Wednesday, October 15, 2014

শিশুদের জন্য মুরগীর আস্ত রান। ক্যামেরা আর ব্যান্ডিং নিষিদ্ধ

ভোর ৫টায় আমাদের রওনা হবার সময় ঠিক করা হল। গন্তব্য আনন্দপুর। আনন্দপুর দুনিয়ার কোন প্রান্তের গ্রাম। সেই গ্রামে কি আছে, কেন যাচ্ছি, তার কোন কারণ জানি না। গাড়িতে উঠেই আমি ঘুম দিলাম।  ঢাকা ময়মনসিংহের ভাঙ্গা রাস্তা পারি দিতে গিয়ে। আনন্দপুরে যাওয়া নিয়ে আমার আনন্দ শেষ হয়ে গেছে। তারপরও আমি ঘুমাচ্ছি। ময়মনসিংহের মানুষের সময় জ্ঞানের জন্য বিখ্যাত। কারণ তারা যদি বলে এক ঘন্টার রাস্তা । তবে আপনি নিশ্চিত ‘ ঘন্টা তিনের রাস্তা পারি দিতে হবে। আমি একপ্রকার ঘুমিয়ে ময়মনসিংহে পৌঁছি। তারপর রানা ভাই বললেন নাস্তা করে নিতে হবে। কারণ সামনে খাওয়ার কোন ব্যবস্থা নেই। নাস্তা সেরে শহর থেকে মিনিট ৪০ গাড়ি চলার পর। গাড়িটি গ্রামের মাটির রাস্তায় নেমে পড়ে। যে বাড়ির উঠানে আমাদের গাড়ি থামানো হয়েছে, সেই বাড়ি ভর্তি শিশু। রানা ভাই ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে শিশুদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। এর নাম আসাদুল, এর নাম মানিক মিয়া, এর নাম .......................।

একটু পর খাওয়া দাওয়া শুরু হবে। সবাই খাবারের আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত। অনেক কিছু রান্না করা হয়েছে। আমরা স্থানীয় মানুষজনের সাথে গল্প করছি। হুট করে দেখি রানা ভাই বিষ্ফোরণ। খুবই রাগারাগি করছেন। কয়েকজনের সাথে। রাগের কারণ, কেন একটি মুরগী কম জবাই করা হল। ঘোষনা করা হল খাবার দিতে দেরি হবে। কারণ মুরগী জবাই করা হবে, তারপর আবার রান্না হবে। তারপর খাওয়া শুরু।


আমি রাধুনীর সাথে গল্প করছি। এই মহিলার হাত স্বর্ণ দিয়ে বাধাই করা উচিত বলে শুনেছি। রাধুনীর কাছে তার রান্নার রহস্য কি জানতে চাইলাম। সে শুধুই হাসে। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম রানা ভাই কেন বকা দিলেন? বাইচ্চা একটা বাইরা গেছে। ১৪জনের জন্য ৭টা মুরগী জবাই করছিলাম। সকালে আর একটা বাইচা আইল। মোট ১৫টা বাইচা। আমি মনে করলাম। ১৪টারে একটা কইরা রান দিমু। আর একটারে সিনার বড় টুকরা দিমু। কিন্তু মামায় মানে না। কয় ক্যান ১৫টা রান রান্না করি নাই। যাই হোক মুরগীর রান রান্না হচ্ছে।

এই গ্রামের সকল দরিদ্র এতিম শিশুর জন্য আজ মুরগীর আস্ত রান রান্না করা হয়েছে। আমি ভয়ানক  ক্ষুদা নিয়ে বসে আছি। শিশু ছাড়া এই খাবার আয়োজনে অন্য কারো অংশগ্রহনের সুযোগ নেই। কিছুক্ষনের মধ্যে খাবার বিতরণ শুরু হল। প্লেইট ভর্তি ভাত আর আস্ত মুরগীর রান। শিশুরা মুরগীর রান খাচ্ছে। চোখের পানি, নাকের পানিতে মুরগীর রানের মিশে একাকার। কেউ কেউ রান নিয়ে বসে আছে।  এখন খাবে না মুরগীর রান বাড়িতে নিয়ে খাবে।

আমি রানা ভাইয়ের পাশে বসে শিশুদের রানা খাওয়া দেখছি। এই শিশুদের অনেকের জীবনের আজ প্রথম রান খাচ্ছে। কারণ তাদের কারো মা,বাবা নেই। দাদা- দাদী কিংবা  কারো তাও আশ্রয় নেই। রক্ত সম্পর্কহীন গ্রামের কারো আশ্রয়ে বেঁচে আছে। এই শিশুদের কপালে যদি কখন মুরগীর মাংস জুটে কিন্তু কোনদিন মুরগীর রান জুটে না। রানা ভাই তাদের জন্য রান খাওয়ার প্রোগ্রাম চালু করেছেন।

জীবনে বহুবার মুরগীর রান খেয়েছি। কিন্তু আমার আজ মুরগীর রানের প্রতি লোভ সামলাতে পারছি না। কিন্তু রানা ভাইয়ের কঠোর নিষেধ শিশুদের খাওয়ানোর আগে পরে কেউ খাবার খেতে পারবে না। আমি রানা ভাইয়ের কাজ কর্মে কোন যুক্তি তর্কে যাই না।  আমি আমার জি১২ ক্যামেরা বের করে প্রস্তুতি নিলাম ছবি তোলার। এই মূহুর্তগুলো যদি ক্যামেরা বন্দী না করি তবে না-ই হবে। কতগুলোর শিশু হাসি মুখ ছবি। প্লেইট ভর্তি মুরগীর আস্ত রান। আমি একটা ছবি তোলেছি। রানা ভাই এসে জানিয়ে দিলেন ছবি তোলা যাবে না। আমি বললাম কেন। কাউকে খাবার খাইয়ে তার প্রতিদান চাও মানে ব্যবসা। এটা ব্যবসা নয়। আমি যুক্তি দিলাম রানা ভাই ব্যবসার কথা কেন বলছেন। এই ছবি দেখে অনেক তরুন-তরুনী এগিয়ে আসবে। নাহ শিশুরা খাবার খাচ্ছে এই ছবি প্রচার করার অধিকার আমার নেই। এই ছবি দিয়ে আমি কারো দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই না। এই ছবি আমি নিজে দেখতে চাই।  প্রয়োজনে আপনি নিজেও জীবন্ত এই ছবি তৈরি করতে পারেন।

আমি বললাম ঠিক আছে আপনি যখন আগামীতে এই রকম আয়োজন করবেন আমি ঢাকা থেকে প্রচুর সেচ্ছাসেবক নিযে আসব।

তিনি সরাসরি প্রতিবাদ করলেন। নাহ আমি গ্রামে এই শিশুদের খাবারের আয়োজন করেছি। শহুরের একদল তরুণ তরুনী দয়া-মায়া মাখানো মুখ নিয়ে শিশুদের খাবার খাওয়াছে। আমি এই রকম একটা নষ্ট বিষয় কল্পনাও করতে চাই না। শিশুগুলোর সারা জীবন ভাববে তারা শহরের ধনী মানুষের দয়াতে মুরগীর রান খেয়েছে। আর শহরের তরুণগুলোর ধারনা হবে তারা গ্রামের গরীবদের খাওয়াতে পারে। দুইয়ের মধ্যে ব্যবধান তৈরি হবে। প্রয়োজনে  তোমরা ঢাকায় আয়োজন কর। কি দরকার ঢাকা থেকে হাজার টাকা খরচ করে এই গ্রামে আসার। বরং যাতায়াতের টাকা দিয়ে আরো বেশি শিশুদের রান খাওয়ানো যাবে।

