফান দিন কিংবা পথিক ক্লান্ত হলে এই ঘরে আশ্রয় নেয়। আমরা সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের সেবা করি।
এক সময় এই গ্রামগুলোতে প্রচুর লোক আসতো বিভিন্ন জায়গা থেকে নানা কাজে। এখনো আসে ফসলের সময় প্রচুর মানুষ আসে দূরদুরান্তর থেকে। মানসিক ভারসাম্যহীনরা আশ্রয় নেয়। সবারই আশ্রয় জুটে এখানে।
আমাদের খানকা ঘরে দরজা নাই। তার অর্থ আপনি দুনিয়ার যে প্রান্তের মানুষ হন না কেন খানকা ঘরে আপনার থাকার অধিকার আছে। আপনি যখন আশ্রয় পেয়েছেন। খাবার জোগাড় হবেই। রিজিকের মালিক আল্লাহ। গ্রামের একজনের খাবার থাকলে মেহমান খালি মুখে যাবে না খানকা ঘর থেকে।
খানকা ঘরের পাশেই পুকুর পথিকের পানির চাহিদা পূরণের জন্য খনন করা হয়েছিল। আমরা খাওয়া দাওয়া শেষ করে খানকা ঘরে বসে আছি। দুপুর বেলায় পুকুর পাড়ে শান্ত পানিতে সাদা-কালো ফুটফুটে মাছরাঙ্গার মাছ শিকার দেখছি। একটু দূরে চিকনাই নদীতে শুনতে পাচ্ছি নৌকা বাইচের জন্য নৌকা যাচ্ছে । সৌখিন মাঝিদের কণ্ঠে গান। এই গান সুখের গান। গ্রামের মা-বৌরা কড়তালি দিয়ে উৎসাহ জোগাচ্ছে। বিকেলে ছেলে বুড়ু সবাই যাবে নৌকা বাইচ দেখতে। এ উপলক্ষ্যে মেলা বসবে। সবার অনুরোধ নৌকা বাইচ দেখতে যাবার জন্য।
কিন্তু আমাদের তাড়া। ঢাকায় ফিরতে হবে।
মাত্র কয়েক যুগের ব্যবধানে আমার আরবান লিভিং কন্সেপট এর অন্তজালে জীবনকে আমি আর তুমিতে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছি। আমাদের এই নাগরিক জীবন ধারা যখন একটি প্রজন্মকে শেখাছে জীবন মানেই শুধুই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা কিংবা শুধুই মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া।
সেখানে উন্নত জীবনের পরিকল্পিত ছক আঁকতে গিয়ে এই বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিরোধে চাটমোহর থানার বিভিন্ন গ্রামের খানকা ঘরগুলো সামাজিকতা, মানবতা, মানুষের পাশে মানুষ দাড়ানো শেখানোর জীবন্ত বিশ্ববিদ্যালয়।
এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে মূল্যায়ন করা এবং তা থেকে অর্জিত জ্ঞান যদি আমার আমাদের নগরায়নের পরিকল্পনায় অর্ন্তভুক্ত করতে পারি। তবে আমরা আর বিচ্ছিন্ন হব না। আমাদের আগামী প্রজন্মটা শেকড়হীন হয়ে পড়বে না।
শুভ কামনা আটলংকা গ্রামবাসী। আপানাদের ঐক্য, সামাজিকবন্ধন সারাদেশের জন্য উদাহরণ হোক।

Tuesday, August 23, 2016

মুড়ি ভর্তা

৮০০টাকায় মুড়ি ভর্তা? না ভুল বলিনি অথবা ভুল শুনেনি। পাঁচ তারকা কোন হোটেলে নয় বাড্ডা লিংক রোড, গুদারা ঘাট, ঝিল পাড়ের দোকান। মুড়ি ভর্তা মানে যেই সেই মুড়ি ভর্তা নয়। ৮০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে বিশ টাকা পর্যন্ত। সাথে পাবেন টক, অদ্ভুদ টক, দই টক, গ্রীন টক।

যেহেতু দোকানের নাম শাহী মুড়ি ভর্ত। সেখানে নবাবী খাবারও পাবেন। নবাবী ভুড়ি ভুনা নামের খাবারের দাম মাত্র ৪০টাকা। মশলা, ডিম, মুরগী, কোয়েল, কবুতর, গরু কালা ভুনা, হাঁস কত কি দিয়ে যে মুড়ি ভর্তা হয় এই দোকানে।

যাদের বিশ্বাস টাকা হলে সব মিলে তারা কিছুটা হতাশ হবেন। সময় মত না গেলে লাখ টাকা হলেও আপনি শাহী মুড়ি ভর্তা পাবেন না।

টেস্টিং সল্ট আর পোড়া তেল ছাড়া তৈরি এই খাবার (বিক্রেতার দাবী)। খাওয়ার জন্য আমরা যখন গেলাম তখন প্রায়ই সব শেষ শেষ অবস্থা।

