Thursday, October 26, 2017

Two Environmental Activists, the ADB Office, and a Canal turned Drain

We had an interesting meeting today with the Asian Development Bank (ADB). We were at their office in Dhaka to discuss some problems that occurred following their “development” of canals in Brahmanbaria and other small cities. Following the “development” of the canal by cementing the sides, what was once a healthy natural place supporting fish and other life has now become a filthy polluted drain.

During the meeting, as is natural, they offered us refreshment. One of us asked for a glass of water. The ADB officials, among whom were two environmental experts, drank coffee and juice, and ate biscuits. The “glass of water” was a small plastic bottle. The coffee came in paper cups with disposable plastic lids and a plastic stirrer. The juice came in a large plastic cup with plastic lid and plastic straw. The biscuits, naturally, were served on single-use plastic plates.

While consuming the food, the officials explained that the problem with the Brahmanbaria canal is the lack of proper solid waste management. The residents of slums, being poor and uneducated, simply toss their waste out the door of their shacks. The local government, despite being trained by ADB, does not dispose of the waste properly. He also suggested that we, as individual activists, go talk to the local government to clean up the mess created by ADB in the first place. (If the local authorities can’t handle the project responsibly, then perhaps you shouldn’t have built it?

One of us launched into a critique of their own practices. How could they criticize slum residents when they know that the rich generate far more trash per person? What about the trash they were generating in their own office? In our office, she continued, we compost our waste and avoid using single-use plastics. We serve water in glasses. We have glass water bottles for seminars. We of course eat off of ceramic or metal plates. How hard is that?

An ADB official responded that, yes, we should separate our waste. He did not even seem to grasp the possibility of avoiding using single-use plastics, though another ADB official acknowledged that these were “good points”. In response to the idea of a surcharge on single-use plastics, they responded that public awareness is the solution. After all, why would an institution focused on economic growth as measured by GDP and on private sector development understand the possibility of reining in the corporations that profit from the use of environmentally-hazardous single-use plastics?
At another point in the meeting, one of us inquired what ADB does if their project has a negative environmental assessment. The answer was a bit hazy; we try to mitigate…but the official did not say that ADB stops the project if the environmental hazards are clear.

When we questioned the wisdom of making cement sides to the canal and thus destroying biodiversity, their response was that this is a city, not the countryside. In a city one cannot have canals and farmland as one would in the city. One may as well say that cities are by definition polluted places that are deathly to their residents, who must choke on the fumes of the cars, be subjected to mounds of plastic trash, and drink dirty water…because that is urbanization, you know, development.

We might have expected that ADB would have the sufficient resources to do a bit of research on ecological practices. Surely they have heard of ecosanitation? Surely they realize that there are ecological ways of dealing with rainwater? Oh, let’s see, has anyone ever heard of rainwater catchment, or systems for recharging groundwater, or parks that become, in part, temporary lakes during the rainy season? These are not difficult issues to research. No, the engineer responsible for the project must instead lecture us on the proper dimensions of a canal to maximize drainage, and one of the environmental experts innocently inquire where she might learn of more ecological practices.

One might also hope that ADB, which claims to wish to end poverty, would have an environmental vision for the future. Surely they understand that poverty also consists of an impoverished environment, where air, water, and soil are polluted and contribute to ill health and early mortality. Surely, then, they will wish to learn from their failures and implement more ecologically-sound projects in future. Instead, they use words like “compromise” and suggest, as above, that cities cannot be environmentally-friendly.

At the end of the meeting, we again asked whether they can unequivocally state that concrete is not environmentally-friendly and is not conducive to biodiversity. They could not. (Earlier in the meeting one official did accidentally remark that in several cases, the canals had been a disaster. When we pushed them to state in which cities, they only named two: Brahmanbaria and Manikganj. The official was obviously aware that he had mis-spoken…not that what he said was not accurate, but it was outside the bounds of what he had meant to say.



Activists will be dreamers…and we will not easily be silenced. We will continue to pursue this issue. We will push ADB to accept that concrete sides of canals are not good for the environment and that there are better solutions to dealing with rainwater. We will alert other municipalities to the possibility of such projects coming to their locale and will urge them not to just “cut and paste” ADB’s mistakes. Our country deserves a much better future than that.

Sunday, August 20, 2017

কেল্লা শাহ্, কেল্লা বাবার আখাউড়া

মাজার নিয়ে আপনার আমার মতামত কি। কিংবা আপনি মাজার বিশ্বাসী কিনা তা নিয়ে তর্কের জন্য এই পোস্ট নয়। এই পোস্ট শুধুই কেল্লা বাবা / কেল্লা শাহ / কেল্লা শহীদের মাজার এবং তার ভক্ত কুলের ভালবাসাকে প্রাধান্য দিয়ে।

কেল্লা শাহ্র প্রকৃত নাম হল সৈয়দ আহমদ গেছুদারাজ। ব্রাক্ষনবাড়ীয়া জেলার আখাউড়া থানার খড়মপুরে অবস্থিত হজরত সৈয়দ আহম্মদ (রঃ) এর দরগাহ। সারাদেশ জুড়ে পরিচয় পাওয়া খড়মপুরের মুল পরিচয় এই দরগা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও তার আশেপাশে এলাকায় মাজার ভক্ত প্রচুর মানুষ পাওয়া যায়। আর এই মাজার ভক্তদের আপনি ধর্ম দিয়ে বিভক্ত করতে পারবেন না। ভাবতেই পারেন দরগা কিংবা মাজার মানেই মুসলিম ধর্মনুসারীদের আনাগোনা। কিন্তু আমি বৃহত্তর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অসংখ্য মাজার দেখেছি যেখানে সনাতন ধর্মের প্রচুর লোক আসে। যদি কেল্লা শাহ্’র মাজার প্রতিষ্ঠার পিছনে ধর্ম আস্তিক-নাস্তিক নিয়ে বিশাল লোকগল্প প্রচলিত আছে।
সেই গল্প নিয়ে তর্ক বা যুক্তি দেখালে অনেক দূর্ পর্যন্ত যেতে হবে। আর আমার জ্ঞানের সীমবদ্ধতা এবং অনাগ্রহের জন্য এই তর্ক বাদ।

তারচেয়ে বরং বলি পিছন থেকে মাজার দেখার গল্প। মাজার নিয়ে আপনার ধারণা যাই হোক। মাজার কিছু মানুষের বিশ্বাস, নেশা, পেশা, আশ্রয়, ধ্যান।

গত ১০ আগস্ট থেকে ১৬ আগস্ট ২০১৭ ছিল কেল্লা শাহ্’র মাজারের বার্ষিক ওরস। হাজার নয় লাখো মানুষের ভিড়। তবে স্থানীয়দের ভাষায় কোটি কোটি মানুষ। ঝড়-বৃষ্টি যাই হোক কেল্লা শাহ্’র ওরসে লাখো মানুষের ভীর হবেই। গ্রামের পর গ্রাম অপেক্ষায় থাকে কবে হবে ওরস। দাদা-দাদী, মা-বাবাসহ এসেছেন এক তরুন। তিন পুরুষেই কেল্লার ভক্ত। তারা প্রতি বছর আসে এবং আসবে। এই বিশ্বাস নিয়ে ফিরে যাবে।
কেল্লা শাহ্’র ওরসে রঙিন পুতুলের দোকান


সবাই যে শুধুই ভক্তির জন্য আছে তা নয়। কেউ কেউ দেখতে আসে, ব্যবসার জন্য আসেন। যেমন কিশোরগঞ্জনের পাখা ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ। আব্দুল্লার সাথে বিশাল দল। সবাই পাখা বানায়। কাপড় সুতা আর বাঁশ দিয়ে পাখা। চাইলে ক্রেতাকে সামনে বসিয়ে পাখা বানিয়ে দেওয়া হয়। পাখার জমিনে নানা বঙিন কাপড়ের ঝালর।
মাজার ঘিরে হাজারো ভক্তে কত কত মানত । কেউ দেয় টাকা, কেউ গরু,ছাগল, মহিষ, মোরগ-মুরগী, চাল, টাকা-পয়সা কত কি।

