Sunday, August 20, 2017

কেল্লা শাহ্, কেল্লা বাবার আখাউড়া

মাজার নিয়ে আপনার আমার মতামত কি। কিংবা আপনি মাজার বিশ্বাসী কিনা তা নিয়ে তর্কের জন্য এই পোস্ট নয়। এই পোস্ট শুধুই কেল্লা বাবা / কেল্লা শাহ / কেল্লা শহীদের মাজার এবং তার ভক্ত কুলের ভালবাসাকে প্রাধান্য দিয়ে।

কেল্লা শাহ্র প্রকৃত নাম হল সৈয়দ আহমদ গেছুদারাজ। ব্রাক্ষনবাড়ীয়া জেলার আখাউড়া থানার খড়মপুরে অবস্থিত হজরত সৈয়দ আহম্মদ (রঃ) এর দরগাহ। সারাদেশ জুড়ে পরিচয় পাওয়া খড়মপুরের মুল পরিচয় এই দরগা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও তার আশেপাশে এলাকায় মাজার ভক্ত প্রচুর মানুষ পাওয়া যায়। আর এই মাজার ভক্তদের আপনি ধর্ম দিয়ে বিভক্ত করতে পারবেন না। ভাবতেই পারেন দরগা কিংবা মাজার মানেই মুসলিম ধর্মনুসারীদের আনাগোনা। কিন্তু আমি বৃহত্তর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অসংখ্য মাজার দেখেছি যেখানে সনাতন ধর্মের প্রচুর লোক আসে। যদি কেল্লা শাহ্’র মাজার প্রতিষ্ঠার পিছনে ধর্ম আস্তিক-নাস্তিক নিয়ে বিশাল লোকগল্প প্রচলিত আছে।
সেই গল্প নিয়ে তর্ক বা যুক্তি দেখালে অনেক দূর্ পর্যন্ত যেতে হবে। আর আমার জ্ঞানের সীমবদ্ধতা এবং অনাগ্রহের জন্য এই তর্ক বাদ।

তারচেয়ে বরং বলি পিছন থেকে মাজার দেখার গল্প। মাজার নিয়ে আপনার ধারণা যাই হোক। মাজার কিছু মানুষের বিশ্বাস, নেশা, পেশা, আশ্রয়, ধ্যান।

গত ১০ আগস্ট থেকে ১৬ আগস্ট ২০১৭ ছিল কেল্লা শাহ্’র মাজারের বার্ষিক ওরস। হাজার নয় লাখো মানুষের ভিড়। তবে স্থানীয়দের ভাষায় কোটি কোটি মানুষ। ঝড়-বৃষ্টি যাই হোক কেল্লা শাহ্’র ওরসে লাখো মানুষের ভীর হবেই। গ্রামের পর গ্রাম অপেক্ষায় থাকে কবে হবে ওরস। দাদা-দাদী, মা-বাবাসহ এসেছেন এক তরুন। তিন পুরুষেই কেল্লার ভক্ত। তারা প্রতি বছর আসে এবং আসবে। এই বিশ্বাস নিয়ে ফিরে যাবে।
কেল্লা শাহ্’র ওরসে রঙিন পুতুলের দোকান


সবাই যে শুধুই ভক্তির জন্য আছে তা নয়। কেউ কেউ দেখতে আসে, ব্যবসার জন্য আসেন। যেমন কিশোরগঞ্জনের পাখা ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ। আব্দুল্লার সাথে বিশাল দল। সবাই পাখা বানায়। কাপড় সুতা আর বাঁশ দিয়ে পাখা। চাইলে ক্রেতাকে সামনে বসিয়ে পাখা বানিয়ে দেওয়া হয়। পাখার জমিনে নানা বঙিন কাপড়ের ঝালর।
মাজার ঘিরে হাজারো ভক্তে কত কত মানত । কেউ দেয় টাকা, কেউ গরু,ছাগল, মহিষ, মোরগ-মুরগী, চাল, টাকা-পয়সা কত কি।

একদল ভক্তকে দেখলাম গিলাপ দিচ্ছে মাজারে। আমি দাড়িয়ে সেই গিলাপ দেওয়ার রীতিনীতি দেখছি। প্রথমে কয়েকজন ভক্ত গিলাপটি উচুঁ করে মাথার উপর ধরল। তারপর যিনি মানতকারী তিনি গোলাপ জল ছিটিয়ে দিলেন। গোলাপ জল ছিটিয়ে পুরো গিলাপটি যখন ভাল ভাবে ভিজেছে তখন সন্ধ্যার একটু আগে নদীর ঘাট থেকে রাস্তা পার হয়ে মাজারে ডুকল। প্রচুর ভীরে শুনতে পাচ্ছিলাম না তা কি বলছে।তবে বুঝতে পারছি সেই লাল গিলাপ ছুয়ে কয়েকজন বিলাপ করছে। কে কি বলছে বুঝতে পারছি না ভীর ঠেলে সামনে যাওয়া দায়। শুধু দেখছি ভক্তের ভালবাসা কেল্লা বাবা-কেল্লা শাহ্’র প্রতি।