গতকাল আমি গিয়েছিলাম আমার এক দোস্তকে থাব্রাইতে। হাতিরঝিল পার হয়ে লিংক রোড হয়ে বারিধারা যাব। পথেই মিলল এই দোকান।

দোকানের মালিক জসীম সাহেব। কোটি টাকা ছাড়াও যে ঢাকায় ব্যবসা করা যায়। আস্থা আর ক্রেতার সন্তুষ্টির মাধ্যমে শীর্ষে পৌছা যায় তার প্রমাণ শাহী মুড়ি ভর্তা।

শুভ কামনা তরুন ব্যবসায়ীদের যারা ভাবছেন ব্যবসা করবেন করবেন। অনেক তো হল মিটিং-সিটিং, ওয়ার্কসপ, সেমিনার। এবার নেমে পড়ুন। মুড়ি ভর্তা কিংবা আলু ভর্তার দোকান। ক্রেতাদের সন্তুষ্ট করতে পারলেই আপনি সফল।

প্রথমে মুনাফা থেকে ক্রেতার সন্তুষ্টির দিকে বেশি নজর দিন। সফল হবেন ইন শা আল্লাহ।



Thursday, August 18, 2016

অহনদের কান্না শুনতে পান কি মাননীয় মন্ত্রী ??

অহন অহন বয়স মাত্র ৯। এই বয়সের অহনে বয়স থেকে বেশি বড় হয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি তাকে বাধ্য করছে দ্রুত বড় হয়ে যেতে। ৯ বছর বয়সে যখন অহনের স্কুল আর খেলার মাঠ নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা। সেই বয়সে সে সারাদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যস্ত বিনামূল্যে সেচ্ছায় রক্ত সংগ্রহ নিয়েG।
 
খুলনা কিংবা দেশের অনলাইনে যারা সেচ্ছায় রক্ত সংগ্রহ করে তাদের মাঝে অহন খুবই পরিচিত নাম। জন্মের পাঁচ মাস বয়সে তার থ্যালাসিমিয়া ধরা পড়ে। তারপর থেকে প্রতি মাসেই তার রক্ত দরকার হয় নিজের জন্য। প্রথমে তার পরিবারের লোকজন রক্তের ব্যবস্থা করত। কিন্তু বছর কয়েক হল অহন নিজেই নিজের রক্ত সংগ্রহ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। শুধুই কি তাই আশেপাশে কারো রক্তের প্রয়োজন হলেই অহনের ডাক পড়ে।
 
সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা সেচ্ছায় রক্তদানকারী, রক্তসংগ্রহকারী সবাই যেন অহনের ডাকে সাড়া দেয় নিমিষে। ইদানিং তার শরীরে খুব তাড়াতাড়ি রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। তাই মাসে প্রায় তিন চার বার রক্তের প্রয়োজন হয়।
 
বিপত্তি বাধে রক্ত থেকে রেডসেল সংগ্রহ করা নিয়ে। খুলনা থেকে যশোর প্রায় ৬০ কি:মি। অহনের মা প্রথমদিন রক্তদাতাকে নিয়ে যান যশোর। তারপর সেই রক্ত বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রেডসেল আলাদা করা হয়। পরেদিন সেই রক্ত এনে অহনকে খুলনায় দেওয়া হয়। এই আনা নেওয়া, রক্ত দেওয়া প্রক্রিয়াটা যতটা সহজ মনে হয় তারচেয়ে হাজার গুণ কষ্ট চাপা পড়ে আছে শিশু অহনের বুকে । 
 
 
আমি আমার আপূর কাছে শুনেছি জাপানে নাকি শুধুমাত্র একটি স্কুলের মেয়ের জন্য প্রতিদিন রেলগাড়ি যেতে স্টেশন। আমাদের দেশেও নাকি যোগাযোগ মন্ত্রী এক মেয়ের স্কুলে যাতায়াতের সমস্যার কথা শুনে বাসের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
 
আমি অহন। আমার মত অনেক অহন আছে খুলনায় l যাদের বেচে থাকার জন্য মাসে একবার দুইবার তিনবার রক্তের বিভিন্ন উপাদানের দরকার হয়। যেমন আমার দরকার হয় রেডসেল। আমার মা একদিন ডোনার নিয়ে যান খুলনা থেকে যশোর। তারপর রক্ত ওয়াশ হবার পর আবার রক্ত আনতে যেতে হয়। প্রতিবার ৬০ কিঃমিঃ । সেই রক্ত দেওয়ার জন্য আবার হাসপাতালে। সব মিলিয়ে আমার মায়ের খরচ ৩০০০টাকা। মাসে তিনবার হলে ৯০০০টাকা। কিন্তু যদি খুলনায় একটা রক্ত ওয়াস করার মেশিন থাকত।তাহলে এত টাকা লাগত না।
 
জাপানের মেয়েটির স্কুলের জন্য রেলগাড়ির দাম কত?
  ঢাকার স্কুলের পড়া মেয়েটির জন্য বাসের দাম কত?
 