একদল ভক্তকে দেখলাম গিলাপ দিচ্ছে মাজারে। আমি দাড়িয়ে সেই গিলাপ দেওয়ার রীতিনীতি দেখছি। প্রথমে কয়েকজন ভক্ত গিলাপটি উচুঁ করে মাথার উপর ধরল। তারপর যিনি মানতকারী তিনি গোলাপ জল ছিটিয়ে দিলেন। গোলাপ জল ছিটিয়ে পুরো গিলাপটি যখন ভাল ভাবে ভিজেছে তখন সন্ধ্যার একটু আগে নদীর ঘাট থেকে রাস্তা পার হয়ে মাজারে ডুকল। প্রচুর ভীরে শুনতে পাচ্ছিলাম না তা কি বলছে।তবে বুঝতে পারছি সেই লাল গিলাপ ছুয়ে কয়েকজন বিলাপ করছে। কে কি বলছে বুঝতে পারছি না ভীর ঠেলে সামনে যাওয়া দায়। শুধু দেখছি ভক্তের ভালবাসা কেল্লা বাবা-কেল্লা শাহ্’র প্রতি।

কত বড় মোমবাতি হয় তা দেখতে পাবেন কেল্লার মাজারে। বিশাল বিশাল মোমবাতি। সাপ-বেজির খেলা, কোমর ব্যাথা-মাথা ব্যাথার সাথে সাথে একশন মালিশ, যৌন রোগ-গোপন রোগের ঔষধ। তবে বেশিভাগর রোগ এবং সমস্যা এখানে তাবিজে সারে। হরেক রকম তাবিজ পাওয়া যায়।

চারিদিকে গান হচ্ছে। আমি গানের আসরে দাড়ালাম গান শুনছি। “যাব কেল্লা বাবার বাড়ি, মাঝি ভাসাও তরী”।

মাজারে আসা ভক্তের বড় অংশ নৌকায় যাতায়াত করে
কেল্লা শাহ্’র মাজারের আগতদের একটি বিশাল অংশ আসে নৌাকায় করে। শত শত নৌকা তিতাসের বুকে ভেসে ভেসে ভক্তদের নিয়ে আসে। দিন কয়েকের জন্য নৌকায়ই তাদের বসতি। হিন্দু-মুসলিম ভক্ত এক সাথে এক নৌকায়। নীবনাগর,বাঞ্ছারামপুর, কিশোরগঞ্জ, নাসিরনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আখাউড়াসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে নৌকা আসছে কেল্লা শাহ্’র মাজারে।

এই ভক্তগুলোর ভালবাসাকে শক্তি হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া যেত। তবে অনেককিছুই সম্ভব। যেমন কেল্লার ভক্তরা তিতাস নদীকে বিশেষভাবে দেখে কারণ এই নদীতে কেল্লা শাহ্’র কল্লা/মাথা পাওয়া গিয়েছিল। ঘাটে দেখেছি রাতে প্রচুর মানুষ গোসল করে।

তিতাস নদী নিয়ে এই মানুষগুলোর শ্রদ্ধা, ভালবাসাকে নিয়ে দূষণমুক্ত তিতাস রক্ষার আন্দোলন শুরু করা যেতে পারে।এক নৌকায় হিন্দু-মুসলিমের অবস্থান। নিশ্চয়ই তাহাদের জন্য শিক্ষা হতে পারে। যারা শুধুই ধর্ম নামের মানুষে মানুষে বিভক্তি খুঁজে।





রাত বাড়ার সাথে সাথে রওনা হলাম।প্রতি ট্রেনে হাজার মানুষ। মানুষের গাদাগাদি ট্রেন চলছে।আমরা ট্রেনে উঠে পড়লাম প্রতিদিন গন্তব্য ঠিক থাকার দরকার কি? যাক ট্রেন ভোরে নামব।
ট্রেনে কেল্লা শাহ্’র গল্প হচ্ছে। কেল্লা শাহ্ কে। কি করে তার কেল্লা পাওয়া গেল জেলে চৈতন দাসের জালে। চৈতন দাসের ইসলাম গ্রহন। কেল্লা শহীদের ভক্তরা আস্তিক না নাস্তিক, শিরককারী তা নিয়ে আপনার আামর যুক্তি তর্ক থাকবেই। তবে বোমা নয়। আর্দশের লড়াই আর্দশ দিয়ে হোক। ভালবাসার লড়াই ভালবাসা দিয়ে। ঘৃণ্যার লড়াই ভালবাসা দিয়ে শেষ হোক।

তিতাসের পানিতে ওযু।


আমার মাজার দেখার সাথে অপ্রাসঙ্গিক একটা গল্প বলি, আমি বছর ৫/৬ আগে মহীসূর যাচ্ছি। নানাদেশের ভ্রমণকারীদের সাথে আমিও ছোট বাসের মাঝামাঝি বসে আছি। ভ্রমনের খরচ কমাতে আমি দুদিনই খাবারহীন প্যাকেজ নিয়েছি। পুরো দলে আমি একমাত্র মানুষ যাকে খাবার দেওয়া হচ্ছে না। আমি আমার ব্যক্তিগত ঝোলা থেকে খাবার বের করে খাই। প্রথমদিন সিটি ট্যুরে আমার সাথে এক ভারতীয় পরিবারের সাথে খুবই ভাল সর্ম্পক হয়ে গেল। তারা আমাকে খাবার সহয়তা দেয়।

২য়দিন মহীসূর যাবার সময় পরিবারে সবচেয়ে নিশ্চুপ মানুষটি হঠাৎ বাস ছাড়ার আগে জিজ্ঞাসা করল। আচ্ছা আজকে যেখানে যাব কি দেখার আছে? কাল তো ভাল কিছুই দেখি নি। গাইড বর্ণনা দিলেন অনেককিছু মেয়ের তৃপ্তি নেই।

বিশাল মোমবাতি





Sunday, August 13, 2017

লাখো পদ্মের বিল, ঘাগুটিয়া পদ্ম বিল।

যারা ভাবছেন আগামী দুদিন ছুটি কোথায় যাবেন? ঢাকার কাছেই যেতে চান।খরচ একটু কম হবে। সময়টাও একটা বড় বিষয়। তাদের জন্য লাখো পদ্মের বিল ঘাগুটিয়া হতেই পারে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে আখাউড়া উপজেলার ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী গ্রাম ঘাগুটিয়া। ভারত বাংলাদেশ দুইদেশে মিলে এক বিল ঘাগুটিয়া। এই ঘাগুটিয়ার পদ্মবিলই আপনার গন্তব্য।   দুই দেশের মাঝের এই বিলে যে শুধুই আপনার মন ভরবে তা নয়। বরং দেবতাদেরও মন জয় করতেও ভক্তরা  আসে এই বিল থেকে পদ্ম নিতে। ‘দেবী দুর্গার পূজা শুরু হয় ষষ্ঠীতে বোধনের মাধ্যমে। অষ্টমী তিথিতে ১০৮টি জলপদ্ম দিয়ে দেবীর পূজা অর্চনা করা হয়। পদ্মে দেবী দুর্গা, লক্ষী-নারায়ণসহ অন্য দেবদেবীরাও তুষ্ট হন।’ পদ্ম বিলের পদ্মতে ভক্তরা কতটা দেবতাদের মন জয় করতে পারেন তার কোন তথ্য আমার কাছে নেই। তবে এতটুকু বলতে পারি। পদ্মবিল, পদ্ম আর ঘাগুটিয়া গ্রামের সৌন্দর্য আপনার মন জয় করবে।


ঘাগুটিয়া যাবার রাস্তা


ঢাকা থেকে ট্রেনে আখাউড়া ভাড়া ৭০ টাকা থেকে শুরু। তবে আমি গিয়েছিলাম নিশিতা ট্রেনে। তারপর সিএনজি ( প্রাকৃতিক গ্যাসে চালিত অটো রিক্সা) চালিত রিক্সা ভাড়া করুন। ঘাগুটিয়া বিজিবি (বিডিআর ক্যাম্প) ভাড়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। উপভোগ করতে বিলের আশে পাশে হাটার বিকল্প নেই। নৌকা ভাড়া ঘন্টায় ২০ টাকা থেকে ৫০ টাকা। ঢাকা থেকে মাইক্রোবাস ভাড়া ৫০০০ টাকা পরবে। তিতাস কমিউনিটার কিংবা রাতের শেষ ট্রেন নিশিতা বা চট্টগ্রাম মেইলে চড়ে আখাউড়া। ভোরে সিএনজি অটো রিক্সায় ঘাগুটিয়া ঘুরে বিকেলের ট্রেনে ঢাকায় ফিরতে পারেন।

