Thursday, March 13, 2014

বিটি বেগুন বিজ্ঞানীদের বিশ্বাসঘাতকতা

বিটি বেগুন নিয়ে অনেক বৈজ্ঞানিক তর্ক আছে। এই তর্ক বৈজ্ঞানিক তর্ক নয়। যাদের সাথে তর্ক তারা তো বিজ্ঞান অনুসরন করেনি। করেছে একটি বিশেষজ্ঞান সেই জ্ঞান নিয়ে এই লেখা। বিস্তারিত পেতে ইনবক্স বাধ্যতামূলক..........................

বিটি বেগুন নিয়ে অনেক তর্ক আছে। বেগুনের সাথে বিশেষ জ্ঞানের সমন্বয়ের নামে বাংলাদেশে যা করা হয়েছে তাকে কোনভাবেই বিজ্ঞান বলা যায় না। যদিও বলা হয় বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা যে জাত তৈরি করেছেন কিন্তু তাতে আমাদের গর্বের কিছু নেই। বরং আছে জাতি হিসেবে ব্যক্তির স্বার্থে রাষ্ট্রের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার অতীতের ইতিহাস পুনরাবৃত্তি মাত্র। বারি যাই বলুক না কেন এটা তাদের গবেষণার ফসল। কিন্তু ইতিহাস ভিন্ন । একটি অসচ্ছ প্রক্রিয়া আর অসংখ্য গোজামিল দিয়ে আর যাই হোক বিজ্ঞান হতে পারে না। 

বারির দাবী এই বেগুনটি খাদ্য হিসেবে নিরাপদ। কিন্তু মজার বিষয় হল তারা কিসের তথ্যের ভিত্তিতে এই দাবী করেছে??
তারা তো তাদের নতুন এই বিটি বেগুনের নিরাপদ কিনা তার কোন প্রকার পরীক্ষাই করেনি।
তাহলে তারা কি করে বুঝল এটি নিরাপদ????
এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষমতা বারির নেই।
যদিও বারি বলবে পুষ্টিগুণ পরীক্ষা করা হয়েছে। পুষ্টি আর নিরাপদ দুইটি দুই জিনিস। আর তর্কটা কোনভাবেই পুষ্টিগুণ নিয়ে নয়।

বারি যে গোজামিল দিয়েছে তার প্রমাণ খুবই স্পষ্ট। যেমন বারি সাথে চুক্তি হয় এই বেগুন বিষয়ক ২০০৫ সালে কিন্তু মজার বিষয় হল বারি যেসব নিরাপদ বেগুন বলে দাবীর ভিত্তিতে তথ্য উপস্থাপন করেছেন তার বেশিভার তথ্যই ২০০৪ এবং ২০০৫ সালের তখন তো বারি কাজই শুরুই করেনি??? তাহলে বিটি বেগুণ (ফসল) পেল কি করে???
তারা চারটি ভিন্ন জাতের বেগুনের রিপোর্ট ঢুকিয়ে দিয়েছে। যা আমাদের দেশের কিংবা বারি’র দাবীকৃত বিটি বেগুণই নয়। যদিও বারি’র আন-অফিসিয়াল দাবী এটি খুবই ব্যয়বহুল তাই পরীক্ষা করা হয়নি?

তাছাড়া বারি যে চুক্তি করেছে অন্য দুইটি প্রতিষ্ঠানের সাথে তাতে দেশের স্বার্থ কিভাবে বিক্রিয়ে দেওয়া হয়েছে তা দেখে সুস্পষ্ট ভাবেই বুঝা যায়। সেখানে দেশের কিংবা বারি’র স্বার্থ কোনভাবেই রক্ষা হয়নি। যদিও গণমাধ্যমে বারি’র দাবী মালিকানা আমাদের কিন্তু আমি চুক্তি সুস্পষ্টভাবে দেখেছি তা ঐ বিশেষ কোম্পানীর বলে লেখা আছে।

এই কথা সত্য যে এই পুরো প্রক্রিয়াটি বিশেষ ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বার্থকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। তাই সকল প্রক্রিয়া শেষে বলা যায়। বিটি বেগুণ যতটা না গর্বের তারচেয়ে বেশি লজ্জার। বারি একটি আন্তজার্তিক মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান এই বিটি বেগুণ নামের গোজামিল কর্মের জন্য। আমাদের জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, প্রতিবেশ, অর্থনীতি সবই হুমকির মুখে।
আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্টানগুলো পৃষ্ঠপোষক আমাদের জনগণ। এই জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য না দিয়ে। যারা সরকারকে ভ্রান্ত তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেছে কিংবা করছে তাদের কে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তারা আমাদের আস্থা বিশ্বাসের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।

