Saturday, May 7, 2022

পলাশের খিচুড়ি। আমাদের অর্থনীতি

পলাশের খিচুড়ি। আমাদের অর্থনীতি ধোয়াঁ ওড়ানো গরম খিচুড়ি, আলু ভর্তা ও পিয়াজ-মরিচ ভর্তাসহ পুরো প্যাকেজ মাত্র বিশ টাকা। সাথে ডিম ভাজি বা ডিম ভুনা নিলে দাম হয় সবসহ ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা । ফুটপাতের রঙ্গিন ছাতার নিচে বসে পলাশের ভুনা খিচুড়ির স্বাদ যতটা ভাল লেগেছে। তারচেয়ে ভাল লেগেছে দুনিয়ার তাবৎ অর্থনীতির সংজ্ঞাকে পাশ কাটিয়ে দ্রবমূল্যের বাজারে গত ৪ বছরে খিচুড়ির দাম স্থিতিশীল রাখার সংজ্ঞা। গেল ৪ বছরে দুনিয়াব্যাপী চাল,ডাল,তেল,নুন দাম বেড়েছে বহুগুণ। কিন্তু যে ডাল, চাল,তেল, নুন মিলিয়ে যে খিচুড়ি হয়, পলাশের খিচুড়ির দাম বাড়েনি এক টাকাও। অর্থনীতির মারপ্যাচ ডিঙ্গিয়ে পলাশ কি করে সম্ভব করেছেন? ধানমন্ডি ২৭ থকে একটু এগিয়ে মোহাম্মদপুর যাবার রাস্তায় পশ্চিম পাশে র‌্যাবের অফিসের সামনে পলাশের সাথে কথা হল। আমি: খিচুড়ির চাহিদা কেমন? পলাশ: বেচা-কেনা ভালই, ১০০ থেকে ১২০ প্লেট বিক্রি হয়। আমি: খিচুড়ি সাথে দুই পদের ভর্তা, ২০ টাকায় পুষা ক্যামনে? পলাশ: পুষায় লাভ একটু কম হয় কিন্তু লস নাই। আমি: দিনে থাকে কত, মাস্তান পুলিশকে টাকা পয়সা দিতে হয়? পলাশ : নাহ কোন ঝামেলা নাই এখানে। আমি: এত কম লাভে দিন চলে? পলাশ: এখন সময় খারাপ মানুষের কাছে টাকা পয়সা নেই। গরীব মানুষ আমার কাছে আসে। দাম বাড়ালে মানুষ খাবে কি? মামুন পেশায় খেলোয়াড়। প্রশিক্ষণের জন্য থাকেন মোহাম্মদপুরে। হাজার হাজার কোটি টাকার অর্থনীতির ঢাকায় ২০ টাকায় দিন পার করার চেষ্টায় আছেন মামুন। প্রতিদিন পলাশের হোটেলের খাবার খেতে আসেন। একটু বেলা করে খেলে দুপুরের খাবারও হয়ে যায় বিশ টাকায়। মামুনের পাশে বসে খাচ্ছেন আর এক মামুন পেশায় আটো রিক্সা (সিএনজি) চালক। থাকেন আগারগাঁও। সকালের নাস্তায় তার বরাদ্দ ৩৫ টাকা। জনগণের সরকার কিভাবে কোম্পানির মুনাফা রক্ষার কান্ডারি হতে পারে তা নিয়ে ঝাল মিটালেন। ব্যবসায়িরা হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে যায় নানা ফাঁদে ফেলে। নানা ভাবে দাম বাড়ায় সরকার দেখে না। রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ ব্যবসায়ীদের হাতে গেলে সবার আগে মুনাফা। মুনাফাই যেন সব। মানুষ বাঁচার অক্সিজেনের দামও তাড়া হাজার গুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল। চাহিদা সাথে জোগান কম হলে দাম বাড়ে, মূল্যস্ফীতির জন্য দাম বাড়ছে, আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই, রমজান-ঈদ-পূজা, ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ, করোনা কি যুক্তিতে দাম বাড়েনি পণ্যের। এত এত দাম বাড়ার অর্থনীতির তত্ত্বের মাঝে পলাশের খিচুড়ির অর্থনীতির তত্ত্বটা জানা প্রয়োজন। যা ৪ বছরে খিচুড়ি দাম বাড়াতে দেয়নি। পলাশের খিচুড়ির অর্থনীতি আমাদের সাহস দেখায় বিকল্প অর্থনীতি সম্ভব। দূর্দিনে মুনাফা কমিয়ে ক্রেতাকে টিকিয়ে রাখার পলাশের ব্যবসায়ী নীতি যদি আমাদের বড় বড় কোম্পানিগুলো চর্চ্চা করে। তবে আমরা অন্য এক বাংলাদেশ পাব। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হাজার কোটি টাকার বিল গেট্স পড়ানোর সাথে, একজন পলাশকেও পড়ানো প্রয়োজন। যেন শিক্ষার্থীরা জানতে বিকল্প মানবিক অর্থনীতি ভাবনা অসম্ভব নয়। ক্রেতাকে জিম্মি করে মুনাফা নয়, ক্রেতাকে টিকিয়ে রেখে যে ব্যবসা পলাশ চর্চ্চা করে তাই উদাহরণ হোক আগামীর তরুন ব্যবসায়ীদের।