যাই হোক ভাই আমার খিদা লেগেছে খেয়ে নি। নাহ এখানে খাওয়া যাবে না। কারণ আমি এবং আমার আত্মীয়রা এই খাবারের জন্য আমাকে টাকা দিয়েছে তা শুধুমাত্র এতিম শিশুদের জন্য। এই খাবারে অন্য কারো হক থাকতে পারে না। আমরা যাওয়ার পথে ময়মনসিংহ শহরে খাব।

ঝড়, গাড়ি নষ্ট নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে আমরা অনেক রাতে ঢাকায় ফিরলাম। আমার চোখের সামনে ভেসে বেড়াছে একদল শিশুর মুরগীর রান খাওয়ার ছবি। এক বৃদ্ধার জীবনে প্রথম নাতির মুখে মুরগীর আস্ত রান তুলে দেওয়ার সুখের কান্না। এই ছবিগুলো আমার কাছে সারাজীবনের জন্য জীবন্ত।

প্রিয় রানা ভাই
আপনি জেনে  আনন্দিত একদল তরুন আগামী ১৮ তারিখ ঢাকা শহরের  প্রায় ৩০০ শিশুর জন্য  খাবারের আয়োজন করেছে।  শিশুদের এই আয়োজনে তারা সকল প্রকার ব্যান্ডিং ও ক্যামেরার ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। আমি বিশ্বাস এই তরুনরা ক্যামেরা আর ব্যান্ডিং নিষিদ্ধ করে এই নগরে সেচ্ছাসেবার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে যাচ্ছে।

Monday, October 6, 2014

বুড়িগঙ্গার অন্য রূপ।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর ছিল নদী দিবস। এই দিনে নদীকে ভালোবাসে এমন দুনিয়াব্যাপী কোটি মানুষ নদীর পক্ষে লড়াই করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় মনে প্রাণে। নদীর প্রতি ভালোবাসার এই দিবসে কয়েকজন নদী প্রেমিকের সাথে গিয়েছিলাম বুড়িগঙ্গা নদীর তীর ঘেঁষা রাজধানীর একমাত্র জেলেপল্লীতে।

বুড়িগঙ্গায় অক্সিজেনের মাত্রা কত? বিষাক্ত গ্যাস কোনটা কত আছে? কোথায় কী দূষণ হচ্ছে? নদী নিয়ে দুর্নীতি হাজারো সংবাদ পড়ি এই নদীটাকে নিয়ে। কিন্তু বুড়িগঙ্গার আরো অনেক রূপ আছে। কাশফুল, বক, মাছরাঙ্গা, পাল তোলা নৌকা, জেলে, মাঝি, নদীকে ঘিরে কতোসব উৎসব যে এখনো টিকে আছে তা অজানাই রয়ে গেল!  আজ জানাবো নদীর অন্যরূপ। অন্য একদল মানুষের কথা যারা এখনো এই নদীনির্ভর। তাদের জীবন জীবিকা এই নদীকে ঘিরে। প্রতিনিয়ত সংগ্রামের পাশাপাশি  তারা স্বপ্ন দেখে আবারও এই নদীটায় বর্ষায় রুই, কাতলা, বোয়াল, পুঁটি ধরা পড়বে ঝাঁকে ঝাঁকে। শীতকালে বাড়া/ঝাপ (গাছের ডাল-পালা দিয়ে নদীতে মাছ ধরার ফাঁদ) থেকে আবারও শিং, মাগুর, কৈ, বাইম ধরা পড়বে। এখনো বর্ষায় এই নদী যাদের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম উৎস। বুড়িগঙ্গার জলেই যাদের ঘর-সংসারের অধিকাংশ কাজ চলে। সেই মানুষদের গল্প দেখতে আর শুনতে বুড়িগঙ্গা রিভার কিপার শরীফ জামিল ভাই নদী দিবসে আয়োজন করেন জেলেদের সাথে আড্ডা। বুড়িগঙ্গার পাড়ে জেলেদের জেলে পেশায় টিকে থাকার গল্প শুনে আপনিও অবাক হবেন। এত দূষিত নদীতে কি মাছ থাকে? এই শহরে এখনো কী করে শত বছরের জেলে পাড়ার লোকগুলো তাদের পেশায় টিকে আছে? গ্রামের তরুণরা তাদের প্রবীণদের কাছ থেকে এই নদীর অনেক গল্প শুনেছে। কে কত বড় মাছ ধরেছে এই নদী থেকে? জেলেপাড়ার মানিক রাজবংশী গর্বের সাথে বলেন, এক যুগ আগেও মাছে ভরে যেত নৌকা। তিনি জানালেন, বছর কয়েক আগেও এই পল্লীতে অসংখ্য জেলে-জাল-নৌকা ছিল।  মানুষগুলোর মাছ ধরা-কেনা-বেচাই ছিল প্রধান পেশা। বেপারিরা অগ্রিম টাকা দিয়ে যেত। ফরিদপুর, পাবনা থেকে লোক আসত এই পল্লীতে রোজ কামলা খাটতে। গেল বছর শেষবারের মতো এসেছিল লোক। এই বছর আসে নদীতে মাছ নেই। তাছাড়া সারা রাত খেটে পাওয়া যায় জন প্রতি পঞ্চাশ থেকে দুইশ টাকা।

এখন ডিপজল, সোয়ারি ঘাট, কাওরান বাজার, নিউমার্কেট থেকে পাইকারি বাজার থেকে মাছ কিনে রায়েরবাজারে বিক্রি করে। অনেকে ভিটে-বাড়ি বিক্রি করে কলকাতায় চলে গেছে। যারা গেছে তাদের তালিকায় নিজের পরিবারের লোকও আছে। কিন্তু তিনি যেতে পারেননি। বলতে থাকেন মানিক রাজবংশী।

বাপ-দাদা চৌদ্দ পুরুষের ভিটা। শুধু যে ভিটার টানে থাকি তা নয়। নদীর প্রতি একটা টান পরে গেছে কয়েকবার যেতেও চেয়েছি। মন সায় দেয় না। শান্তি পাই না। কেমন জানি মনে হয় নদীতে আবারও মাছ পড়বে। আমি নৌকা, জাল সব বিক্রি করে দিয়েছি বেপারির দেনা শোধ দিতে। তবে মাছ পড়লেই আবার জাল নিব। মাছ কিনে বিক্রি করে সুখ নাই। মাছ ধরে বিক্রি করাতে আলাদা আনন্দ আছে। এক নিঃশ্বাসে বলে যান আশাবাদী রাজবংশী।

সন্ধ্যায় নদীতে দেখা হলো সুবল রাজবংশীর সাথে। তিনি এখনো প্রতিরাতে মাছ ধরতে যান নদীতে। তার মতো আরো সাতটি নৌকা টিকে আছে এই জেলেপাড়ায়। সন্ধ্যার পর তারা আটজনের দল যান নদীতে। সারা রাত মাছ ধরে সকালে বেপারিরা মাছ বিক্রি করে রায়ের বাজারে। মাছের পরিমাণ এখন খুবই কম তবুও বাপ দাদার পেশাটা আঁকড়ে ধরে আছেন।