আখাউড়া থেকে ঘাগুটিয়া যদি কর্নেলবাজার তুলাশিমূল গ্রাম হয়ে যান। তবে রাস্তায় পরবে মিনারকুটে। এখানে একটি ছোট্ট পদ্ম বিল রয়েছে। অনেকে এখানেই নেমে যায়। না অস্থির হবেন না । ঘাগুটিয়া বিল তারচেয়ে অনেক বড়। পদ্মের ভিড় সেখানে আরো বেশি আর মাত্র দুই কিমি ছোট ছোট টিলার রাস্তা পারি দিন। তবে আমি শুনেছিলাম মিনারকুটের পদ্ম মিষ্টি। স্বাদ  ঘাগুটিয়ার পদ্ম  থেকে অনেক বেশি ভাল। তাই আসার পথে আবারও মিনাকুটের বিলে নেমেছিলাম।
কার্তিক মাস পর্যন্ত এখানেও ফুল ফুটে থাকে। তবে বিলের আসল সৌন্দর্য দেখতে চাইলে শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে আসাই ভালো। অথাৎ এখনই সবচেয়ে ভাল সময়। তবে যেদিন বৃষ্টি বেশি হবে তার দুই একদিন না যাওয়া ভাল। কারণ বিলে বেশি পানি হলে পদ্ম তলিয়ে যায়। মাঝে মাঝে উজান থেকে আসা পানিতে পদ্ম তলিয়ে যায়।

যদি প্রবল বর্ষনে পদ্ম তলিয়ে যায় তাতেও আপনার কিছু যায় আসে না। হাজার নয় লাখো পদ্ম পাতা বিলের মাঝে সারিবদ্ধভাবে সবুজ গালিচা তৈরি করে রেখেছে আপনার মন রাঙাতে। পদ্ম পাতায় জলের বিন্দু, পদ্ম পাতায় ভর করে ডাহুকে হাটা চলা, পদ্ম পাতার উপর দাড়িয়ে বকের শিকার ধরার প্রচেষ্টা আপনার ভ্রমনের ক্লান্তি দূর করবে।
পদ্ম ফুল ফোটার পর তার ডগায় সবুজ গোলাকার যা দেখা যায় তাবে আমি ভেবেছিলাম পদ্মের বিচি জাতীয় কিছু হবে। কিন্তু আমার পথপ্রদর্শক তুলি জানাল এটার নাম ঠনা। ঠনা খেতে খুবই সুস্বাদু। আমি দুটা খেয়ে তার স্বাদ সর্ম্পকে নিশ্চিত হই। তারপর ঝিরিঝির বৃষ্টির মাঝে নৌাকায় বসে।

আমার বেসুর কণ্ঠে
দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু।
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
      একটি ধানের শিষের উপরে
             একটি শিশিরবিন্দু।

আমার বেসুর কণ্ঠে কবিতা শুনে তুলি ব্যাপক শব্দ করে হাসছে।

হাসাহাসি যাই হোক।
কবিতার মত আমার বেলায় তাই হয়েছিল। বছর কয়েক আগে আমি ত্রিপুরায় গিয়েছিলাম একটা পদ্মর বিল দেখতে। হাজার হাজার পদ্ম ফুটে আছে তার মাঝে আমি ছোট ডিঙ্গি নিয়ে কয়েক কিলোমিটার পারি দিয়ে। ভারতের ত্রিপুরার মেলাঘরের রুদ্র সাগরে যে প্রাসাদে উঠি তার নাম নীলমহল। হাজার হাজার পদ্মের মাঝে একটা প্রাসাদ।
আমি ফিরে এসে সেই রুদ্র সাগর আর পদ্মের গল্প করেছিলাম পরিচিত সকল মানুষের কাছে। কিন্তু আজ আমি যে প্রাসাদে বসে পদ্ম ফুল দেখলাম তা মাটির ঘর, উপরে টিনের চাল। জানালা দিয়ে বাতাসে ভর করে ভেসে আসা বৃষ্টির কনা আমাকে ভিজিয়ে দিচ্ছে। বারবার মনে হচ্ছিল বৃষ্টির ফোটা একটু বেশি বড় হলে  ঘরের চাল ভেদ করে আমার শরীরে লাগবে। সকাল থেকে রাতবদ্ধি ঘাগুটিয়ার পদ্মবিলের এই প্রাসাদের রানীর সাথে গল্প করছি। কত গল্প পদ্মফুলে ঠনা কি করে খায়, পদ্ম বিলের ইদুর কেন এত বেশি, বকের ফাঁদ, ডাহুকের রক্ত সিন্দুর দিলে কি উপকার, পদ্মফুলের মধুর উপকারিতা, জংলার শেয়াল কেন তার বাড়িতেই ঘুরঘুর করে।

 বৃট্রিশ ভারত-পাকিস্থান-বাংলাদেশ  সব শাসকের স্বাদই তিনি পেয়েছেন। শাসকদের স্বাদের বাইরেও তার বুকে জমা আছে কত গল্প দেশভাগ, মুক্তিযুদ্ধ। সব শাসকরা শুধুই নেয়। কেউ কিছু দেয়নি। তার পরিবারের এবং এই মহল্লার অনেকেই সীমান্ত পাড়ি দিয়েছে বহু বছর  হল। কেউ দিবে দিচ্ছে। কিন্তু বৃদ্ধা আশা নিয়ে এখনো এপারেই পরে আছেন। মৃত্যু আশা। এই ভূমিতেই মরতে চান।

পদ্মফুলের মধু খাবার শখ আমার। আমি তাকে কথা দিয়ে আসলাম এই শরতের আবার তার গল্প শুনতে যাব।

পদ্মময় ঘাগুটিয়া বিল  যে শুধুই আপনার বিনোদনের জন্য তার নয়। এই বিলের উপর নির্ভরশীল বিশাল এক জীববৈচিত্র। আপনার ও আপনার আগামী প্রজন্মকে পদ্মময় করতে এই জীববৈচিত্রকে আপনার আমার টিকিয়ে রাখতে হবে পদ্ম বিলকে। তাই পদ্ম বিলে এবং তার আশেপাশে এমন কিছু করবেন না যাতে জীববৈচিত্রের সমস্যা হয়। প্লাস্টিকের কিছু ব্যবহার করলে তা গ্রামে বা বিলে না ফেলে রেখে সাথে করে আবার নিয়ে আসুন। গ্রামের মানুষের বাড়ি ঘর কিংবা কোন ব্যক্তির ছবি তুলতে চাইলে অবশ্যই অনুমতি নিন।  পদ্ম বিলে ইদুর মারা, বক, ডাউককে  ধরার জন্য ডিল দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।

গ্রামের মানুষদের বিরক্ত করা থেকে বিরত থাকুন। উচ্চ শব্দে গান-বাজনা থেকে বিরত থাকুন। পদ্ম বিলের পদ্ম ফুল, চাঁদ মালা, ছেড়া থেকে বিরত থাকুন। যদিও কেউ কেউ ১০১টি করে পদ্ম ছিড়ে আনে তার প্রেয়সীর মন জয় করার জন্য।তা থেকে বিরত থাকুন। আমি বলি কি ছবি তুলে আনুন, প্রেয়সীকে পদ্ম বিলে নিয়ে যান। কিংবা ভবিষ্যতে তাকে নিয়ে যাবেন এই স্বপ্নটা হৃদয়ে পোষে রাখনু। প্রেয়সীর সাথে পদ্ম বিল উপভোগ করার স্বার্থে পদ্ম ছোড়া বন্ধ করুন।

আখাউড়ায় যাবেন আর নাইন স্টারের খিচুড়ি খাবেন না তা কি করে হয়। আখাউড়া শহরে মাত্র ৩০ টাকায় পাবেন দুনিয়ার বিখ্যাত গরুর মাংসের খিচুরি।

আখাউড়ায় আপনি ঘুরার মত অনেক কিছুই পাবেন। ১৪আগস্ট ২০১৭ তারিখ কেল্লা শাহ বা খড়মপুরের ওরসের শেষদিন চাইলে একটা ঘুরতি দিয়ে আসতে পারেন। দেখতে পাবেন কেল্লা শাহ’র ভক্তের তার প্রতি ভালবাস, বিশ্বাস। উরসে সাপ খেলা, বেজি খেলা, গান, নানা পদের গ্রামীন খাবারের সাথে পরিচয় হতে পারবেন।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জেনেছিলাম।  কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা ও তাদের সোর্সরাও রাস্তায় যাবার পথে নিজেদের পুলিশ দাবী করে মাঝে মাঝে ঐ রাস্তায় ভ্রমণকারীদের বিরক্ত করে। তারা অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন করবে। কার অনুমতি নিয়ে এসেছেন? চেয়ারম্যান, বিজিবি অনুমতি আছে কিনা? আপনি তাদের উত্তর দিন সরাসারি যে আপনারা ঘুরতে এসেছেন। দলবেধে গেলে তেমন কোন সমস্যা নেই। শুধুমাত্র একা বা একজন ছেলে এক বেশি ঝামেলা করলে বিডি পুলিশ হেল্পলাইনের সহযোগিতা নিন। তবে অবশ্যই আপনার পরিচয় দেবার সময় সেই কর্মকর্তার নাম পদবী জেনে নিবেন। আখাউড়া থানার নাম্বারটি সাথে রাখুন +৮৮০ ১৭১৩-৩৭৩৭৩১