বাবু সমির দা’র সাথে কথা বলে যেতে পারেন। বহু সুবিধা পাবেন

আন্দিকুটের জোছনা।
আন্দিকুটের চাঁদের আলো সারা বাংলার ৬৮ হাজার গ্রামের চেয়ে কি ভিন্ন?

না এই চাঁদের আলো ভিন্ন নয়। তাহলে আন্দিকুটে কেন যাবেন?

চাঁদের আলো, গাছ পালা, রাস্তাঘাট মানুষ সবই বাংলার অন্য গ্রামগুলোর মত।

তাহলে আন্দিকুটে গিয়ে কি লাভ?
না লাভ নেই। কেনাকাটার জন্য ভাল কোন দোকানপাট নেই।
গ্রামে যদি দুপুরে যান। তবে রাস্তায় বিভিন্ন বাড়িতে কে কি রান্না করছে তার সুবাস পাবেন। সাধারণত গ্রামে যে একটা ধোয়াটে মন মাতানো গন্ধ আমি পাই, সেই গন্ধটাই পেয়েছিলাম আন্দিকুটে। আমার এক আত্মীয় আমাকে জানিয়েছিল গত রোজার ঈদের আন্দিকুটে যাবার জন্য।

তার বাড়ি আন্দিকুটের পাশের গ্রাম গাজীপুরে। আগেই বলে নেই আন্দিকুট গ্রামটির ঠিকানা পো: সিদ্ধিগঞ্জ, উপজেলা : মুরাদনগর, জেলা : কুমিল্লা। যাবার ব্যবস্থা ঢাকা সায়দাবাদ থেকে সরাসরি ঢাকা-নবীনগর তিশা বাসে পীরকাশিমপুর নেমে রিকশা, মোটর সাইকেল, অটোরিক্সা, সিএনজি চালিত অটোরিক্সায় কিংবা হেটে-্ই যেতে পারেন আন্দিকুটে। তাছাড় ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, সিলেট থেকে আসতে পারেন।

যদি বিনামূল্যে থাকতে চান এবং খাবার খেতে চান (খাবারের জন্য টাকা দিতে হয়)। তবে যাবার আগে অবশ্যই শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী সার্বজনীন দেব মন্দির কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে যাবেন। সাথে কমপক্ষে একজন গায়ক/গায়িকা বন্ধু নিয়ে যাবেন। যারা ঘুরাঘুরি মানে কেনাকাটা তাদের যাওয়ার কোন দরকার নেই। শতভাগ হতাশ হবে।