সারা বিকেল জেলেদের সাথে আড্ডার পাশাপাশি উপভোগ করলাম বুড়িগঙ্গার অন্য রূপ। বর্ষায় কিন্তু জেলেপাড়াটা পুরো ভিন্ন রূপ ধারণ করে।  নদীর তীর ঘেঁষে কাশ ফুল। সারি সারি মাছ ধরার নৌকা, তীরে ছড়ানো মাছ ধরার জাল, স্বচ্ছ পানি- কী নেই এই নদীতে? এই সবই এখনো অল্প পরিসরে হলেও দেখা যাবে বুড়িগঙ্গার তীরের জেলেপাড়াতে। বর্ষার এই স্বচ্ছ জলে শুধু পাওয়া যাবে না মাছ। কিন্তু মাছ ধরাই যাদের চৌদ্দপুরুষের পেশা, নেশা। তাদের জন্য নদীর অর্থ অনেক। নদী তাদের কাছে সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, জীবন-জীবিকা, উৎসব আরো কত কী! তাই তো সুবলের কণ্ঠে কলকলিয়ে বেরিয়ে আসে- যতই কাল হোক নদীর জল এই নদীকে ঘৃণা করি কী করে? এখনো তো তার কৃপায় বেঁচে আছি।

সন্ধ্যার পর পর আমরা চলে আসছি মেঠো পথ ধরে, উদ্দেশ্য বছিলার প্রধান সড়ক থেকে গাড়িতে উঠবো। জেলেপাড়ার নারী-পুরুষ, বাচ্চারা গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে গেল। গাড়িতে উঠার আগ মুহূর্তে এক বয়স্ক লোক শরীফ ভাইয়ের হাত চেপে ধরলো। ‘বাপ নদীটারে আগের মতো করে দাও। মরার আগে আমি নদীটারে আগের মতো দেখতে চাই’- নদীর জন্য মানুষটা কাঁদছে। এই জেলের চোখের জল শুধু কি নদীর জন্য? নাকি নদীকেন্দ্রিক তার ভালোবাসা, যে ভালবাসার জন্য সবাই চলে যাওয়ার পরও বৃদ্ধ ভিটে বাড়ি বিক্রি করে যাননি।

বুড়িগঙ্গাকে ঘিরে জেলে পল্লীর এই পরিবারগুলো সুখ-দুঃখের কথা কখনো কোনো নীতি নির্ধারণী সভা সমাবেশে আলোচিত হবে না। কিন্তু আমরা যারা নদী নিয়ে কথা বলি, পরিকল্পনা করি, নদীকে ভালোবাসি তাদের কাছে অনুরোধ, একবার এই বর্ষার সময় করে ঘুরে আসুন বছিলার জেলে পল্লী থেকে। নদীকে অবলম্বন করে বেঁচে থাকা এই মানুষগুলোর কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পাবেন। ভালোবাসতে পারবেন নদীকে, লড়তে পারবেন নদীর জন্য আরো শক্ত করে।

Friday, July 11, 2014

ইট,কাঠ আর রড-সিমেন্টের উন্নয়ন বিদ্যার মাঝে জামাই মাঝিরা অবহেলিত।

সোয়া এক কোটি লোকসংখ্যা ঢাকা শহরের কত ভাগ লোকের কমসংস্থান হয় ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর দ্বারা| কিংবা কি পরিমাণ লোক এখনো প্রত্যক্ষ পরোক্ষ ভাবে তাদের কমসংস্থানের জন্য এই নদীর উপর নিভরশীল |  তার কোন সংখ্যা আমার জানা নেই। তবে একজন জামাই মাঝির (স্থানীয় মানুষজন তাকে এই নামে ডাকে) গল্প শুনাব । জামাই মাঝির আসল নাম আলেখ, বাড়ি বরিশাল, ৪৫ বছর আগে একবার বনের জামাইয়ের সাথে বছিলায় আসে। তারপর আর ফিরে যাওয়া হয়নি বরিশাল।  এই বছিলাতে ঘর বাধে। এলাকায় তাই সবাই তাকে জামাই বলে ডাকে। ছোট বড় সবার মুখে তার নাম জামাই। কেউ বলে জামাই মাঝি।

আমাদের কোন পরিসংখ্যান, তথ্য কিংবা নীতি নিধারনীর কাগজের হিসেবে যে জামাই মাঝির জীবন জীবিকার তথ্য নেই তা সত্য। বয়স প্রায় ষাট্ট, পেশায় মাঝি। ৩৫ বছর এ পেশায়। এই জামাই মাঝির বুড়িগঙ্গা ছাড়া আর কোন অবলম্বন নেই।  কৈশরে খেলার ছলে নদীতে শখে বৈঠা হাত নেওয়া। যৌবনে এই বৈঠাটার সাথে তার নাড়ী সম্পক হয়ে যায়। তারপর নৌকা, বৈঠা, নদী নেশা-পেশা।  আর বাধ্যকে এই বৈঠা ছাড়া তো তার কোন গতি নেই। বয়সের ভারে জীবন নিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়া জামাই মাঝির যখন জীবন-জীবিকা নিয়ে কোন অবলম্বন নেই।  তখনো বুড়িগঙ্গাই তার একমাত্র অবলম্বন।

ইট,কাঠ আর রড-সিমেন্টের উন্নয়ন বিদ্যার মাঝে জামাই মাঝিরা অবহেলিত। ৭০ উর্ধ্ব বুড়িগঙ্গা পাড়ের মাঝিদের জন্য উন্নয়ন বিদ্যায় কিংবা পরিকল্পনায় যেন কোন স্থান নেই। রাষ্ট্র তার পরিকল্পনায় শুধু উন্নয়নের দোহাই দিতে গিয়ে বিপন্ন করে দিচ্ছে হাজারো জামাই মাঝিদের জীবন জীবিকা।  প্রকৃতি আমার রাষ্ট্রের মত অবিবেচক নয়। আর তাই তো বুড়িগঙ্গা বার্ধ্যকে জামাই মাঝিদের পেশার নিশ্চয়তা দিয়েছে। এই একপাড় থেকে ওপার মানুষ পারাপার করাই জামাই মাঝিদের পেশা।

বছিলার জামাই মাঝির গল্প

মাথার উপরে বিশাল বিজ্র হয়ে গেল তারপরও মানুষ নৌকায় পার হয় নদী জামাই? নাহ তেমন একটা পরাপার হয় না। মাঝে মাঝে দিন কয়েকের মধ্যেও একজন পাই না।  কিন্তু কি করমু আমি তো আর কোন কাজ জানি না। আর এই বয়সে কে দিব কাজ? টাকা পয়সাও নাই যে অন্যকোন ব্যবসা করমু। তাই নদীতে আইসা বইসা থাকি যদি কোন ক্ষ্যাপ পাই। নাওয়ে (নৌকায়) শুইয়া থাকলেও শান্তি, খিদা লাগেনা, ফ্যান লাগেনা, শুধুই ঘুমে আইয়ে (আসে)।