মন্ত্রী আমরা তো আরো অনেকদিন বাঁচতে চাই। আমাদের রেড সেল দরকার শিশুদের জন্য একটা মেশিনের দাম কত? একটা মেশিন চাই।
 
ইদানিং আমার প্রতি সপ্তাহে রক্তের দরকার হয়। আমার মা তো ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে যশোর ও খুলনা যেতে যেতে। মন্ত্রী একটা মেশিন দিয়ে দেন না প্লিজ।
 
 
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বরাবর অহনের এই আকুতি হাজার হাজার মানুষ শেয়ার দেয়। অসংখ্য মন্তব্য। সবার অনুরোধ মাননীয় মন্ত্রী যেন একটা রক্ত ওয়াসের মেশিন দিয়ে দেয় খুলনা মেডিক্যালে হাসপাতালে। যদিও ফেইস বুকে একজন কমকর্তা জানিয়েছেন খুলনা মেডিক্যাল কলেজে এই মেশিনটি আছে নষ্ট অবস্থায়। মাত্র এক লক্ষ টাকা প্রয়োজন মেশিনটি মেরামত করার জন্য। মাননীয় মন্ত্রী প্রায় এক মাস হয়ে গেল খুলনায় এখনো মেশিনটি পৌছেনি।
 
মাননীয় মন্ত্রী অহনের অনুরোধটি বিশেষ বিবেচনায় নিন।হাসপাতালের মেশিনটি দ্রুত মেরামত করে দিন।
 
 

Monday, August 8, 2016

টাকা না হলেও অনেক কিছু ঢাকায় মিলে যেমন খাবার। বিনামূল্যে খাবার, মাগনা খাবার।

ঢাকায় টাকা উড়ে। শুধুই কি টাকা?
এই ঢাকায় টাকায় কত কি যে পাওয়া যায় তার হিসেব নেই। টাকা হলে বাঘের দুধ মিলে। কিন্তু টাকা না হলেও অনেক কিছু ঢাকায় মিলে, যেমন খাবার।  বিনামূল্যে খাবার, মাগনা খাবার।


প্রতিদিন ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিনামূল্যে খাবার পাওয়া যায়। কোথাও ভাত-ডাল-সবজি, কোথাও তেহারী, কেথাও খিচুরী।


ধানমন্ডিতে যদি কোনদিন দুপুরে খাবারের সংকটে পড়েন তবে সাত মসজিদ রোডের আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশনের মেহমানখানার অতিথি হতে পারেন। গতকাল আমি গিয়েছিলাম।


প্রতিদিন এখানে প্রায় হাজার দুই লোক দুপুরের খাবার খায়। যত খুশি তত খাও এই খাবার। কোন বাধা নেই। সারি সারি প্লেট সাজানো , পানির ট্যাংক, গ্লাস। হাত মুখ ধুয়ে। নাও আর খাও।


পোশাক আপনার যাই হোক না কেন? শেখ সাদীর মত আপনাকে এখানে বিব্রত হতে হবে না । এই মেহমানখানায় মেহমান হিসেবে সবাই সমান। পেটপুরে খেয়ে বাড়িতে নেওয়ার জন্য যদি আবদার করেন। তবে তাও রাজি মেহমানখানার লোকরা । আপনাকে পূণ আপ্যায়নেই নাকি তাদের পরিতৃপ্তি।

আমি গিয়েছিলাম গাজী আহমদ উল্লা ভাইয়ের রুমে। কেন এই খাবার? প্রশ্নের উত্তরে প্রথমেই বলল। আগে একটু খেয়ে নিন, তারপর প্রশ্নের উত্তর।

আমরা পেটপুরে খিচুড়ী খেয়ে আবার জানতে চাইলাম।

কেন এই খাবার? প্রতিদিন হাজার হাজার লোক আমাদের এখানে খেতে আসে। আমরা তাদের মেহমানদারী করতে পারি। তাতেই কতৃপক্ষের সন্তুষ্টি।

রাস্তায় নেমে কথা বলি কয়েকজন রিকশা চালক, ভবঘুরে মানুষের সাথে খাবার কেমন?