যারা নাগরিক কোলাহল থেকে একটা-দুটাদিন শুধু পাখির ডাক, গাছের পাতার শব্দ, কীটপতঙ্গের মৃদু শব্দে ঘুমাতে এবং ঘুম ভাঙ্গাতে চান। তাদের গন্তব্য আন্দিকুট কিংবা তার আশে পাশের গ্রামগুলো হতেই পারে।

আমি বলি আন্দিকুট বিখ্যাত জোছনা, বৃষ্টি, শীত, বর্ষা, শরৎ উপভোগের জন্য এবং সম্প্রিতির জন্য বিখ্যাত হতেই পারে এই গ্রাম।

তবে লোকে ভিন্ন কথা এই গ্রামে আছে এক মন্দির। সেই মন্দির ঘিরে হাজারো আয়োজন। এই মন্দিরের জন্যই নাকি দেশ বিদেশে আন্দিকুটের নাম পৌছে গেছে।

আজ থেকে ২৫০ বছর আগে আন্দিকুটে দেব মন্দির স্থাপন করা হয়।বাবু সন্দ্বীপ চন্দ্র সাহা এর ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেন। হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধসহ বিভিন্ন ধর্মের লোকদের এখানে বিনামূল্যে থাকার ব্যবস্থা আছে। থাকতে এখানে কোন প্রকার অর্থ দিতে হয় না।তবে খাবারের জন্য দিনে ১০০ টাকা আর রাতে ৫০ টাকা দিতে হয়। বছরে বেশ কয়েকটা উৎসব হয় এখানে। উৎসব মানেই খাবার ফ্রি। পুরো আন্দিকুট গ্রামের অধিকাংশ মানুষের চুলা বন্ধ থাকে সেদিন গুলোতে। সবাই সেইদিনগুলোতে মন্দিরের অতিথি।


এ বছর আমি বিভিন্ন মাজারে মাজারে ঘুরে ছিলাম শুধুই মানুষ দেখতে । আর সেই ঘুরাঘুরির কারণে যাই আখাউড়া, নবীনগর, কুমিল্লার কিছু এলাকায়।মাজার ঘিরে থাকা সংস্কৃতির বিভিন্ন এক রূপ পেয়েছিলাম নবীনগর-মুরাদনগর উপজেলাগুলোতে।

এখনো নবীনগর-মুরাদনগর উপজেলাগুলোর বিভিন্ন গ্রামে হিন্দু-মুসলিম ধর্মীয় উৎসবে এবং গ্রামগুলোর স্থানীয় নানা আয়োজনে জারি, সারি, পালা গান, মারফতি, কীর্তন, মলয় সংগীতের গানের আয়োজন হয়। দিনের পর দিন গ্রামগুলোতে শীতের শেষের দিকে গানের উৎসব হয়। মানুষ দেখার এই ঘুরাঘুুরির পাশাপাশি আমি এবার পরিচয় হই যাত্রা’র সাথে এই অঞ্চলে।

আমার জ্ঞানের সীমবদ্ধতায় আমি যা দেখি তাতেই মুগ্ধ। তাই এই অঞ্চলে ঘুরাঘুরির প্রতি আকর্ষণবোধ করি।এই আকর্ষণ থেকেই গেলাম আন্দিকুটে কীর্তণ শুনতে।


বিকেল বেলায় যখন মন্দিরে কীর্তণ হচ্ছে। আমার পাশে মুমিন ভাই বসা তিনি আমাকে নিয়ে এসেছেন আন্দিকুট দেখাতে। আমি কীর্তনের প্রতি কিছুটা আগ্রহ হারিয়ে বাবু সমিরের কথা শুনছি। প্রায় ৫০০ বছর আগের এক বট গাছ ঘিরেই গড়ে উঠেছে এই মন্দির। মন্দিরের বয়স ২৫০। গাছটা বট না পাকুর তা নিয়ে কয়েকজন র্তক শুরু করে দিল। আমি বট পাকুরে র্তকে না গিযে। পুকুরের পাড় ঘেষা সারি সারি সাদা টাইলসের লম্বা বারান্দায় দাড়িয়ে শুনছি একটা গাছ কি করে পুরো এলাকা পরিবর্তন করে দেয় সেই গল্প।