বিজ্র হওয়ার সময় আমরা সরকারের কাছে দাবী করেছি। আমাদের একটা কাজের ব্যবস্থা করতে। সরকার আমাদের আপন ভাবে না। বয়স ৬০ কিন্তু কোন বয়স্ক ভাতা পাই না।  সরকার ফালাই দিলেও নদী ফালাইতে পারে নাই।  বুইড়া আমারে এখনও মাঝি বানাইয়া রাখছে তার বুকে। হয়ত নদীর মধ্যেই মরমু।

আমি আমাদের আসার কারণ জানালাম জামাইকে, নদীতে নাকি কুমির পড়েছে (এসেছে)? হুম শুনছি কিন্তু দেখি নাই। কয়েকদিন যাবত দেখা গেছে মানুষে কয়। কিন্তু আমি দেখি নাই।

শুশুকের অবস্থা কি? গেল কয়েক বছরের তুলনায়  শিশু মাছ (শুশুক) কমে গেছে, কমে গেছে গুইসাপ, মাছের পরিমাণ এখন শূণ্যের কোঠায়। তবে বৃষ্টি নামলে মাছ ভাসব। আষাঢ়ের শেষ হইলে জাললারা আসা শুরু করবে। জামাই এখনো বৈশাখ-জৈষ্ঠ,আষাঢ়-শ্রাবণ মাসের হিসাব মনে রাখেন? হুম রাখতে হয়। আমি তো নদীর মধ্যে থাকি আমাগো আষাঢ়-শ্রাবণের হিসাব রাখা আমাগো জন্য সহজ। নদীর পানি দেইখ্যা আমরা বাংলা মাস কইতে পারি।

নদীটা সরকার না বেচলেও পারত। জামাই নদী বেচল কে? সরকার নদী বেইচা দিচ্ছে। এই নদীতে এখন নামলেই টাকা দিতে হয়। কারে টাকা দিতে হয় জামাই সরকারের লোক আছে। তারা নৌকা নিয়া ঘুরে। আমরা কয়েকটা বুইড়া এইখানে এখনো নৌকা বাই। আমাগো আর কোন কাজ নাই। তাই আমাগোরে দয়া কইরা তারা টাকা নেয় না। কিন্তু তাছাড়া আর কারো মুক্তি নাই। এই নদীতে পদে পদে টাকা দিতে হয়।

জামাই কত মাঝি আছে এই গ্রামে ?
২০০মাঝি ছিল, এই বিজ্রটা আমাগো শেষ কইরা দিল। এখন ১০-১২জন বুইড়া বইসা থাকি এই পাড় আর ঐ পাড়ে। আমাদের নদীটাই সম্বল।

আমাদের বুড়িগঙ্গা নিয়ে হাজার প্রকল্প। কোটি টাকার ছড়াছড়ি কিন্তু কোন প্রকল্পে জামাই, আক্কাস আলী, মোসেদ মাঝিদের কথা লেখা থাকে না। তাদের বার্ধ্যকের এই নদীটা যে এখনও তাদের একমাত্র জীবন জীবিকার  অবলম্বন । তাও আমরা স্বীকার করতে চাই না। আমরা স্বীকার করতে চাই না এই মাঝিগুলো আমাদের মানুষ। জীবনের আর কিছুদিন পর আমাদেরও তাদের মত বয়স হবে। রাষ্ট্রে পরিকল্পনায় যদি আমরা এই বয়স্ক মানুষগুলোকে স্থান দিতে না পারি। তবে সংকটপন্ন হবে আপনার আমার ভবিষ্যৎও। বুড়িগঙ্গার মত বয়সের ভারে নুইয়ে পড়া মানুষগুলোকে সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় নিরাপদ স্থান করে দিতে হবে |   

জামাই মাঝির গল্প শেষ। আমরা ঘোলা বুড়িগঙ্গার পানিতে শিকার খুঁজছি ক্যামেরা হাতে। আমাদের সাথে এক নদী পাগলা। অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই  আমাদের ‍তুলে দেওয়া হল আমাদের জন্য নিধারিত ভাসমান অবস্থান কেন্দ্রে। এবার আমাদের যাত্রা শুরু... ক্যামেরা রেডি ওয়ান,টু,থ্রি একশান। এই ক্যামেরা একশনের অন্য গল্প। এক নদী পালগ মানুষের গল্প।

প্রিয় সবুজ সৈনিকরা আগামী পর্বে সেই বুড়িগঙ্গা নদী পাগলার গল্প শুনাব আপনাদের।

Tuesday, June 17, 2014

ঢাকার রাস্তায় ফল,বনজ ও ঔষধি গাছ ।


 ঢাকার রাস্তায় ফল,বনজ ও ঔষধি গাছ


ঢাকা পৃথিবীর বসবাসের সবচেয়ে অযোগ্য শহর। এই তথ্য এখন সকলেরই জানা। কিন্তু এই শহরটা বাসযোগ্য রাখার জন্য দিন রাত কিছু মানুষ কাজ করছে। কোথাও তাদের স্বীকৃতি নেই। স্বীকৃতি তাদের কাম্য নয়। কেউবা মুখ লুকান ক্যামেরা থেকে।

দাবী একটাই, আড়ালে থেকে কাজ করতে চাই। দিন কয়েক ধরে ঢাকার রাস্তায় কি কি ফলের গাছ আর পাখির বাসা আছে তার ছবি তুলেছি। অবাক হওয়ার মত তথ্য। কি নেই ঢাকায় এখনো আম,জাম,পেয়ারা লেবু, আমলকি, কাঠাল, কলা, জামরুল, বেতফল, সুজিফল, কামরাঙ্গা, পেপে, তাল, নারিকেল,সুপারি, তেতুল, জলপাই আরো কত গাছ। আরো বেশি অবাক গাছগুলোতে ফল ধরে, অনেক ফল গাছেই পাকে। কিছু গাছে পাখির বাসা ও আছে। এই রকম গাছ, ফল,ফুল দিয়ে এই এ্যালবাম।

ফল, ফুল, গাছ থাকবে তো নিরাপদ? কিংবা নাইবা থাকুক নিরাপদ। যাদের জন্য গাছ তারা তো উপভোগ করতে পারে। একটা পাখি যখন দেখি এই বটের ফল মুখে নিয়ে উড়াল দিল তখন প্রাণ জুড়ায়। মনে হয় গাছটা লাগিয়ে ছিলাম শুধু এই দৃশ্যটা দেখার জন্যই। তাতেই সার্থকতা। নিজের মনের তৃপ্তির আর প্রকৃতির প্রতি ভালবাসায় তারা গাছ লাগান ঢাকার রাস্তায়। যখন ঢাকায়া রাস্তার ধারে ফলের গাছ লাগালোর সিন্ধান্ত নিয়েছি তখন অনেকে বলেছে পাগল। কিন্তু আমি বলি পাগলে জয় আসন্ন। গাছগুলোতে ফল ধরেছে,ফুল ফুটছে।

আজের সকাল শুরু রাস্তার ধারে ফলের গাছ লাগনো এক পাগলের সাথে চায়ের টেবিলে। শুভ সকাল। পাগলে জয় আসন্ন। জয় হোক প্রকৃতি প্রেমিক এই পাগলদের।

গাছের নাম নিম। যার গুণের শেষ নেই। কথায় আছে একটি বাড়ীতে যদি নিম গাছ থাকে তবে ঐ বাড়ী থেকে রোগ বালাই দূরে থাকে। এমনকি পোকা-মাকড় ও সে বাড়ীতে কম দেখা যায়। নিমের গুণ অপরিসীম। নিমের বহুবিধ এবং ব্যাপক ব্যবহারের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিমকে গ্রাম্য ডাক্তার হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। রাজধানীর আগারগাঁও,মিরপুর রোডে সারি সারি নিমের দেখা পাবেন।

ঢাকার রাস্তায় বিশাল দেহী এই বট গাছটি আমাদের বিশুদ্ধ অক্সিজেন সরবারহ করছে। এই গাছি যিনি রোপন করেছে তিনি কখনো কি আপনার আমার বাসায় মাস শেষে অক্সিজেনের জন্য বিল পাঠিয়েছেন?