তবে স্থানীয় জনগণ ও বিজিবি খুবই আন্তরিক। বিজিবির ক্যাম্পের পাশে যে ঘন ছায়ায় ঘেরা পায়ে হাটার পথ পাবেন তাতেই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাটিয়ে দিতে পারবেন।

পদ্মময় হোক আপনার দুচোখ এবং আগামী দুদিনের ছুটি।

Sunday, August 6, 2017

মাত্র ৩৫ টাকায় পেট ভর্তি খাওয়া। কত কি যে সম্ভব আপনার এই ঢাকায়।




মাত্র ৩৫ টাকায় পেট ভর্তি খাওয়া। কত কি যে সম্ভব আপনার এই ঢাকায়।

৩৫টাকায় পেট ভর্তি খাবার মানে বিশ্বাস করতেই পারেন আপনি বর্তমানে শায়েস্তা খানের রাজ্যের নাগরিক। বিশ্বাস করুন আর নাইবা করুন। ঢাকায় ৩৫টাকায় পেট চুক্তি খেতে পারবেন। নিন্দুকরা হয়তবা আপনাকে বলবে ড্রেনের পাশে চট দিয়ে ঘেরা ইটালিয়ান হোটেল হবে এই ৩৫টাকার খাবারের অফার।

নিন্দুকের কথা বাদ দিন। আস্থা রাখুন। আর শুনুন । সেই হোটেলের বর্ণনা। নামেই শুধু রাজকীয় হোটেল। তা নয়। 

বলতে পারেন আমরা যারা সস্তায় থাকা খাওয়ার হোটেল খুঁজি। তাদের জন্য ইহা সত্যি রাজকীয় হোটেল। রাজকীয় সেই হোটেলে মাথার উপর ভন ভন করে পাখা ঘুরে। চেয়ারে বসে পাগুলো তুলে দিন। 

মামা ওহ মামা।

ডাক দেবার সাথে সাথে এসে যাবে আপনার ভাগিনা। কি চান বলে ফেলুন।
ভাত-সবজি-ডাল = ৩৫ টাকা।

তাছাড়া আছে ৪৫ টাকা ও ৫৫ টাকার প্যাকেজ। ৪৫ টাকায় পাবেন মাছ। ৫৫টাকায় মুরগীর মাংস। 
পৃথিবী আপনার আপনি যা চাইবেন তাই পাবেন। আমি সস্তায় খাবার আর থাকার জায়গা খুঁজি তাই সস্তায় খাবার এবং থাকার জায়গা আমার চোখে পড়ে।

এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমি কতশত সস্তায় খাবারের সন্ধান দিলাম। দু:খ কেউ দাওয়াত দিল না। 

তারপরও আমি তথ্য দিয়ে যাই। এই রয়েল হোটেলের অবস্থান দক্ষিণ যাত্রাবাড়ি। ফ্লাই্ওভারের দক্ষিণ পাশে। মানে আপনি যদি যাত্রাবাড়ি থেকে আসেন তবে ফ্লাইওভারে বাম পাশে উঠার মুর্হুতেই সন্ধান পাবেন।


আপনাদের ভ্রমণ এবং খাবার আনন্দময় হোক।

Sunday, May 14, 2017

গন্তব্য চুনারচর।

যাহাদের কাজ নেই, সময় হত্যা করার জন্য এই শহরে কিছু-ই করতে পারছেন না, হাতে টাকা কম, ঘুরাঘুরি শখ । তাদের জন্য এই পোস্ট ও ছবি।
নিউ মার্কেট, বসুন্ধরা সিটি, ফুচকা, চিকেন ফ্রাই, তেমন জোশ কিছুই নেই চুনারচরে। চুনারচর মানে চুনারচর। চুনারচর মানে আপনি বাংলার গ্রাম বলতে যে স্বপ্ন বুনেন মনে মনে তাই। অগ্রিম টাকা আর ইনবক্সে দামাদামী করে আমাকে নিতে পারে গাইড হিসেবে।
কিংবা নিজে নিজেই চলে যান। ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে মাত্র ১২০/১৫০টাকায় আসা যাওয়া, খাওয়াসহ শেষ করতে পারেন আপনার চুনারচর ভ্রমণ। আর দল বেধে গেলে তো কথাই নেই।
1.দুই শাকিল মানে সৌভাগ্য। তবে চুনারচরে আপনার ভাগ্য আর ভাগ্য। শত শত জোড়া শাকিলের দেখা মিলবে। তবে আমি চুনারচরে দুই শালিক দেখে এখনো মাশুল দিচ্ছি চুনারচর ভ্রমনের। দোস্ত আমার মহা ক্ষ্যাপা। আশা করি আপনাদের এমন হবে না।
2.পড়ন্ত বিকেল সন্ধ্যার শুরু। আপনার ক্যামেরায় জোছনার রূপালী আলো এমন নীল হয়ে ধরা পড়বে চুনারচরে।
3.চুনারচর থেকে ফেরার পথে ভাকুর্তাতে পাবেন বেশ কয়েকটি স্থানীয় মিষ্টির দোকান। স্বাদ না নিলে আপনি মহা ভুলই করবেন।
4.এই ভদ্রলোকদের সাথে যদি গলা ভিজাতে চান গরুর দুধের চায়ে তবে তা খুবই সহজ। কারণ গরুর দুধ ছাড়া এখানে রং চা বা কৃত্রিম দুধের কোন চা হয় না।
5.এই ভদ্রলোকদের সাথে যদি গলা ভিজাতে চান গরুর দুধের চায়ে তবে তা খুবই সহজ। কারণ গরুর দুধ ছাড়া এখানে রং চা বা কৃত্রিম দুধের কোন চা হয় না।
6.এগুলো বন্যপ্রাণী আবাসস্থল। সারি সারি বক আর ডাহুক দেখা মেলা খুবই স্বাভাবিক।
7.মেঘ, বৃষ্টি, রোদ্র, বর্ষা, প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম নয় বন্ধুত্ব করে চলার নামই জীবন। এই নারী প্রকৃতির সাথে বন্ধুত্ব করে টিকে আছেন।
8.তাহাদের সাদা কালো শৈশবটা আমাদের চেয়ে হাজার গুণ জীবন্ত প্রাণবন্ত।
9.এই সবুজ একদিন নদী ছিল।
10.চুনারচর তাহাদের গ্রাম।
11.চুনারচরে স্বাগতম
12.এই সবুজ ঘেরা রাস্তাই চুনারচর।
13.রাত খুবই মন্দ না। চোখের একটু বেশি ক্ষমতা আপানে জোছনার আলোয় দেখাবে লাউ ফুলের এইরূপ
14.এই রকম শত শত চায়ের কেটলি আপনার জন্য তৈরি। কবে যাচ্ছেন চুনারচর?
15.আপনার যদি থাকে এই রকম এক সুন্দরী বন্ধু তবে কে ঠেকায় আপনাকে। এক লিটার তেল আর এক বোতল পানিই দিতে পারে চুনারচর ভ্রমণের সুখ।