উত্তর একটাই স্বাদে ও মানে ঢাকার যে কোন খাবার দোকানকে পিছনে ফেলে দিবে ।

এবার আপনার পালা । চাইলেই গ্রহন করতে পারেন তাদের আপ্যায়ন।

Sunday, May 15, 2016

দেশ এখনো ডান্ডি কার্ডেই বন্দি।

গত পরশুদিন অভিজাত এলাকার চেকপোস্টে রাতে দায়িত্বে থাকা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোক আমায় বহনকারী সিএনজি অটোরিক্সায় থামায়। আমি সিএনজি অটোরিক্সা থেকে নামার সাথে সাথে একজন এগিয়ে আসে। তিনি বলেন কেমন আছেন। আমার সাথে ভদ্রলোকের আগে একবার পরিচয় হয়েছিল। আমি হাসি দিয়ে বললাম ভাল আছি। আপনি কেমন আছেন।

পাশেই একজন সিনিয়ন কর্তা এসে বললেন আপনি হাসি দিলেন কেন। বললাম তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন কেমন আছি আর যেহেতু তার সাথে পূর্ব পরিচয় ছিল তাই আমি হাসি দিয়েছি।
সিনিয়র কর্তা ক্ষ্যাপে গেলেন। সরকারী লোকের সাথে হাসি দিয়ে কথা বলো, দেখি ব্যাগ দেখি আইডি কার্ড কই, কোথায় যাব, কোথা থেকে আসলাম, কি করি তা বলছি। ব্যাগে কিছু কার্ড দেখে বলল এগুলো কি। বললাম এটি একটি অনুষ্ঠানের দাওয়াতপত্র।

তিনি মহাক্ষ্যাপা সরকারী লোকের সাথে হাসি দিয়ে কথা বলে।

যিনি আমার পূর্ব পরিচিত ছিলেন তিনি বার বার বুঝাতে চাচ্ছেন আমার সাথে কি ভাবে পরিচয়। সিনিয়র কিছুই শুনবেন না।তিনি বার বার আইনের লোকের সাথে হাসি দিয়ে কথা বলার অপরাধ স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন।

আমি তাজ্জব হয়ে আছি। কোন আইনে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে হাসি দিয়ে কথা বলা যায় না।
বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রে আমার ডান্ডি কার্ড নেই । আছে ভোটার আইডি কার্ড /জাতীয় পরিচয়পত্র সেই কার্ডের কোন অর্থবহন করে না চেকপোস্টে।

কারণ যে রাষ্ট্রের মানুষের মাঝে ধারণা থাকে হাসি দিয়ে কথা বলা অপরাধ। সে রাষ্ট্রে ডান্ডি কার্ডই ভরসা। সবাই স্বাধীন দেশের স্বাদ নেয়। কিন্তু দেশ এখনো ডান্ডি কার্ডেই বন্দি।

এই এক রপ্তানী হয়ে যাওয়া নদী।

 এই এক রপ্তানী হয়ে যাওয়া নদী। গত ত্রিশ বছরে যারা নদীর পাড়ে বসবাস পাড়ে বসবাস করেছেন, তারা জানেন। কি করে পোশাক রপ্তানীর নামে নদীটি রপ্তানী হয়ে গেছে ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে। শুধু যে নদী রপ্তানী হয়েছে তা নয়। রপ্তানীকারকরা নদীর উপর নির্ভরশীল মানুষগুলো জীবন জীবিকাকে করেছে বিপন্ন।




দ্বিতীয় ছবিটি বিশ্ব বিখ্যাত ব্যান্ডের পোষাক তৈরি কারখানার নদীতে রঙিন পানি ফেলার ছবি। যদিও তাদের দাবী তারা শতভাগ নিরাপদ কারখানায় পোষাক তৈরি করছে। তাদের দাবী শ্রমিকদের নিরাপত্তার পাশাপাশি পরিবেশের বিষয়ে তারা সচেতন। তার নমুনা এই ছবিগুলো। ব্যবসার নৈতিকতা আর দ্বায়বদ্ধতার যতটা দৌড় তিন তারকা হোটেলের আর ওয়েব সাইটে দেখা যায়। তার শতভাগ বিপরতী চিত্র বাস্তবে। ইটিপি (একটি প্রসেস যার মাধ্যমে ইন্ডাস্ট্রি এর অপরিশোধিত পানি পরিশোধিত করে ) এটি কত সময় চলে তার উত্তর যত সময় অডিট চলে তত সময়ই চলে। 

এখনও বর্ষায় নদীতে পানি আসে। কিন্তু সচ্ছ সেই পানি কোম্পানীর রঙে রঙ্গিন হয়ে যায়। কোটি কোটি লিটার সচ্ছ পানি কি করে গুটি কয়েক ব্যক্তির সম্পদের রঙে রঙিন হয় তারই ছবি এ নদী।
এ নদী শুধু মালিকের সম্পদের রঙিন জলছাপ বয়ে নিয়ে যাচ্ছে তা নয়। এ কালো পানির আড়ালে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবিকা বিপন্ন করার বুক চাপা কান্না ।

আমার পোষাক রাপ্তনী করি। নিশ্চয়ই পোষাক রপ্তানীর আড়ালে আমাদের নদী, কৃষি,জমি,পানি, জীবন-জীবিকা,স্বাস্থ রপ্তানী করতে চাই না। কোম্পানীর এই অত্যাচার বন্ধে রাষ্ট্রের আইন থেকে দুনিয়াব্যাপী সকল আইন,বিধি,নীতি সবই আমাদের পক্ষে। আসুন সোচ্চার হই। রুখে দেই কোম্পানীর রঙিন পানির সন্ত্রাস।