আমরা কি একটি গাছ রোপন করেছি আমার অক্সিজেনের জন্য? উত্তর যাই হোক না কেন। আমরা সবাই অক্সিজেনে গ্রহণ করি। এবং চাই বিশুদ্ধ অক্সিজেন। তবে কেন নয়। আসুন একটি গাছ লাগাই। অক্সিজেনের কারখানা বানাই।

ইংরেজিতে সাজনার নাম 'ড্রামস্টিক' যার অর্থ ঢোলের লাঠি। সাজনার ইংরেজি নামটি অদ্ভুত হলেও এটি একটি অতি প্রয়োজনীয় জীবনরক্ষাকারী উদ্ভিদ। বাংলাদেশে এ নিয়ে তেমন গবেষণা না হলেও বিশ্বের বহু দেশে নানা রকমের গবেষণা হয়েছে; বিশেষ করে এ গাছ হরমোন বর্ধক ঔষধি গুণসম্পন্ন, কাগজ তৈরি ইত্যাদি বিষয় ছাড়াও প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের দেশে এটি সবজির পাশাপাশি ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। দেশের সর্বত্রই সাজনা পাওয়া যায়।

ঢাকার মোহাম্মপুর, ধানমন্ডির অলিগলিতে কয়েকশ সাজনা গাছের দেখা মিলবে।

এর নাম ডুমুর। ঢাকার রাস্তায় দেখা যায় কম। তবে একটু ঝোপঝাড় মানেই ডুমুরের আখড়া। সংসদ ভবন চত্ত্বর, বানিজ্য মেলা আগারগাঁও, মান্ডা, বাসাবোর দিকে ডুমুরের দেখা মেলে মেলা।
ডুমুর কয়েক প্রজাতির হয়। বাংলাদেশে সচরাচর যে ডুমুর পাওয়া যায় (Ficus hispida) তার ফল ছোট এবং খাওয়ার অনুপযুক্ত। এর আরেক নাম 'কাকডুমুর'। এই গাছ অযত্নে-অবহেলায় এখানে সেখানে ব্যাপক সংখ্যায় গজিয়ে ওঠে। গাছ তুলনামূলকভাবে ছোট। এটি এশিয়ার অনেক অঞ্চলে এবং অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া যায়।[৩][৪] পাখিরাই প্রধানতঃ এই ডুমুর খেয়ে থাকে এবং পাখির বিষ্ঠার মাধ্যমে বীজের বিস্তার হয়ে থাকে। অনেক এলাকায় এই ডুমুর দিয়ে তরকারি রান্না করে খাওয়া হয়। এই ডুমুরের পাতা শিরিশ কাগজের মত খসখসে। এর ফল কান্ডের গায়ে থোকায় থোকায় জন্মে।
 
কাঠ বাদাম (বৈজ্ঞানিক নাম Terminalia catappa) একটি বৃহদাকৃতির গাছের ফল। ফলের নাম অনুযায়ি এই গাছকে কাঠ বাদাম গাছ ডাকা হয়। এই গাছ ছাতার মত ছায়া দেয়। গাছগুলোতে এত ঘন পাতা যে বৃষ্টি শুরু হবার অনেক পরে গাছের নিচে পানি পড়ে।

ঢাকায় রাস্তার ধারে প্রায়ই দেখা পাবেন। বিশেষ করে নিউ মার্কেট যাওয়ার পথে ঢাকা কলেজের সামনে কয়েকটি কাঠ বাদাম গাছ দেখা যায়।

আর মোটা মানুষদের জন্য এই বাদাম বিশেষ উপকারী।

কাঠবাদামে রয়েছে ফাইটোস্টেরল এবং মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড যা দেহের ক্ষতিকর কোলেস্টরল কমাতে সাহায্য করে। কাঁচা কাঠবাদাম প্রোটিন এবং ফাইবারের উৎস যা অনেক সময় ধরে ক্ষুধার উদ্রেক করে না। এবং ক্ষুধা কমায়। এতে করে ওজন কমতে সাহায্য করে।


ঢাকার রাস্তার ধারে খেজুর গাছের দেখা পাওয়া যায়। এই গাছটি আমি শিশু পার্ক এলাকায় দেখেছি।

খেজুর (সংস্কৃত: खर्जूरम्); (ইংরেজি: Date Palm) এক ধরনের তালজাতীয় শাখাবিহীন বৃক্ষ। এর বৈজ্ঞানিক নাম ফিনিক্স ড্যাকটিলিফেরা (Phoenix dactylifera)। মানব সভ্যতার ইতিহাসে সুমিষ্ট ফল হিসেবে এর গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ায় অনেক বছর পূর্ব থেকেই এর চাষাবাদ হয়ে আসছে। এ গাছটি প্রধানতঃ মরু এলাকায় ভাল জন্মে। খেজুর গাছের ফলকে খেজুররূপে আখ্যায়িত করা হয়। মাঝারী আকারের গাছ হিসেবে খেজুর গাছের উচ্চতা গড়পড়তা ১৫ মিটার থেকে ২৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর লম্বা পাতা রয়েছে যা পাখির পালকের আকৃতিবিশিষ্ট। দৈর্ঘ্যে পাতাগুলো ৩ থেকে ৫ মিটার পর্যন্ত হয়। পাতায় দৃশ্যমান পত্রদণ্ড রয়েছে। এক বা একাধিক বৃক্ষ কাণ্ড রয়েছে যা একটিমাত্র শাখা থেকে এসেছে।

এর নাম তেতুল গাছ। আমি দেখেছি আদাবর থেকে শ্যামলী রিং রোডে যাওয়ার পথে।

এতে রয়েছে প্রচুর ভেষজ ও পুষ্টিগুন।
-তেতুল দেহে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে।
-রক্তে কোলষ্টেরল কমায়।
-তেঁতুল চর্বি কমানোয় বেশ বড় ভূমিকা রাখে।
-এতে কোলস্টেরল ও ট্রাইগ্রাইসেরাইডের মাত্রা এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
-শরীরের মেদ কমাতেও কাজ করে তেতুল।
-এতে টারটারিক এ্যাসিড থাকায় খাবার হজমে সহায়তা করে।
-শরবত করেও খাওয়া যেতে পারে তেতুল।
-পেটের বায়ূ, হাত-পা জ্বালায় এ শরবত কার্যকর পথ্য।
-তিন-চার দানা পুরনো তেতুলের এক কাপ রসের সঙ্গে চিনি বা লবন মিশিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন ভেষজ চিকিৎসকরা।