কত বড় মোমবাতি হয় তা দেখতে পাবেন কেল্লার মাজারে। বিশাল বিশাল মোমবাতি। সাপ-বেজির খেলা, কোমর ব্যাথা-মাথা ব্যাথার সাথে সাথে একশন মালিশ, যৌন রোগ-গোপন রোগের ঔষধ। তবে বেশিভাগর রোগ এবং সমস্যা এখানে তাবিজে সারে। হরেক রকম তাবিজ পাওয়া যায়।

চারিদিকে গান হচ্ছে। আমি গানের আসরে দাড়ালাম গান শুনছি। “যাব কেল্লা বাবার বাড়ি, মাঝি ভাসাও তরী”।

মাজারে আসা ভক্তের বড় অংশ নৌকায় যাতায়াত করে
কেল্লা শাহ্’র মাজারের আগতদের একটি বিশাল অংশ আসে নৌাকায় করে। শত শত নৌকা তিতাসের বুকে ভেসে ভেসে ভক্তদের নিয়ে আসে। দিন কয়েকের জন্য নৌকায়ই তাদের বসতি। হিন্দু-মুসলিম ভক্ত এক সাথে এক নৌকায়। নীবনাগর,বাঞ্ছারামপুর, কিশোরগঞ্জ, নাসিরনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আখাউড়াসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে নৌকা আসছে কেল্লা শাহ্’র মাজারে।

এই ভক্তগুলোর ভালবাসাকে শক্তি হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া যেত। তবে অনেককিছুই সম্ভব। যেমন কেল্লার ভক্তরা তিতাস নদীকে বিশেষভাবে দেখে কারণ এই নদীতে কেল্লা শাহ্’র কল্লা/মাথা পাওয়া গিয়েছিল। ঘাটে দেখেছি রাতে প্রচুর মানুষ গোসল করে।

তিতাস নদী নিয়ে এই মানুষগুলোর শ্রদ্ধা, ভালবাসাকে নিয়ে দূষণমুক্ত তিতাস রক্ষার আন্দোলন শুরু করা যেতে পারে।এক নৌকায় হিন্দু-মুসলিমের অবস্থান। নিশ্চয়ই তাহাদের জন্য শিক্ষা হতে পারে। যারা শুধুই ধর্ম নামের মানুষে মানুষে বিভক্তি খুঁজে।





রাত বাড়ার সাথে সাথে রওনা হলাম।প্রতি ট্রেনে হাজার মানুষ। মানুষের গাদাগাদি ট্রেন চলছে।আমরা ট্রেনে উঠে পড়লাম প্রতিদিন গন্তব্য ঠিক থাকার দরকার কি? যাক ট্রেন ভোরে নামব।
ট্রেনে কেল্লা শাহ্’র গল্প হচ্ছে। কেল্লা শাহ্ কে। কি করে তার কেল্লা পাওয়া গেল জেলে চৈতন দাসের জালে। চৈতন দাসের ইসলাম গ্রহন। কেল্লা শহীদের ভক্তরা আস্তিক না নাস্তিক, শিরককারী তা নিয়ে আপনার আামর যুক্তি তর্ক থাকবেই। তবে বোমা নয়। আর্দশের লড়াই আর্দশ দিয়ে হোক। ভালবাসার লড়াই ভালবাসা দিয়ে। ঘৃণ্যার লড়াই ভালবাসা দিয়ে শেষ হোক।

তিতাসের পানিতে ওযু।


আমার মাজার দেখার সাথে অপ্রাসঙ্গিক একটা গল্প বলি, আমি বছর ৫/৬ আগে মহীসূর যাচ্ছি। নানাদেশের ভ্রমণকারীদের সাথে আমিও ছোট বাসের মাঝামাঝি বসে আছি। ভ্রমনের খরচ কমাতে আমি দুদিনই খাবারহীন প্যাকেজ নিয়েছি। পুরো দলে আমি একমাত্র মানুষ যাকে খাবার দেওয়া হচ্ছে না। আমি আমার ব্যক্তিগত ঝোলা থেকে খাবার বের করে খাই। প্রথমদিন সিটি ট্যুরে আমার সাথে এক ভারতীয় পরিবারের সাথে খুবই ভাল সর্ম্পক হয়ে গেল। তারা আমাকে খাবার সহয়তা দেয়।

২য়দিন মহীসূর যাবার সময় পরিবারে সবচেয়ে নিশ্চুপ মানুষটি হঠাৎ বাস ছাড়ার আগে জিজ্ঞাসা করল। আচ্ছা আজকে যেখানে যাব কি দেখার আছে? কাল তো ভাল কিছুই দেখি নি। গাইড বর্ণনা দিলেন অনেককিছু মেয়ের তৃপ্তি নেই।

বিশাল মোমবাতি





No comments:

Post a Comment