Tuesday, May 10, 2016

রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ রায়েরবার পালপাড়া/পটার পুকুর ভরাট প্রসঙ্গে।



 
বরাবর                                                                          
মহাপরিচালক
পরিবেশ অধিদপ্তর
আগারগাঁও, ঢাকা।

বিষয়: রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ রায়েরবার পালপাড়া/পটার পুকুর ভরাট প্রসঙ্গে।

জনাব
শুভেচ্ছা নিবেন। রাজধানী ক্রমেই পুকুর শূণ্য হয়ে পড়ছে। এমতবস্থায় যে কয়টি পুকুর আছে তা আমাদের জন্য আর্শিবাদ। এই পুকুরগুলো যথাযথ সংরক্ষণ করার মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি নগরবাসীর পানির চাহিদা পুরণে গুরুত্বপূণ ভূমিকা রাখবে।
রায়েরবাজার, শের-ই-বাংলা রোডে পটার পুকুরটি ভরটার চলছে। 

পরিবেশ রক্ষা, ঢাকা মহানগরী ভবিষ্যৎ পানির চাহিদা পূরণে এবং মহানগরী, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের পৌর এলাকাসহ দেশের সকল পৌর এলাকার খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এই পুকুরটি ভরাট বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণে অনুরোধ করছি।

ধন্যবাদসহ

সৈয়দ সাইফুল আলম
বাসা: ৫৮/১, সড়ক: ১ম লেন কলাবাগান
ধানমন্ডি, ঢাকা
সংযুক্তি :
১. রায়েরবার পালপাড়া/পটার পুকুরের ভরাটের ছবি





Thursday, May 5, 2016

পুরো একটি নদীকে কয়েক ইঞ্চি পাইপে বন্দি করে ফেলল। ঢাকা ওয়াসা কর্তৃক নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্থ করে এ নির্মান কাজ ।



ঢাকা ওয়াসা ঢাকার জনগনের পয়:নিষ্কাশন পানি সরবারহের কাজে নিয়েজিত। অতীতে ঢাকার খালগুলো ধ্বংসের অন্যতম কারণ ছিল ঢাকা ওয়াসার কার্যক্রম। ওয়াসা খালগুলোকে বক্সকালভার্ট তৈরি করেছে। আর এখন ঢাকার পাশে একটি গ্রামে তাদের আয়রন রিমুভ প্ল্যান্ট ও ৪৬টি গভীর নলকূপ তৈরি করতে গিয়ে পুরো একটি নদীকে কয়েক ইঞ্চি পাইপে বন্দি করে ফেলল। ঢাকা ওয়াসা কর্তৃক নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্থ করে এ নির্মান কাজ









বাংলাদেশ পানি আইন, ২০১৩; জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন, ২০১৩, ২০১৩; মহানগরী, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের পৌর এলাকাসহ দেশের সকল পৌর এলাকার খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০; পানি সম্পদ পরিকল্পনা আইন ১৯৯২; বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড আইন, ২০০০; গ্রাউন্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট অর্ডিন্যান্স ১৯৮৫; বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫; ; The Canal Act 1864; The Embankment and Drainage Act 1952; পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ আইন ১৯৯৬; রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০; The Ports Act 1908; The Public Parks Act 1904; The Irrigation Act 1876; The Tanks Improvement Act 1939; The Cantonments Act 1924; The Territorial Waters and Maritime Zones Act 1974; স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন ২০০৯; স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন ২০০৯; স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন বিরোধী।


ঢাকা ওয়াসার মত একটি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান যদি নদী দখল ও ধ্বংসের মত এই রকম কাজে লিপ্ত হয় । তবে দেশের নদী রক্ষায় কোন আশার আলো নেই। অবিলম্বে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ রক্ষার স্বার্থে এই পাইপ সরিয়ে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে।





ঢাকার পাবলিক টয়লেট এখন দোকান।


যেহেতু নগরবাসির এখন আর মলত্যাগের জন্য টয়লেটের দরকার হয় না। তাই পাবলিক টয়লেট এখন দোকান। শাহবাগ শিশু পার্কের কাছে ফুটওভার ব্রিজের নিচের এই টয়লেটটি বর্তমানে দোকান হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়েছে।
হে নগরবাসী কি বুঝিলে?
সারা ঢাকার রাস্তা ঘাটই এখন তোমাদের টয়লেট।