গাছের সঙ্গে গাছের বিয়ে ! গল্পের মতো শোনালেও তা সত্য বেশ ধুমধামের সাথে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বট-পাকুড়ের বিয়ে হতো আগে। ঢাকায় এখনো অনেক জায়গায় বট আর পাকুর এক সাথে দেখা যায়। বিয়ে দেওয়ার মত দায়িত্বশীল কাউকে না পাওয়ায় গাছগুলোর বিয়ে হচ্ছে না।

অনেকেই ভুল করে পাকুর গাছকে বট গাছ ভাবেন।
যাই হোক ইহা পাকুর গাছ।




এখানে প্রকাশিত সকল ছবি কারিগর : সৈয়দ সাইফুল আলম, 
তথ্য বেশিভার  উইকিপিডিয়া এবং স্থানীয় মানুষদের সাথে কথা বলে সংগ্রহ করা হয়েছে।
এই ব্লগের সকল তথ্য, ছবি, ভিডিও কপিরাইট ঝামেলা মুক্ত। ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও বৃহত্তর স্বার্থে যে কেউ কোন প্রকার অনুমতি ছাড়াই ব্যবহার করতে পারবেন।

Tuesday, June 10, 2014

জীবনের স্বাদ খোঁজা দম্পতির সাথে দুইদিন “জীবন”

 জীবন বলতে আপনি আর আমি কি বুঝি তার অর্থে এই দুই মানুষের জীবন ভিন্ন কিছুই হবে। কিন্তু আমাদের কাছে জীবনের অর্থ যাই হোক। ওরা জীবন উপভোগ করছে। তাদের সেই অধিকারও আছে। আমার আপনার অতিকৌতুহল যেন তাদের জীবনের ব্যাঘাত না ঘটায়।

২০১১ সালের এক সকালে ঢাকা থেকে উপকূল ট্রেনে রওনা দিলাম “জীবন” দেখতে যাব বলে। ট্রেন থেকে নেমে আমাদের জন্য নিধারিত সিএনজি চালিত টেম্পুতে চড় বসলাম। মিনিট ত্রিশ চলার পর টেম্পুটি একটি নদীর তীরে এসে দাড়াল। এবার যাতায়াতের মাধ্যম পরিবতন করতে হবে। আমরা ছোট একটি নৌকায় উঠে বসলাম। মাঝিসহ আমরা চারজন এত ছোট তিতাসকে দেখেছি আজ তার পুরোপুরি বিপরতী। বিশাল বিশাল ঢেউ। ছোট নৌকাটা যেন বার বারই উল্টে যেতে চায়। মাঝির দক্ষতার সাথে আমাদের একটা পরিত্যাক্ত ইটের ভাটায় নামিয়ে দিয়ে গেল। এটাই আমাদের প্রাথমিক গন্তব্য।

চারিদিকে নদী আর মাঝখানে ইটের ভাটা। কেমন যেন ভূতুরে পরিবেশ। আগামী দুইদিন এখানে থাকতে হবে। একটা অস্থায়ী ঘরে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করা হল। নদীর জলে হাত মুখ ধুয়েই আলী ভাত ( স্থানীয় ভাবে সারা বছরে উৎপাদিত সকল শ্রেনীর শষ্যের বীজ দিয়ে রান্না ভাত)খেয়ে। কিছুক্ষণ হাটাহাটি করে ঘুমাতে গেলাম। দুপুরে ঘুম থেকে উঠার পর জানানো হল খাবারের জন্য আমাদের নদীর মাঝখানে যে সবুজ একটা চল দেখা যায় সেখানে যেতে হবে। ঐটাই তাদের আসল বসত ভিটা। আবারও সঙ্গী সেই ছোট নৌকা। ডুবুডুবু করে আমরা গন্তব্যে মিনিট দশেকের মধ্যে আমরা গ্রামে পৌছলাম। ছোট গ্রাম দশটি পরিবাররও হবে এই গ্রামের। বষায় নৌকা আর শুষ্ক মৌসুমে হাটা। এই দুই ছাড়া ঐ গ্রামের কোন যাতায়াত মাধ্যম নেই। আমাদের জন্য খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। পুঁইশাক, লেবু পাতা দিয়ে টাকি মাছ, চান্দা মাছ ভাজি, ছোট ছোট আলু ভাতি চিংড়ি শুটকি দিয়ে, মিষ্টি আলুর টক আর লাল বোরো চালের ভাত।

ভাত খেয়ে গ্রাম দেখার পালা। কয়েক লক্ষ বগ ফুটের মধ্যে সবার জীবন বাধা। চাইলেও যেন বেশি কিছু করা নেই। কিছু সময় হাটাহাটি করার পর আমরা অনুমতি চাইলাম রাতটা গ্রামে কাটানোর জন্য। আমাদের থাকার অনুমতি মিলল। সন্ধ্যা সতটার আগে ডাক পড়ল খাবারের জন্য। এত তাড়াতাড়ি খেতে পারব কি করে? লোকজন আটার মাঝে তারা ঘুমিয়ে পড়বে। কাল সকাল থেকে শুরু হবে কাজ। দশটা পযন্ত জেগে থেকে ঘুমাতে গেলাম। কোন ভাবেই ঘুম আসে না। গর্জনে নদী যেন সমুদ্রকে মাঝে মাঝে হার মানায়। এখানে নদীর ঢেউয়ে শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দ নেই।

ভোরের আলো আসার আগে আমাদের ডাক পড়ল। ক্যামেরা নিয়ে দুইজনই তাদের কাজ শুরু করল। আমার কোন কাজ নেই। আমি শুধু দেখছি একটা মেয়ে সারা দিনে কত কাজ করে। তারা পালা করে ছবি তুলছে প্রতিটি কাজের ছবি। সন্ধ্যার সাথে সাথে মনে হল মেয়েটা শতাধিক কাজ করে। রাতে খাবারের পর আমাদের সাথে এসে বসলেন তিনি। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মেধার সর্বোচ্চ পরিচয় দিয়ে এই গ্রামে এসে ভিত্তি গেড়েছেন তিনি। অথ একটাই “জীবন” তিনি জীবন উপভোগ করতে চান। আর তা প্রকৃতির সাথে মিলে মিশে। কিভাবে চলে এই জীবন সৌর বিদ্যুতের সাহায্যে আলোর কৃত্রিম ঝলক আসে সত্যি। কিন্তু তাছাড়া সকল কাজই সেরে ফেলি সূর্যের আলোয়। সপ্তাহে একদিন শহরে যাই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনতে। পড়াশোনার বই আনতে মাঝে মাঝে ঢাকায় যাই দুজনে, আর বেশির ভাগ বই আসে দেশের বাইরে থেকে ডাকে। অনলাইনে পড়াশোনার তেমন অভ্যাস না থাকায় তিনি সকল বই-ই প্রিন্ট দিয়ে পড়েন। বই গুলো নিজেই বাধাই করেন। পাশের গ্রামের সরকারী স্কুলে সপ্তাহে দুইদিন শিশুদের ইংরেজি আর গণিত পড়ান।