নগরপিতা চিনে না সন্তানদের, তারাও জানে না নগরভবন কোথায়।

দেশে কেউ আন্দোলন করে বিভাগের দাবী নিয়ে। কেউ বলে জেলা চাই, কেউ সিটি করপোরেশন। কিন্তু সিটি করপোরেশন যাদের জন্য অভিশাপ সেই ছেলে-মেয়েদের দেখতে গিয়েছিলাম। ঢাকার কপোরেট মেয়র আনিসুল হকের এলাকায় তাদের বসবাস। উন্নয়ন বাণিজ্যের নামে তাদের বাবাদের আদি পেশা মাছ ধরাটা বলি হয়ে গেছে চামড়া রপ্তানিকারকদের মুনাফার কাছে। ট্যানারির বিষাক্ত জল যে শুধু নদীর জলই বিষাক্ত করেছে তা নয়। গুটি কয়েক ব্যবসায়ীর মুনাফা ধ্বংস করে দিয়েছে কয়েক প্রজন্মের ভবিষ্যৎ।
ছেলেমেয়েগুলোর বাবারা বেকার। মায়েরা বিভিন্ন বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে। যাদের ঘরে ভাত নেই। তাদের পড়াশোনা মানে বিলাসীকতা। মাগনা স্কুল যেটা আছে তাতে ফাইভ পাশ দিলে। মেয়েরা বিয়ের জন্য সেনা হয়ে যায়। হাজার অভাব অনটনের এই পল্লীতে মেয়েগুলোকে বিয়ে দিয়ে দিলেই পরিবারগুলোর মুক্তি। সেই মুক্তিতে সুশীল বা ধনীর বাল্যবিবাহরোধে যে আইন আছে সেই কাগুজে আইন কোন প্রভাবই ফেলতে পারে না। কিছুটা ঝামেলা হয় আর কি। আর সেই ঝামেলা এড়াতে কারো কারো জন্য কাগজপত্র ছাড়া বিয়েটাই ভরসা হয়ে আছে।
তাদের কাছে নদী শুধুই নদী নয়। গত কয়েকশ বছরের বংশ পরম্পরায় বুড়িগঙ্গা তাদের জীবন জীবিকার উৎস, এ নদী তাদের পরিবারেই সদস্য। ধরুন পূজার পরিবারের কথা। নদীতে মাছ নেই, তার বাবা বেকার। ধীরে ধীরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তার মা বাধ্য হলে মানুষের বাড়িতে কাজ নিতে। পূজার মায়ের আয়ে সংসার চলে না। পূজার স্কুল যাওয়া বন্ধ। এ রকম অসংখ্য পূজার দেখা মিলবে বছিলা জেলে পাড়ায়।
প্রাইমারি স্কুলের পর জেলে পল্লীর অধিকাংশ মেয়ে স্কুলে যায় না। কারণ বছিলা প্রাইমারি স্কুল বিনা বেতনে পড়ালেও।উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল বিনা বেতনে পড়ায় না। যে ঘরে ভাত নেই সেখানে স্কুলে যাওয়া মানে বিলাসীকতা। তারচেয়ে গ্রামের কারো বাড়িতে কাজ করলে আয় হয়। আয় যাই হোক না কেন দু বেলা ভাত জুটে। ঢাকা সিটি করপোরেশনের এলাকা বলে এখানের মেয়েরা উপবৃত্তি পায় না। তাই প্রাইমারি স্কুলের পর তাদের পড়াশোনার খরচ পরিবার জোগার করতে পারে না।অধিকাংশ পরিবারের মেয়েদের বাল্য বিবাহ দিয়ে দেয়।
এই সরু রাস্তা কয়েক জেলা পাড়ার প্রধান সড়ক।



তাদের যে ঘাটের জলে গৃহস্থালি কাজের ভরসা ছিল। সেই ঘাটে মেয়র সাহেবের লোকজন নালা তৈরি করেছে। আর ছবিতে যে সরু রাস্তা দেখছে এই রাস্তাটি কয়েকশত মানুষের সদর রাস্তা। এই রাস্তা দিয়ে আড়াআড়ি করে লাশ বের হয় না।জেলে পল্লীর কেউ মারা গেলে নাকি তার লাশ নদীতে নৌকায় ভাসিয়ে শশানে নিয়ে যাওয়া হয়।
গলিপথটা এতটা সরু নগরপিতার গাড়িও আসে না এখানে কখনো। নগরপিতা জানে না তার নগরের এই সন্তানদের কথা। সন্তানরা জানে শুধু একজন নগরপিতা আছেন। যিনি চাইলেই জেলে পাড়ার কাচাঁ পায়খানাগুলো পাকা হবে, নদীর জল সচ্ছ হবে, ছেলে মেয়েগুলো স্কুলে যাবে, বাল্যবিবাহ বন্ধ হবে, বৃদ্ধ মানুষগুলো অপেক্ষায় আছে রাস্তাটা আর একটু চড়া হবে। মৃতুর পর তাদের লাশ আর নদীতে ভাসিয়ে শশানে যাবে না।
এই সরু রাস্তা ঠেলে, ঘর থেকে বের হয়ে উত্তরের মেয়রের নগর ভবনের দরজায় অভাব অভিযোগ নিয়ে যাবার সাহস দেখায় না জেলে পাড়ার কেউ। আর নগর ভবনের দরজাও কখনো খোলা হয় না বছিলার জেলে পাড়ার মানুষগুলোর অভাব অভিযোগ শুনার জন্য।

Tuesday, May 2, 2017

নতুন নতুন বাংলা শব্দ যুক্ত হোক বাঙালির কণ্ঠে

ভিয়েতনামের Vietnam Academy Of Social Sciences তাদের নিজেস্ব ভাষার বিশুদ্ধতা রক্ষা ও তাদের ভাষায় ইংরেজি শব্দের আগ্রাসনমুক্ত রাখতে নতুন নতুন শব্দ তৈরি এবং তা প্রচারে ব্যস্ত। যেমন ধরুন কম্পিউটার শব্দটা আমাদের বাংলা শব্দ হয়ে গেছে। কিন্তু ভিয়েতনাম কর্তৃপক্ষ Computer এর ভিয়েতনাম শব্দ máy vi tính মাই ভি থিন। তেমনি সেলফোন, মোটর সাইকেল সবকিছু ভিয়েতনাম নিজেস্ব শব্দ আছে।
Académie française ফান্স একাডেমি তারা তাদের ভাষার বিশুদ্ধতা রক্ষায় নিজেস্ব শব্দ তৈরি করে তা জনগণের মাঝে প্রচার করে।
বাংলা ভাষার বিশুদ্ধতা রক্ষায় প্রয়োজন ভিয়েতনামের মত নতুন নতুন বাংলা শব্দ তৈরি করা ও প্রচার এবং জনগণকে ব্যবহারে উদ্ভুদ্ধ করা।
যদিও অনেকের যুক্তি বিভিন্ন ভাষার মিশ্রণ আজকের এই বাংলা ভাষা। তারপরও বলি বাংলা ভাষার এত দূর আসার পরও বাংলা একাডেমীর প্রতি প্রত্যাশা যদি আমরা আমাদের ভাষার বিশুদ্ধতা রক্ষা ও নতুন নতুন বিদেশি শব্দের আগ্রাসন প্রতিহত করতে পারি, তবে মন্দ হয় না।
বাংলা একাডেমীর প্রতি অনুরোধ রইল অসংখ্য প্রয়োজন ইংরেজি শব্দের বাংলা শব্দ তৈরি করতে হবে।
ভালই লাগে শুনতে ক্ষুদেবার্তা কিংবা মুঠোফোন। এ রকম আরো নতুন নতুন বাংলা শব্দ যুক্ত হোক বাঙালির কণ্ঠে। বাংলা ভাষা হোক অমর

ফলের নাম মাইলাম

মারিআম, মাইলাম বা উরিআম
ফলের নাম মাইলাম, কেউ বলে মালিআম,উরিআম, বালাম। কুকুর কামড়ালে এই আম খাওয়ানো হয় ঔষধ হিসেবে।ঢাকায় শুধুমাত্র আমার জানা মতে রমনায় মাইলাম পাওয়া যায়।
রমনা ছাড়া পাবর্ত্য চট্টগ্রামে মাইলাম মিলে। আজ আমি প্রথম মাইলাম খেলাম।ফল কাঁচা এবং পাকা উভয় অবস্থাতেই খাওয়া যায়।যারা টক পছন্দ করেন তাদের জন্য মাইলামের বিকল্প কিছু হতে পারে, বলে আমার মনে হয় না। জীবনে জিহ্বে তো অনেককিছুর স্বাদই দিয়েছেন। মাইলমের স্বাদটা একবার নিয়ে নিতে পারেন

ভিন্ন পেশার এই মানুষগুলোকে একটা বৃত্তে আবদ্ধ করেছে যান্ত্রিক সাইকেল স্কুটি।

ও রে হাওয়ার উপর চলে গাড়ি, লাগে না পেট্রোল ডিজেল, মানুষ একটা দুই চাকার সাইকেল। হ্যাঁ মানুষ নামের সাইকেলে পেট্রোল ডিজেল না লাগলেও খুকুমনি, নিলুফা ইয়াসমিন শিলা, সোনিয়া লায়লা, মাহিনুর আক্তার, সাকিয়া হক, মানশি সাহা, মুক্তা, সুমা, নিপার দুই চাকার যান্ত্রিক সাইকেল স্কুটিতে পেট্রোল লাগে।