ঢাকার পুকুর।

রাজধানীতে অনেকেই খানিক সময়ের জন্য হলেও পুকুরে ডুবতে চান। কিন্তু সময় সল্পতা আর পুকুর শূণ্যতা নিয়ে যারা ভাবেন কোথায় ডুব দিবেন। তাদের জন্য এই দুটি পুকুরের ছবি। আগারগাঁ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের রাস্তাটা দিয়ে সোজাঁ উত্তরের যান। পুকুরগুলো পাবেন। তারপর মন মত ডুব দিন। বিনামূল্যে এই পুকুরে ডুব দেওয়া যায়। আসার পথে অপ্রয়োজনে শাপলা ছিড়ে আনার অভ্যাস পরিত্যাগ করুন।

শুভ ডুবাডুবি। এই গরমে রাজধানীর আশে পাশে ৪০খানা পুকুরের জলে দেহ ভাসিয়েছি। আপনার আশে পাশে পুকুর থাকলে আমাকে দাওয়াত দিন।


Monday, March 21, 2016

ঢাকার রিকশার বন্ধের পদক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।


ঢাকা শহর থেকে রিকশা বন্ধে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পরিবেশ দূষণ,যানজট, অমানবিক নানা অযুহাতে। কিন্তু কোন পদক্ষেপই সফল হয়নি। রিকশা বন্ধের এই কার্যক্রম বিশ্বব্যাংক শুরু করলেও। এখন বিশ্বব্যাংক সরে এসেছে। তবে এখন প্রচেষ্টা চলছে নানাভাবে। দিন কয়েকদিন আগে একটি পত্রিকা অনেক বড় বড় করে সংবাদ প্রকাশ করল। শাহাজাদপুর এলাকায় রিকশার নিধারিত লেন দিয়ে চলছে না।
আমিও গেলাম দেখতে ঘটনা কি?
১. ড্রেনেরও উপর স্লাবের উপর রিকশার লেন তৈর হয়েছে। তাও আবার ফাঁক-ফাঁক। এই ফাঁক দিয়ে আস্ত হাতি পরে যাবে। রিকশা চলে কি করে?
২. লেনে বেশির ভাগ অংশ জুড়ে বিদ্যুতের পিলার।
৩.লেন জুড়ে ব্যক্তিগত গাড়ি পাকিং, দোকান, ট্রাক-ভ্যান থামিয়ে মাল তোলা নামানো হয়।
৪.লেনের অনেক জায়গা দেখলে মনে হবে ছোট কোন খাল। ঢাকার অনেক খালেও এত পানি থাকে না।

ঢাকার কোটি মানুষের যাতায়াতের মাধ্যম রিকশা। এটি পরিবেশবান্ধব, লক্ষ মানুষের জীবিকা নির্বাহ হয় এই রিকশার মাধ্যমে। আমাদের যাদের গাড়ি নেই, বাসের চড়ার ব্যবস্থা নেই। তাদের জন্য রিকশা যে কত বড় আশিবাদ। তা শুধু রিকশা আরোহীরাই জানে। কিন্তু শহরে একটি বিরাট অংশ রিকশা যাতায়াত করলেও। তাদের কথা কর্তৃপক্ষ ভাবেনি এই লেন তৈরি করার সময়। তার প্রমাণ এই ছবিগুলো।
ঢাকার রাস্তায় পরিবেশ দূষণ, যানজটের অন্যতম কারণ প্রাইভেটকার। তবুও সব সুবিধা তারই জন্য। কারণ প্রাইভেট কারে যারা চলে তারা নিয়ম তৈরি করে। তাই তারা সড়কে শুধুই তাদের সুবিধা নেয়।
এই স্ল্যাবের উপর দিয়ে কি করে রিকশা চলবে জনাব?
এই অথৈ পানির মাঝে দিয়ে কি রিকশা চলবে?
যদি বলেন চলে। তবে কাল থেকে আপনাদের ব্যক্তিগত গাড়িগুলো চালান
দুইদিন। যদি বলে না। তবে রিকশা লেনগুলো সঠিক ব্যবস্থাপনায় আনুন


Monday, March 14, 2016

বাংলাদেশ ব্যাংক এই ব্যাংকটির অবৈধ কার্যক্রম সম্পর্কে অভিযোগ দিয়ে ব্যাপক ঝারি খাচ্ছি।



আমি বাংলাদেশ ব্যাংক এই ব্যাংকটির অবৈধ কার্যক্রম সম্পর্কে অভিযোগ দিয়েছিলাম। তারপর আমি কয়েকদিন ফোনে যোগাযোগ করি। কোন সাড়া না পেয়ে এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমি বাংলাদেশ ব্যাংকে যাই। শুনলাম যে গর্ভনর চিঠিটি পাবার পর পর সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তারপর যাই সেই চিঠির সূত্র ধরে তদন্তকারী দায়িত্বশীল বিভাগে যেখানে গর্ভনর চিঠি পাঠিয়েছেন। তারা তো মহা ক্ষ্যাপা আমার উপর। আমার কি লাভ? ব্যাংক টাকা নিলে আমার সমস্যা কি? তারপর অনেক পর বুঝলাম। যে তাদের নাকি কোন এখতিয়ার নেই এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেবার।