পরেদিন সকালে আমরা তার স্বামীর কাজ দেখেতে ব্যস্ত হলাম। সকাল থেকে তাকে অনুসরণ। তার সাথে বাজারে গেলাম। বেচারার অনুরুধ একটা কোনভাবেই যেন মানুষ বুঝতে না পারে বিশেষ ভাবে তার ছবি তোলা হচ্ছে। দুইজনই তার মতামতকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ছবি তোলে। ২০১১ সালের এই ছবি তোলার কাযক্রম ২০১৫ সাল পযন্ত চলবে। এই সময়ের মধ্যে তাহাদের কোন প্রকার ছবি, কিংবা গ্রামের ছবি প্রকাশে আমার নৈতিক বাধা হয়েছে। তবে অনুমতিক্রমে ততটুকু তথ্য প্রদানে বাধা নেই যা তাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য অন্তরায় নয়।

২০১১ সাল এবং ২০১২ পযন্ত আমার মোট ৫বার তাদের সাথে দেখা হয়েছে। এবং


২০১২ শাহবাগে একদিন জিজ্ঞাসা করলাম কেন গণমাধ্যমে এড়িয়ে চলেন?
তিনি জানালেন, একবার একজন তার একজন সংবাদ প্রকাশ “ প্রেমের তরী ভিড়ল .....গ্রামে” শীষক সংবাদটিতে তাদের অনেক অসত্য ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করা হয়েছে। এবং কিছু সত্য তথ্য ও দেওয়া হয়েছে যা একান্ত ব্যক্তিগত। ঐ সংবাদের পর পর মানুষজন নিয়মিত তাদের গ্রামে যায় এবং তার সাথে ছবি তুলে। ক্লাস চলা সময় ক্লাসের ভিতর চলে যায়। তার স্বামী বাজারে গেলে বাজারে তার ছবি তুলে। ক্রমেই তারা চিড়িয়াখানার জন্তুতে পরিণত হয়ে যাচ্ছিল।

কেন শহরের জীবন বাদ দিয়ে এই জীবনের পথে?
জীবন মানে জীবন। জীবন মানে ভালবাসা। জীবন মানে প্রকৃতির কাছাকাছি বসবাস। আমার কাছে জীবন মানে প্রতি মূহুর্তে অন্য জীবনের সাথে ল্যাপটে চ্যাপটা হয়ে যাওয়া। এই সবই আমি পাই এই গ্রামে। তাই শহুরে জীবন কিংবা গ্রামীণ জীবন নয়। আমি জীবনের জন্য বাঁচার স্বাদ পেতে এই গ্রামের আছি। তাছাড়া আমার স্বামীর পূব পুরুষরা এই গ্রামে কাটিয়েছে তাদের জীবন।

কেমন উপভোগ করছেন জীবন?
খুব খারাপ নেই, আপনারা খাবার আর বিলাসীকতার জন্য দৌড় জাপ করছেন। আর আমরা এখানে তাই উপভোগ করছি। ‍শুধু পাথ্যক আপনার সব কিনে আনেন। আমরা এখানে উৎপাদন করি । আমাদের প্রতিটি খাবারে আমরা আমাদের শ্রমের গন্ধ পাই।


গ্রামের মানুষদের যেতে দিতে আপনাদের এত আপত্তি কেন?
আমার সকল কিছু আপনাকে জানাতে হবে তা তো কোথাও নিয়ম নেই। আপনারা গ্রামে আসুন আমাদের আপত্তি নেই। তবে কতজন আসতে পারবেন, কতজন আসবেন, কখন আসবেন, তা আমরা নির্ধারণ করব। আমাদের এই গ্রাম কোন ট্যুরিস্টদের জায়াগা নয়। তাছাড়া আপনি কি দিবেন আপনার গুলশান, ধানমন্ডি কিংবা বারিধারা বাড়িতে আমাদের অবাধ বিচরণ করতে। তাছাড়া কাউকে থাকার কোন প্রকার অনুমতি দেওয়া হবে না।

জার্মান ভাষায় একটি ব্লগ এবং বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় ব্লগে এই পরিবারটি সম্পর্কে লেখায় তাদের গ্রামে দশনাথীদের সংখ্যা বেড়ে যায়। যা তাদের স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় প্রভাব ফেলে। ফলাফল তারা সকল প্রকার গণমাধ্যম এবং অনাকাঙ্খিত ব্যক্তির উপস্থিতি এড়িয়ে চলেন। গ্রামটির নাম ব্যক্তির ব্যক্তিগত জীবনে সভ্য মানুষদের অসভ্য আচরনের প্রভাবে স্বাভাবিক জীবন যাপনে সমস্যা হয় বিধায় গ্রামের নাম দেওয়া হয়নি।

Sunday, May 25, 2014

কৃষকের ছেলে সৌরভ,আমাদের গুগুল জ্ঞানী হাম্বা

হাম্বা। এটি হাম্বার ছবি।


মাস কয়েক আগে ঢাকার কাছের এক গ্রামে গিয়েছিলাম। এই গ্রামে আমার সাথে প্রথম হাম্বার পরিচয় হল। হাম্বা হল গরুর বাছুর মারা গেলে তার চামড়া সংরক্ষণ করে। খড়,বাঁশ, দড়ি দিয়ে বাছুরের আকৃতি তৈরি করা হয়।

কেন মৃত বাছুর কে এই ভাবে সংরক্ষণ করা হয়। এই প্রশ্নের উত্তরে উপস্থিত কয়েকজনের উত্তর ছিল হয়তবা গ্রামবাসী বর্বর, অজ্ঞ, কুসংস্কার ইত্যাদি। এই সকল প্রশ্নের সমাধান করতে এগিয়ে আসলেন গ্রামের কিশোর সৌরভ আর মুয়াজ্জিন সাহেব।

বাছুর মারা যাওয়ার পর বাছুর সংরক্ষণ করা হয় ববর্তা, অজ্ঞতা কিংবা কুসংস্কারের জন্য নয়। গাভীর দুধ নেওয়ার জন্য এই হাম্বাটির গায়ে লবন মাখিয়ে স্থানীয়রা গাভীর সামনে রাখে। গাভী হাম্বার গা চাটতে থাকে। ফলে তাদের দুধ সংগ্রহে সুবিধা হয় এবং অধিক পরিমান দুধ পাওয়া যায়।

গ্রামের কিশোর সৌরভ আর মুয়াজ্জিন সাহেবের এই যুক্তি আমাদের অনেকের কাছে বিশ্বাস যোগ্য নয়। অজপাড়া গায়ের কৃষকের ছেলে আর মুয়াজ্জিনের যুক্তি হাম্বা গাভীর দুধ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে । তা জ্ঞানীদের মেনে নেওয়াটা কঠিন। সারা রাস্তায় চলছে যুক্তি তর্ক। কি কারণে গ্রামে বিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষার প্রসার দরকার। কুসংস্কার মুক্ত ও উন্নত কৃষির জন্য গ্রামের মানুষদের আরো উন্নত শিক্ষা দেওয়া দরকার।

অস্টেলিয়ার গবেষকরা দাবী করেছেন, গাভীকে গান শুনালে গাভী দুধ বেশি দেয়? সাদা চামড়ার এই গবেষকদের দাবীর বিপক্ষে কারো কোন বিতর্ক নেই। বেশির ভাগের উত্তর হুম হতেই পারে। বিষয়টা মনস্তাত্ত্বিক, গাভী মনে হয়তোবা প্রশান্তি আনে। তাই তার উৎপাদন বাড়ে।

হুম ভাই-ব্রাদার তর্কের জন্য শুধু আপনাদের জানাতে চাই। বিলাতের গরুর যদি গানে মনে প্রশান্তি মেলে তাহলে আমাদের দেশীয় গরুর কেন নিজের বাচ্চার দেহ চেটে শান্তি মিলবে না?আর কেনইবা সেই শান্তি গাভীর দুধ উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা নিবে না?