স্বপ্নচারিনী সদস্যদের আড্ডাবাজি, সংসদ চত্ত্বর

ঢাকার জীবনযাত্রায় একটা যান্ত্রিক সাইকেল নারীর জীবনে কতটা গতি আর স্বাধীনতা এনে দিয়েছে তারই গল্প শুনছিলাম সংসদ ভবন চত্ত্বরে। ফেইসবুকে স্বপ্নচারিনী নামের নারী স্কুটি চালকদের একটা ক্লোজগ্রুপ আছে তাদের। পেশায় তারা কেউ উন্নয়নকর্মী, কেউ হিসাবরক্ষক, কেউ ব্যবস্থাপক, কেউবা শখের ভ্রমণকারী। ভিন্ন পেশায় নিয়োজিত তারা, শহরের ভিন্ন ভিন্ন প্রান্তে তাদের অবস্থান। কাজের প্রয়োজনে ছুটতে হয় তাদের শহরে এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। আর এই ছুটাছুটিকে সহজ করে দিয়েছে স্কুটি।
গণ পরিবহনে রাষ্ট্র নয় সিট বরাদ্দ দিয়ে তার দায় দায়িত্ব শেষ করে ফেলেছে। পিক আওয়ারে তো নয় সিটের পর আর কোন নারীকে গাড়িতে তোলা হয় না সিট নেই, সিট নেই বলে। পিক আওয়ারে ঢাকায় নারীর যাত্রায় যে কতটা কষ্টকর তা শুধুই ভোক্তভোগী নারীরা জানে।
তবে স্কুটি চালক নারীরা এখন ঢাকায় চলাচলে অনেকটাই স্বাধীন। অফিস থেকে ফেরা পথে এখন আর বাসের ৯সিটের পিছনে ছুটতে হয় না। বাসের সিট না থাকলেও তাদের পিছনের সিটে সহকর্মীরা স্থান পায়।



নিলুফা ইয়াসমিন শিলা, কাজের প্রয়োজনের আর ঘুরাঘুরি।ঢাকায় স্কুটির বিকল্প স্কুটিই।

নিলুফা ইয়াসমিন শিলা, Nilufa Yesmin Shila কর্মরত আছেন, আগোরা’য় পাশের দেশের তুলনায় স্কুটির দামটা অনেক বেশি। রাস্তায় কোন নারী স্কুটি চালক দেখলেই আমাদের বন্ধুত্ব হয়ে যায়। এভাবেই আমাদের মাঝে নেটওর্য়াক তৈরি হচ্ছে। শহরে এখন নারী স্কুটি চালকের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। যাতায়াতের ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে যাদের একটু সামর্থ্য আছে তারাই স্কুটি কিনছে।
যারা একটু দক্ষ তাদের দায় দায়িত্ব যেন একটু বেশি। কারো স্কুটি বিষয়ক কোন সমস্যা হলে ফোন আসে। যেমন খুকুমনি Khuku Moni দুই চাকার যান্ত্রিক সাইকেল চালানোর তার অভিজ্ঞতা প্রায় ১৫ বছর। আর তাই তার কাছে ফোন আসে সবচেয়ে বেশি। নতুনরা ফোন দিয়ে আপা গাড়ি র্স্টাট হচ্ছে না, ইঞ্জিন গরম হয়ে যাচ্ছে বেশি, ইঞ্চিন ওয়েল কত কিলোমিটার চলার পর পরিবর্তন করব, কোথায় সার্ভিসিংয়ের জন্য ভাল। অভিজ্ঞতা থেকে হাসিমুখে খুকুমনি উত্তর দিয়ে যান।



খুকুমনি প্রায় ১৫ বছর যাবৎ ঢাকায় রাস্তায় যান্ত্রিক সাইকেল চালান তিনি

খুকুমনি বলেন, আমি যখন স্কুটি কিনেছি তখন ঢাকায় গুটা ১০ নারী স্কুটি চালক ছিল না। ঐ সময় রাস্তায় সবাই অবাক হয়ে দেখত। তখন গাড়ির কোন সমস্যা হলে কারো সাথে আলোচনা করব তার ব্যবস্থা ছিল না। এখন তো আমাদের বিশাল নেটওর্য়াক। নিমিষেই সবকিছুর উত্তর পাওয়া যায়।
আমরা সুযোগ পেলেই ঘুরতে বের হয়ে পড়ি। আমাদেরও কাছে ঘুরাঘুরি মানেই দিন তিনেকের জন্য সিলেট,চট্টগ্রাম, খুলনা নয়। আমরা ঢাকায় কিংবা ঢাকার আশে পাশে এলাকাগুলোতে ঘুরি ফিরি। কয়েকদিন আগে ঘুরে আসলাম মৈনটঘাট। সকাল নয়টায় রওনা হয়ে মৈনটঘাট ঘুরে চলে আসলাম দুপুর তিনটায়। সকাল ৯ টায় আমরা ১০ জনের দল রওনা হলাম। তারপর সারাদিন ঘুরে ফিরে সন্ধ্যায় বাসায় ফেরা।
Mahinur Aktar মাহিনুর আক্তার নিপা ভ্রমণ তার শখ নেশা যাই বলা হোক না কেন কোন আপত্তি নেই। নিজের পরিচয় ভ্রমনকারী হিসেবে দিতেই বেশি পছন্দ করেন। দেহকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য খাদ্য দরকার হয়। কিন্তু মনের? মনকে তো সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। জীবন মানেই শুধুই সময় পার করা নয়। সময় তো খাচাঁয় বন্দী পশু-পাখিও পার করে। আমরা জীবন উপভোগ করতে চাই। তাই যখনই সময় পাই আমরা ছুটে যাই। আমরা ছুটে যাই জীবন উপভোগ করব বলে রুহিতপুর, জাহাঙ্গীর নগর, বিরুলিয়া, মৈনটঘাট, বৈদ্যবাজার, চুনারচর, ওয়াসপুর, পুরান ঢাকা। ঘন্টায় ৩০ থেকে ৪০ গতিতে গাড়ি চালাই আমরা কারণ এই গতিটা নিরাপদ এবং জ্বালানী সাশ্রয়ী। আমাদের দলের হেলমেট পড়া এবং ট্রাফিক আইনমানা বাধ্যতামূলক। আমরা রাস্তায় পথচারীদের সম্মান করে চলি। তাই কখনোই ফুটপাতে স্কুটিটি তুলে দেই না।
ঢাকায় এখন অনেক গ্রুপ আছে নারী স্কুটি চালকদের। এই গ্রুপগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বেশ তৎপর। নারী স্কুটি চালকদের গ্রুপগুলো বেশির ভাগ ক্লোজগ্রুপ। সপ্তাহে বা মাসে কোন কোন দিন তারা ঘুরতে বের হয়ে যায় দলবেধে। তেমনি একটি গ্রুপ ট্রাভেলেটস্ অব বাংলাদেশ। ফেইসবুকে তাদের শুধুমাত্র নারী সদস্য সংখ্যা ৮ হাজার। ২০১৮ সালে এপ্রিল মাসে ৬৪টি জেলা ভ্রমণ করবে তারা। ইতিমধ্যে নারী চোখে বাংলাদেশ নামে তারা সারাদেশ ভ্রমণের পরিকল্পনা করেছে। ঢাকার কেন্দ্রিয় শহীদ মিনার থেকে গত ৬ এপ্রিল রওনা দিয়ে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত চারজনের দল ঘুরে আসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, নরসিংদি জেলা।
কেমন ছিল সেই ভ্রমন? কথা হয়েছিল সেই দলের নারী ভ্রমণকারী নাজমুন নাহার মুক্তা ও শামছুর নাহার সুমার সাথে। একজন ইডেন কলেজে অন্যজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। আমরা শুধুই ঘুরতে চাই না। ঘুরাঘুরি ছাড়াও আমরা চাই সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বিভিন্ন সামাজিক কাজে এগিয়ে আসতে।
তাই নারী চোখে বাংলাদেশ ভ্রমণে আমরা যেখানে গিয়েছি সেখানে বিভিন্ন স্কুল-কলেজে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, নারী ক্ষমতায়, পরিচ্ছন্নতা বিয়ষক প্রচারণা চালিয়েছি। আমাদের দলের সাকিয়া হক ও মানসি সাহা তুলি দুজনই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে পড়ে। তারা বর্তমানে মালেশিয়াতে আছেন। তারা ঢাকায় ফিওে আবারও শুরু করবে যাত্রা “নারীর চোখে বাংলাদেশ” ভ্রমনের ।