তদন্তের জন্য যাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তিনি আমাকে বলে গর্ভনর কেন আমার কাছে মেইল দিয়েছে? কি জানেন। আমি গর্ভনরের জ্ঞানের পরিধি নিয়ে কিছু না বলে বললাম কি করা যায় তাই একটু বলেন। বলল আপনি গিয়ে তদন্ত করেন গ্রাহক হিসেবে তাদের কত টাকা লেনদেন হয়। কোন ব্যাংকে হয়। কতজন গ্রাহক। যে ব্যাংকে টাকা জমা হয় তার বিস্তারিত তথ্য। আমি তাকিয়ে আছি সেই কর্মকর্তার দিকে। বার বার মনে হচ্ছিল তিনি ভিন্ন কোন গ্রহ থেকে আসা লোক। আমি চাইলেই সকল তথ্য একটি ব্যাংক দিয়ে দিবে !!!!

এসে স্থানীয় পুলিশ ও জেলা প্রশাসককে চিঠি দিলাম। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করে জানলাম যে তারাও স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছে। এবার স্থানীয় প্রশাসনকে ফোন দিন দেখেন তারা কি করে। আমি ফোন দিয়ে শুনলাম পুলিশ মহাক্ষ্যাপা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজ তারা কেন করবে। আর আমি কেন অভিযোগ দিলাম তাতে তিনি মহাক্ষ্যাপা। আমি অভিযোগকরী হই কি করে। আমাকে তো ঝারি আর ঝারি। এত ঝারি শুনার পর আমি সিটিজেন রিয়েল এস্টেট ব্যাংককের কার্যক্রম নিয়ে আবারও চিঠি লেখার প্রস্তুতি নিয়েছি।

যেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসক কেউ জানেন না কার কাছে অভিযোগ জানানো যায়। আর কে এই অবৈধ কার্যক্রম রুখার দায়িত্বে আছেন। তাই আমজনতার সাহায্য চাই। আমাকে বলুন আমি আপনাদের সহযোগিতায় চেষ্টা চালাতে চাই।

শেষ কথা হারা যাবে না। স্থানীয় মানুষগুলোর আমানত রক্ষায় এই ব্যাংকের কার্যক্রম অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। তাই আপনাদের পরামর্শ চাই।

মৃত্যুর পর এই ছায়া ঘেরা পথ ধরে যদি ফিরতে হয়। তবে মন্দ কি?


নদী পাড়ি দিয়ে যখন রাতের আধারে আমি আস্তানার সন্ধান পাই। সরু পাহাড়ি পথ আর চারচালা ঘর দেখে ক্লান্তি অনেকটাই দূর হয়ে গেল। সকালে ব্যালকনিতে দাড়িয়ে জানালা সরিয়ে দেখছি সারি সারি রক্ত জবা আর দেশি-বিদেশি ফুলের সারি।
একদিন পাড়ি দিয়ে আমি বুঝে যাই। দিনের আলোর এই মায়াপুরী থেকে বের হওয়া যাবে না। সন্ধ্যার পর আমি বের হয়ে পড়ি বাড়ি ফিরব বলে। বার বার মনে হচ্ছিল একজন খেলোয়াড় যেমন তার তুঙ্গে থাকা সময় সিন্ধান্ত নেয় খেলা থেকে অবসর গ্রহনের। ঠিক তেমনি, আমিও বলি আনন্দময় এই মূহুর্তগুলোতে খবুই মন্দ হত না, যদি জীবন থামিয়ে দেওয়া যেত। এমন মূহুর্তগুলো পার করার পর অবশ্যই সেচ্ছায় মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন খুব কঠিন নয়। মৃত্যুর পর এই ছায়া ঘেরা পথ ধরে যদি ফিরতে হয়। তবে মন্দ কি?







Thursday, March 10, 2016

দুধই যাদের গলার ফাঁস!


দুধই যাদের গলার ফাঁস!