বাবু সমির দা’র বলে যাচ্ছেন। প্রায় ৫০কোটি টাকা ব্যয় করে এখানে স্থাপন করা হয়েছে মন্দির, একটি প্রাথমিক স্কুল, আশ্রম, অতিথিদের থাকার জায়গা, ওয়াক ওয়ে, বাধাই করে পুকুর ঘাট। আমি মন্দির আশ্রমের গল্প শুনা বাদ দিয়ে পুকুর পাড় ঘেষা বড় বারান্দা ওয়ালা অতিথি ভবন থেকে পানিতে চাঁদের ছায়া দেখছি। একটু পর আমি মন্দিরের সবুজ মাঠে বসে আবারও মুমিন ভাইয়ের গল্প শুনছি। এখানে বিনামূল্যে চিকিৎসার ক্যাম্প হয়, আশেপাশের চার-পাচঁ গ্রাম উৎসবের সময় খেতে আসে। হিৃন্দু মুসলিম নয় সবাই আশে এখানে বেড়াতে।


একটু রাত বাড়ার সাথে সাথে আমি মন্দির থেকে বের হয়ে পাশের বিশাল বাধাই ক রা খালের পাশের বসে আছি। আ হা কি শান্তির বাতাস। একটু পর পর মেঘ এসে চাঁদ ঢেকে দিচ্ছে। খনিকের জন্য অন্ধকার। আবার আলো। হালাক বৃষ্টির জাপটা এসে লাগছে গায়ে। একজন গায়ক বন্ধুর দরকার ছিল। আমার বড্ড ইচ্ছে হচ্ছিল একটা গান শুনার। চাঁদনী পসরে কে আমারে স্মরণ করে কে আইসা দাড়াইসে গো আমার দুয়ারে আমি গান গাইতে জানি না। তা নিয়ে কখনো আমার দু:খ হয় নি। আজ হচ্ছে। কয়েকজন বিশাল ভেসাল দিয়ে মাছ ধরছে খালে। যারা মাছ ধরছে তাদের ছোট ছোট ঘর তৈরি করেছে ভেসালের নিচে। চাঁদের আলোর কারণেই হয় ঘরগুলোতে কোন বাতি ধরায়নি তারা।

সমির দা আমাকে একটা নিয়ম জানিয়ে দিয়ে গেলন। এখানে যারা ফ্রি থাকে তাদের সকালে রান্না ঘরে কাজে সহযোগিতা করতে হয়। এখানে মন্দিরের পাশে যে স্কুলটি আছে তাতে প্রায় ৫০০ শিশু পড়াশোন করে। সেই শিশুদের জন্য দৈনিক যে খাবার হয় তাতে সেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে হবে।

দূরে কোন একটা অচেনা পাখি বিকট শব্দে ডাকছে। আমার স্থানীয় গাইড জানালেন দেশে বিপদ আসছে। বিপদ এলে এই পাখি ডাকে। আমি সুখের পাখির ডাক শুনতে চাই। আগাম এই বিপদের তথ্য প্রদানকারীর প্রতি আগ্রহ না দেখিয়ে। আমি জোরে পা চালাচ্ছি পাশের গ্রামের দিকে। সেই গ্রামের না গাজীপুর। এখানে আমার রাতের খাবারের দাওয়াত।


কিছু 
জরুরী যোগাযোগ  : মো: সাইদুল কবির ইউপি সচিব, মোবাইল- 01715736756, মো: গোলাম মোন্তফা 01777452121  ইউ.পি উদ্যোক্তা   ৩ নং আন্দিকুট ইউনিয়ন পরিষদ,  মুরাদনগর,কুমিল্লা