সোনিয়া লায়লা, প্রায় ১বছর যাবৎ স্কুটি চালাচ্ছেন।

সোনিয়া লায়লা Sonia Laila উন্নয়নকর্মী, মাত্র কয়েক মাসহল স্কুটি চালাচ্ছেন। নানা সীমাবদ্ধতার মাঝে তার নিজের একটা স্কুটি আছে তাতে গর্ববোধ করেন। পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে সকাল বিকাল রাত যখনই দরকার তখনই আমরা ছুটতে পারি।
ধরুন অফিস থেকে ফেরা পথে আমরা মিনিট তিরিশের জন্য এক হয়ে গোটা বিশ ত্রিশ টাকার বাদাম চিবুই। এটাই আমাদের বিনোদন। সারাদিনের ক্লান্তি ভুলে বাসায় ফিরি উৎফুল্ল মন নিয়ে। এক ফ্ল্যাটের মানুষ যখন একজন আর একজনকে চিনে না তখন আমরা দলবেধে ঘুরতে বের হই। কংক্রিটের শহরে জীবন মানেই আমি আর তুমিতে শেষ হয়ে যাচ্ছে। সেখানে আমরা দুই চাকার সাইকেল স্কুটিকে কেন্দ্র করে শহরের অনেক নারী ঐক্যবদ্ধ হচ্ছি। একে অপরের সমস্যা এগিয়ে আসি।

ক্লান্তি আর ব্যস্ততার পরও শহরের খুকু,সোনিয়া, নিপার মত নারীদের সেতুবন্ধনের নাম স্কুটি। ভিন্ন পেশার এই মানুষগুলোকে একটা বৃত্তে আবদ্ধ করেছে যান্ত্রিক সাইকেল স্কুটি।




অফিস থেকে ফেরার পথে চলছে আড্ডা।সংসদ ভবন চত্ত্বর, ঢাকা।

ওস্তাদ নাজমা আক্তার। পেশায় রিকশা মিস্ত্রি।

ঢাকার রিকশা, ঢাকার গন্ডি পেরিয়ে স্থান করে নিয়েছে গ্রিনেস ওয়ার্ল্ড বুকে। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি রিকশা চলাচল করে ঢাকায়। সংখ্যা তার ৫ লক্ষের বেশি। ঢাকার রিকশা এখন এই শহরের কোটি মানুষের চলাচলের মাধ্যম। এই পরিবেশবান্ধব যানটার নিয়ে নানা অযৌক্তি, অবৈজ্ঞানিক ধারনা প্রচলিত আছে। বলা হয় রিকশা ঢাকার যানজটের অন্যতম কারণ। কিন্তু নগরবিদ এবং পরিবহন পরিকল্পনাবিদরা এখন একমত যে এই ধারনাটি ভুল এবং মনগড়া। আর এই ভুল ধারণার ভিত্তি করে রিকশা উচ্ছেদের সিদ্ধান্তটাও ছিল ভুল।
রিকশা নিয়ে এক বৃট্রিশ নগর পরিকল্পনাবিদ রব গ্যালাগার, রিকশা অব বাংলাদেশ নামে হাজার পৃষ্ঠার বই লিখে ফেলেছেন। রিকশা নিয়ে এমন হাজার পৃষ্ঠার বইয়ের পাশাপাশি হাজার হাজার গল্প করা যাবে। তবে আজ যে গল্প শুনাতে চাই তাহল নাজমা আক্তার।

রিকশা মেরামতে ব্যস্ত নাজমা আক্তার।
ঢাকায় রিকশার সাথে জড়িত সকল পেশাই মূলত পুরুষের দখলে। আর তাই যদি আমার মত আপনার ধারনা হয়ে থাকে। তবে পরিচয় হোন নাজমা আক্তারের সাথে । নাজমা আক্তার বয়স ৪৫। জন্ম ঢাকায়। গ্রামের বাড়ি বরিশালের মাঠবাড়িয়া। প্রায় ৩০ বছর যাবত ঢাকায় রিকশা মেরামতের কাজ করেছেন। বর্তমানে ধানমন্ডির আবহানী মাঠের পশ্চিম পাশে তার ভাসমান রিকশা মেরামতের স্থান।
কি করে এই পেশায়? বাবা রশিদ মিয়া ছিলেন রিকশা মিস্ত্রী তার কাছ থেকে হাতে খড়ি। তবে রশিদ মিয়া রিকশা মেরামতের পেশা ছেড়ে ফলের ব্যবসায় চলে যান। নাজমা আক্তার রিকশা মেরামতের পেশাটাই স্থায়ী হয়ে গেলেন। এখন ঢাকায় নাজমা আক্তারের শিষ্য আছে গোটা ৩০। নিজের দুই মেয়েও শিখেছে রিকশা মেরামতের কাজ তার কাছে। মেঝ মেয়ে আবহানী মাঠের কাছে রিকশা মেরামত করেন। ছোট মেয়ে রুমি সাথে কথা হল আবহানী মাঠের কাছে। সে জানাল সে রিকশা মেরামতের সকল কাজই জানে। তবে এখন একটা চাকুরী করে। তবে মাঝে মাঝে সময় পেলে মেঝ বোনের দোকানে বসে। বোনের টুকটুাক সহযোগিতা করে।
স্বামী আব্দুর রহমান হৃদয় মিস্ত্রী নাজমা আক্তারের শিষ্য। আব্দুর রহমান বলেন ঢাকায় যদি দুই/চারজন শ্রেষ্ঠ রিকশা মিস্ত্রী থাকে। তবে তার উস্তাদ নাজমার নাম আসবে এক, দুই,তিনের মধ্যে। রিকশার এক্সেলের টাল ভাঙ্গার কঠিন কাজে থেকে শুরু করে চাকায় হাওয়া দেওয়ার মত কাজে আমার ওস্তাদ নাজমা আক্তারের দক্ষতার জুড়ি নেই। বছর বিশ আগে নাজমা আক্তারের শিষ্য হন আব্দুর রহমান হৃদয়। তারপর এখন পর্যন্ত ওস্তাদের সাথে আছেন।
আব্দুর রহমান মূলত সাইকেল সারাতে ব্যস্ত থাকেন বেশি। সাইকেলে সারাতেই তার দক্ষতা বেশি। কিন্তু নাজমা আক্তারের দক্ষতা সবখানে সে রিকশা, সাইকেল, বাচ্চাদের খেলনার সাইকেল-রিকশা সবকিছুতে সে দক্ষ। রিকশা মেরামতের কাজ যতই সহজ আর কঠিন হোক জোর দিয়ে হবে না। রিকশা মেরামত করতে হয় রিকশার সাথে ভাব জমিয়ে। তা না হলে একটা সমস্যা ঠিক হলে আর একটা তৈরি হবে।
ধরেন হাতুরি দিয়ে টুকটুক বারি দিয়ে যেমন রিকশার টাল ভাঙ্গতে হয়। আবার সেই বারি একটু উনিশ-বিশ হলেই রিকশা টাল হয়। রিকশার চাকা বা এক্সেল টাল হলে যে শুধু চালকের রিকশা চালাতে সমস্যা হয় তা নয়। যাত্রীও রিকশায় চড়ে স্বস্তি পায় না। রিকশার চাকায় হাওয়া দিতে হয় পরিমাণ মত। সামনের চাকায় এক রকম, পিছনের চাকাগুলোতে আর এক রকম। আমরা তো হাওয়া মাপার মেশিন ব্যবহার করি না। তাই চোখের মাপ আর অভিজ্ঞতা দিয়ে আমাদের মাপতে হয়। আমাকে যারা চিনে তারা ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, কলাবাগান, জিগাতলা, রায়েরবাজার যেখানেই থাকুক না কেন আমার কাছে চলে আসে। আমার কাছে কাজ করিয়ে সন্তুষ্ট হয়। নতুন কেউ কেউ ভাবে আমি আর কতটা রিকশা ভাল ভাবে ঠিক করতে পারব। তাই আমাকে এড়িয়ে যেতে চায়। কিন্তু যখন দেখে আমার কাজের মান অন্যদের থেকে ভাল তখন আমার কাজ নিয়ে আর অপত্তি থাকে না। আমি কখনোই কারো সাথে কাজের জন্য র্তকে জড়াই না। আমি আমার মেধা আর আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করি। আমার নিজের কাজের প্রতি আমি আস্থাশীল তাই বুঝি কেউ একবার আমার কাছে কাজ করলে বার বার আসবেই। গত ৩০ বছরের তার ব্যাতিক্রম হয়নি।