যদি কারণ হয়ে থাকে কিংবা মনে করে থাকেন যে আপনার জ্ঞানের খনি গুগুল কিংবা স্মার্টফোন ব্যবহারের সুযোগ কৃষকের ছেলে সৌরভের কাছে কিংবা মুয়াজ্জিনের কাছে নেই। এটা তাদের অযোগ্যতা। এই কারণে তাদের কথার কোন যুক্তি নেই। তবে শ্রদ্ধার সাথে জানাই,

জনাব গুগুল নির্ভর জ্ঞানী বন্ধুরা,
আপনাদের গুগুলের যে তথ্য কিংবা জ্ঞান তার জোগানদাতা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা কোটি কোটি কৃষকের ছেলে সৌরভ আর প্রকৃতির কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে সমৃদ্ধ মুয়াজ্জিনরাই।

আপনাদের আছে গুগুল আর তাদের আছে প্রকৃতি। আপনার গুগুল থেকে তথ্য নেন আর তারা তথ্যের যোগানদাতা। আপনি আমাকে প্রায়ই গুগুল ভুল তথ্য সরবারহ করে । কিন্তু প্রকৃতি থেকে শিক্ষা নেওয়া সৌরভদের শিক্ষাটা অনেক বেশি সরস। 

Saturday, April 12, 2014

শহরটা আমার এবং আমাদের। আসুন অক্সিজেনের কারখানা বানাই।

এই শহর নিয়ে হাজার অভিযোগ। হাজার সীমাবদ্ধতা। শহরে নিজের জমি নেই। আমার বাবারও জমি নেই। কিন্তু যে অক্সিজেন পাই তা আমার কিংবা বাবার লাগানো গাছের নয়। গত প্রায় ১যুগের বেশি সময় এই শহরে আছি । কয়েক হাজার টন অক্সিজেন গ্রহণ করেছি। এক টাকাও দেইনি।

এবার আমারও দায় শোধ করার প্রয়োজন। পুরো শহরটাই আমার। তাই আমার শহরে মাটি পেলেই গাছ লাগাই। অক্সিজেনের কারখানা বানাই।

Thursday, March 13, 2014

বিটি বেগুন বিজ্ঞানীদের বিশ্বাসঘাতকতা

বিটি বেগুন নিয়ে অনেক বৈজ্ঞানিক তর্ক আছে। এই তর্ক বৈজ্ঞানিক তর্ক নয়। যাদের সাথে তর্ক তারা তো বিজ্ঞান অনুসরন করেনি। করেছে একটি বিশেষজ্ঞান সেই জ্ঞান নিয়ে এই লেখা। বিস্তারিত পেতে ইনবক্স বাধ্যতামূলক..........................

বিটি বেগুন নিয়ে অনেক তর্ক আছে। বেগুনের সাথে বিশেষ জ্ঞানের সমন্বয়ের নামে বাংলাদেশে যা করা হয়েছে তাকে কোনভাবেই বিজ্ঞান বলা যায় না। যদিও বলা হয় বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা যে জাত তৈরি করেছেন কিন্তু তাতে আমাদের গর্বের কিছু নেই। বরং আছে জাতি হিসেবে ব্যক্তির স্বার্থে রাষ্ট্রের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার অতীতের ইতিহাস পুনরাবৃত্তি মাত্র। বারি যাই বলুক না কেন এটা তাদের গবেষণার ফসল। কিন্তু ইতিহাস ভিন্ন । একটি অসচ্ছ প্রক্রিয়া আর অসংখ্য গোজামিল দিয়ে আর যাই হোক বিজ্ঞান হতে পারে না। 

বারির দাবী এই বেগুনটি খাদ্য হিসেবে নিরাপদ। কিন্তু মজার বিষয় হল তারা কিসের তথ্যের ভিত্তিতে এই দাবী করেছে??
তারা তো তাদের নতুন এই বিটি বেগুনের নিরাপদ কিনা তার কোন প্রকার পরীক্ষাই করেনি।
তাহলে তারা কি করে বুঝল এটি নিরাপদ????
এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষমতা বারির নেই।
যদিও বারি বলবে পুষ্টিগুণ পরীক্ষা করা হয়েছে। পুষ্টি আর নিরাপদ দুইটি দুই জিনিস। আর তর্কটা কোনভাবেই পুষ্টিগুণ নিয়ে নয়।

বারি যে গোজামিল দিয়েছে তার প্রমাণ খুবই স্পষ্ট। যেমন বারি সাথে চুক্তি হয় এই বেগুন বিষয়ক ২০০৫ সালে কিন্তু মজার বিষয় হল বারি যেসব নিরাপদ বেগুন বলে দাবীর ভিত্তিতে তথ্য উপস্থাপন করেছেন তার বেশিভার তথ্যই ২০০৪ এবং ২০০৫ সালের তখন তো বারি কাজই শুরুই করেনি??? তাহলে বিটি বেগুণ (ফসল) পেল কি করে???
তারা চারটি ভিন্ন জাতের বেগুনের রিপোর্ট ঢুকিয়ে দিয়েছে। যা আমাদের দেশের কিংবা বারি’র দাবীকৃত বিটি বেগুণই নয়। যদিও বারি’র আন-অফিসিয়াল দাবী এটি খুবই ব্যয়বহুল তাই পরীক্ষা করা হয়নি?

তাছাড়া বারি যে চুক্তি করেছে অন্য দুইটি প্রতিষ্ঠানের সাথে তাতে দেশের স্বার্থ কিভাবে বিক্রিয়ে দেওয়া হয়েছে তা দেখে সুস্পষ্ট ভাবেই বুঝা যায়। সেখানে দেশের কিংবা বারি’র স্বার্থ কোনভাবেই রক্ষা হয়নি। যদিও গণমাধ্যমে বারি’র দাবী মালিকানা আমাদের কিন্তু আমি চুক্তি সুস্পষ্টভাবে দেখেছি তা ঐ বিশেষ কোম্পানীর বলে লেখা আছে।

এই কথা সত্য যে এই পুরো প্রক্রিয়াটি বিশেষ ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বার্থকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। তাই সকল প্রক্রিয়া শেষে বলা যায়। বিটি বেগুণ যতটা না গর্বের তারচেয়ে বেশি লজ্জার। বারি একটি আন্তজার্তিক মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান এই বিটি বেগুণ নামের গোজামিল কর্মের জন্য। আমাদের জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, প্রতিবেশ, অর্থনীতি সবই হুমকির মুখে।
আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্টানগুলো পৃষ্ঠপোষক আমাদের জনগণ। এই জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য না দিয়ে। যারা সরকারকে ভ্রান্ত তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেছে কিংবা করছে তাদের কে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তারা আমাদের আস্থা বিশ্বাসের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।