সৈয়দ সাইফুল আলম, বাংলামেইল২৪ডটকম

ঢাকা : রাজধানীর ধানমণ্ডি থেকে মাত্র মিনিট ১৫ সময় লাগে অটোরিকশায় যেতে। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড আর রায়ের বাজার থেকে আটিবাজারে কয়েক মিনিট পর পর অটোরিকশা যায়। এ বাজারে গরুর দুধ নিয়ে আসেন রফিকুল, ননীগোপাল, নেপালী, হাজি সাহেবসহ অনেক গোয়াল। 
হাজি সাহেবের পাঁচ গাভী আর একটি ষাঁড়। খাঁটি দুধের নিশ্চয়তা, সঠিক ওজন আর সততার জন্য হাজি সাহেবের সুনাম গ্রামজুড়ে। তার বাড়িতে গরুর দুধ নিমিষেই বিক্রি হয়ে যায়। কিন্তু রবি আর সোমবার দুধই তার গলার ফাঁস। কারণ এ দু’দিন পাইকার আসে না। তাই দুধ বিক্রি তেমন হয় না। দুধের দাম ওই দিনগুলোতে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় ওঠানামা করে। 
গেল সোমবার আমরা হাজির হলাম আটিবাজার মসজিদ মার্কেট দুধবাজারে। তেমন কোনো ক্রেতা নেই। মণ মণ দুধ আসছে আটি, ওয়াশপুর, আটি ভাওয়াল, তারিপাড়া, বাবুনসুর, শিকারিটোলা, আটি বাড়ালিয়া, গাটারচর, জয়নগর থেকে। ক্রেতা শুধু আমরা তিনজন। ‘কত মণ দুধ কিনবেন? ৩০, ৩৫, ৪০ যা চান তাই দেন। আমাদের উদ্ধার করেন।’ 
আমাদের স্থানীয় প্রদর্শক আগেই খামার ঠিক করে রেখেছেন দুধ আনার জন্য। খামার মালিকের বাড়িতে আমাদের খাওয়া-দাওয়ার করা আয়োজন হয়েছে। এ দামে দুধ কিনে তার বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া নেহাত অন্যায়। কিন্তু কিছুতেই না খাইয়ে ছাড়বে না। প্রয়োজনে দুধ বিক্রির দরকার নেই। 
আমরা একের পর এক গ্রাম পার হচ্ছি। শুধুই গরু আর গরু। বলা যায়, গ্রামগুলো এখনও গরুর গ্রাম! ঢাকা থেকে শুধু নদী দিয়ে বিচ্ছিন্ন এই গ্রামগুলোর চিত্র। এখনও আপনি চোখ বন্ধ করে যে গ্রামের ছবি দেখেন ঠিক তেমনি।
গ্রামের মানুষগুলো এখনও গরুগুলোকে তাদের পরিবারের অংশই মনে করে। প্রতিটি গরুর আলাদা আলাদা নাম আছে। গরুর জ্বরে মালিকও আক্রান্ত হন। সারারাত জেগে গরুর সেবা করেন তারা। এই গ্রামগুলোতে একটি গরুর বাচ্চার জন্ম যেমন আনন্দের সংবাদ হয়ে আসে তেমনি একটি গরুর মৃত্যুও হাহাকার আনে। 
আশপাশে কিছু ঘোষ বাড়ি আছে। তারা দুধ থেকে মিষ্টি, ঘি, মাখনসহ নানা প্রকার দুগ্ধজাত খাবার তৈরি করেন। কিন্তু তা উৎপাদিত দুধের তুলনায় অনেক কম। তাই স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অফুরন্ত দুধই গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়ায় ঝড়, বৃষ্টি, হরতালসহ বিভিন্ন বন্ধের দিন। 
দুপুরের পর পর আমাদের ফেরার পালা। আসার পথে আমিনুল এসে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। ‘ভাই কোক-পেপসি না খাইয়া এক সের দুধ খাইয়েন, স্বাস্থ্য ভাল থাকব, দামেও সস্তা। আমাগো মতো হাজার হাজার গোয়াল আর গরু বাঁচবো, যদি মাইনষে নিয়মিত দুধ খায়।’ 
আমরা একটা বিশাল অপরাধবোধ নিয়ে অটোরিকশায় করে ঢাকায় ফিরছি জনপ্রতি ভাড়া মাত্র ১৫ টাকা। কারও মুখে কথা নেই। আমরাও এ মানুষদের বিপদের সুযোগ পেয়ে সস্তায় ১ মণ দুধ কিনে বাড়ি ফিরছি। কিন্তু আমি ভালো করে জানি, আগামীকাল আমাকে প্রতি কেজি দুধ ৯০ টাকা করে কিনতে হবে শহরের দোকান থেকে। 
ধানমন্ডি থেকে মাত্র ৫-১০ কিলোমিটার দূরে গ্রাম আর শহরের মধ্যে কী করে প্রতি কেজি পণ্যের দাম তিন গুণ বাড়ে, এ এক বিস্ময়!  মাঝের মুনাফাকারীদের শৃঙ্খলটা ভেঙে যদি অন্য কোনো একটা সুযোগ তৈরি করা যায়, তাহলে কিন্তু হাজার হাজার কৃষক বেঁচে যান। সবুজ গ্রামগুলো সবুজই থাকবে। এই শহরের শিশু-বৃদ্ধরাও কৌটার দুধের স্বাদ নয় কিংবা খাঁটির নামে শুধু বিজ্ঞাপননির্ভর নানা রাসায়নিক উপাদানের দুধ থেকে মুক্তি পাবে। 
উৎপাদন বৃদ্ধি, বাজার, চাহিদা, গবেষণা কতই না ছোটাছুটি হলো! কিন্তু ঢাকার কাছের এই গ্রামের কৃষকদের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়া প্রমাণ করে, আমাদের তৃণমূলের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণে কতটা অসহায়।