সারাদিন রিকশার টাল ভাঙ্গে, বাড়ি ফিরে সংসারে টাল ভাঙ্গতেও পারদর্শি নাজমা
এখন স্বামী-স্ত্রী কাজ করে কুলাতে পারি না। প্রতিদিন শত শত রিকশা আসে আমাদের এখানে। ঢাকায় হাজার হাজার মানুষ রিকশা চালায় কিন্তু মানুষগুলোর কোন দাম নাই। একদিন গাড়ি বন্ধ থাকলে কত হাউকাউ। কিন্তু একদিন যদি রিকশা বন্ধ থাকে তাহলে কি হবে চিন্তা করেন? তারপর মানুষ রিকশা চালকদের সম্মান করে না। মাঝে মাঝে মাইর খাইয়া রিকশা চালকরা আসে। পুলার সমান পুলাপাই মারছে ভাড়া দেয় নাই। রিকশা ভাইঙ্গা দিচ্ছে। গত ৩০ বছরে কত রিকশা ড্রাইভারে চোখের পানি দেখছি। কত রিকশা ড্রাইভার দেখছি শূণ্য থেকে কত কি হয়ে গেলে।
একজন কর্মীজীবি নারীর পরও আমার পরিচয় আমি কারো মা, স্ত্রীর সংসার আমাকে সমালাতে হত। রাস্তায় রিকশার টাল ভাঙ্গি আর বাসায় সংসারের টাল ভাঙ্গি। ভিক্ষা করা থেকে রাস্তায় বসে রিকশা মেরামতের কাজ অনেক ভাল। আমি আমার শ্রম,বুদ্ধি দিয়ে কাজ করি। কারো কাছে হাত পাতি না। এটাই আমার সুখ।

Monday, March 13, 2017

আগামী ১৫মার্চ তারিখ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন দিবস।

আগামী ১৫মার্চ তারিখ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন দিবস।
দেখি কি হয়!!!!

২০১৫ সালে আমি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে দেশের অন্যতম এক বহুজাতিক কোম্পানীর পণ্যের মোড়কে উৎপাদন তারিখ ও মেয়াদ উত্তীনের তারিখ ব্যবহার না করার মর্মে একটি অভিযোগ দায়ের করি যা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ৩৭ ধারার অধীন দন্ডনীয় অপরাধ।
গত ২০১৫,২০১৬ এবং ২০১৭ সালে এই অভিযোগের জন্য শুনানীর জন্য বেশ কয়েকবার তারিখ নিধারণ করা হলেও প্রতিবার নানা সমস্যার কথা বলে তারা সময় নিচ্ছে। গত ১মার্চ ২০১৭ সালে শুনানীর কথা থাকলেও তারা সকালে এসে কর্তপক্ষ থেকে আবারও সময় নিয়ে যায়।
আগামীকাল ১৪ মার্চ ২০১৭ তারিখে সকাল ১১টায় আবারও শুনানীর তারিখ নিধারণ করা হয়েছে। দেশের কোটি কোটি মানুষের কাছে তারা তাদের পণ্য বিক্রি করে। সে পণ্যের মান রক্ষা করার দায়িত্ব তাদের। তারা দাবী করে তারা বিশ্ব বিখ্যাত কোম্পানী এবং তাদের পণ্যের মান বিশ্বমানের তাহলে তারা কেন পণ্যের গায়ে উৎপাদন তারিখ ব্যবহার করে না?
আমি আগামীকাল সকাল ১১টায় যাব জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে শুনানীর জন্য। ক্রেতা স্বার্থ রক্ষায় আমার এই শুনানীর জন্য আল্লাহ-ই জানে আর কতদিন যেতে হবে।
২০১৫ সাল থেকে আমি শুধুই ঘুরছি আর ঘুরছি। আমার জানা এটি দেশের একমাত্র অভিযোগ | যা নিষ্পত্তি হতে সবচেয়ে বেশি সময় লাগছে। কেন লাগছে এত সময় দয়া করে তা কেউ জিজ্ঞাসা করবেন না।
শুধু জানি হারা যাবে না। আগামীকাল বিশ্বমানের পণ্য উৎপন্নকারী, বিশ্ববিখ্যাত কোম্পানীর বিখ্যাত কোম্পানী দেখি গ্রাহক স্বার্থ রক্ষায় আবার কি পদক্ষেপ নেয়। কাল সকাল ১১টা পর্যন্ত শুভ কামনা।

Saturday, February 4, 2017

নীলক্ষেত গাউছুল আযম মার্কেটের সামনের ফুটপাতের মুড়ি ভর্তা

 ঢাকায় কোথায় কি খাবার পাওয়া যায় তা নিয়ে আপনাকে জ্ঞান দেওয়ার সাহস আমি করি না। তবে বলি কি সুযোগ পেলে একবার নীলক্ষেত গাউছুল আযম মার্কেটের সামনের ফুটপাতের মুড়ি ভর্তা খেতে পারেন।
আপনার মুখে ঢাকার হাজার টাকার মুড়ি ভর্তা খাওয়ার স্বাদ লেগে আছে তা জানি । কিন্তু এখানে পাবেন অন্যরকম স্বাদ সাথে বিক্রেতার ভালবাসা।



ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিন্নীর বইশ (মহিষ)।


ইদন আর বাবুল পেশা তাদের দিনমুজুর। কিন্তু বছরের এই সময়টা তারা গ্রামে গ্রামে সিন্নীর বইশ নিয়ে হাঁটে । গেল সপ্তাহে আমার সাথে দেখ হল সিন্নীর বইশসহ। গ্রাম ওয়ারু,থানা নবীনগর, জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

আমরা নবীনগর থেকে মটর সাইকেল যোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাচ্ছি। বিলের মাঝখান দিয়ে তৈরি সরু রাস্তায় দেখা মিলল বাবুল আর ইদনের সাথে। ধূলায় মাখামাখি। গ্রামের পর গ্রাম সিন্নীর বইশ নিয়ে হেটে বেড়ানো ওদের পেশার অংশ।


সিন্নীর বইশ মানেটা কি? এই মহিষটি কেনা হয়েছে করিম শাহ’র মাজারে ওরস উপলক্ষ্যে। ওরসের দিন এটি জবাই করা হবে। এটি ছাড়াও আর একটি মহিষ কেনা হয়েছে। দুইটি মহিষ সাজিয়ে কর্তৃপক্ষ তাদের তাদের গ্রাম ভাগ করে দিয়েছেন। তারা মহিষ নিয়ে গ্রামে গ্রামে যায়। বাড়ি বাড়ি থেকে চাল, টাকা সংগ্রহ করে।

আর এর বিনিময়ে তারা দৈনিক কিছু টাকা পায়। টাকা চেয়ে বড় পরী-আউলিয়ার দোয়া । বাড়ি বাড়ি থেকে সংগ্রহ করা এক মুঠো চাল ওরসের দিন হাজার হাজার মানুষের খাবারের জোগান হবে। কতদূর দূর থেকে মানুষ আসে এই করিম শাহ্’র মাজারে। বাবুল-ইদনের মুখে তৃপ্তির ছাপ।

আমি বললাম বাবুল ভাই আমাদের যেতে হবে। আমাদের এই শহুরে জীবনে তৃপ্তি নেই, আছে ক্লান্তি । শুধুই আছে ছুটে চলা। যন্ত্র আর আমাদের মাঝে কাগজ কলমে পাথ্যর্ক যাই থাকুক না কেন। আমি বলি পাথ্যর্ক নেই। আমরা যেখানে এখনো শুধুই নিজের কথা সেখানে বাবুল-ইদনরা মাইলের পর মাইল পাড়ি দিচ্ছে হাজার মানুষের একবেলার সংগ্রহের জন্য। আর তাই তাদের ক্লান্তি নেই, আছে শুধুই তৃপ্তি।

আমরা ধূলার সাথে লড়াই করে একের পর এক গ্রাম পারি দিচ্ছি। সন্ধ্যার আগেই পৌছাতে হবে গোকর্ণঘাটের এপারে তারপর নদী পাড়ি দিয়ে রেলগাড়িতে করে ঢাকায়।

আপনি কি কখনো সিন্নীর বইশ দেখেছেন? শুনেছেন রাত জেগে পালা-গান?
নবীনগর, নাসিরনগর, আখাউড়া, কসবা, সরাইলসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বেশ কিছু স্থানে এই মৌসুসে দেখা পেতে পারেন শিন্নীর বইস কিংবা বাবুল-ইদনদের। হয়তবা বুঝতে পারবেন জীবনমানে শুধুই আমি আর তুমি নয়।
জীবন আমরা হতে পারে, চারপাশের মানুষগুলো নিয়ে আমরা।
#ব্রাহ্মণবাড়িয়া, #সিন্নী