Monday, October 7, 2013

যে গ্রামে কখনো ঈদ আসে না।

ফলিয়ামারী ময়মনসিংহের চরাঞ্চলের একটি গ্রাম। ২৪ পরিবারের এই গ্রামের মানুষ প্রতিনিয়ত লড়াই করছে দরিদ্রতার সাথে। আমাদের শহরে ঈদ যখন রঙ্গিন হয়ে ওঠে প্রতিটি মানুষের জীবন। তখন ঐ মানুষগুলোর জীবনে ঈদ মানে আর অন্য আট-দশটা দিনের মতই অভাবের সাথে লড়াই। গত ২০ বছরে এই গ্রামে কোরবানীর ঈদে কোন কোরবানী হয়নি। ২০ বছর আগে পাশের গ্রামের সমাজের সাথে ছিল তাদের সমাজ, ঐ সমাজের দারিদ্রতার জন্যই তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে দিযেছে। কোরবানীর ঈদের মাংস তাদের কাছে এখন স্বপ্নের মত গল্প।

শুধু যে পাশের গ্রামের মানুষ তাদের বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে তা নয়। গোটা দেশটাই তাদের বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। সারাদেশে লক্ষ লক্ষ পশু কোরবানী হয়। কিন্তু একট টুকরো মাংস সেই গ্রামে পৌছে না। আমরা রাজধানী লোকেরা একাধিক পশু কোরবানী দেই। সেই কোরবানীতে কি এক টুকরো মাংস পৌছতে পারে না ফলিয়ামারী গ্রামের মানুষের জন্য? আমরা কি পারিনা ঐ সকল গ্রামের মানুষের জন্য কোরবানীর ঈদে কিছু করতে?

 কি পারি, কি পারি না তা নয়। এবার ঈদে মানুষগুলোর জন্য আমরা গত ২০ বছরের ঈদের স্মৃতি ভুলিয়ে দিতে চাই। Ibnul Syed Rana ভাই উদ্যোগ নিযেছেন। এই সপ্তাহে ঐ গ্রামে যাবেন। ২৪ পরিবারের শিশুদের ঈদ রঙ্গিন করতে যা লাগবে। তাই হবে ফলিয়ামারীতে এবার। আসুন ফলিয়ামারীর মানুষগুলোর সাথে আমরা আমাদের ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেই।

যারা যারা আমাদের সাথে যেতে আগ্রহী কিংবা অংশগ্রহন করতে চান যোগাযোগ করুন।

Wednesday, May 23, 2012

সীমার স্বপ্ন বাঁচাতে একটা স্কুল চাই.....

সীমার সঙ্গে এখনও আমার পরিচয় হয়নি। তবু গত কয়েকটা দিনে আমি, আমার পরিবার ও বন্ধুদের কাছে সীমা খুব পরিচিত। প্রতিদিন সবাই উৎকন্ঠা থাকে। অপেক্ষায় করে। সীমার জন্য একটা স্কুল পাওয়া গেল কি? এই প্রশ্নের উত্তরের অপেক্ষা। পাওয়া যাবে তো, তার উৎকন্ঠা। কিন্তু ১১ দিনেও এর একটির জবাব মেলেনি।


নুসরাত,কলি, পাপিয়া,ঝিলিক, রিমন,তুষার,নাদিম,সুমি, জাকিরসহ ২১জন মিলে অর্ধশত স্কুল খুঁজে ফেলেছি। লক্ষ টাকা গুরু দক্ষিণা নেওয়া স্কুল থেকে শুরু করে মাগানার প্রাইমারি স্কুল যেখানেই হোক সীমার জন্য একটি আসন। ‘ডানে বায়ে ঘুরে বেড়াই, মেলান যদি প্রভু।’ কিন্তু ধানমন্ডি, ঝিগাতলা, হাজারীবাগ, মোহাম্মদপুর, রায়ের বাজার কোথাও সীমার জন্য স্কুল নেই। অন্ধ, মূক, বধির, সুস্থ, সাদা-কালো, মেধাবি-মেধাহীন, মনযোগী-অমনোযোগী, বিত্তবান-বিত্তহীন সব শিশুর জন্য স্কুল আছে এই শহরে। আছে নাচের, গানের, আাঁকার আর কত রকম স্কুল। শুধু একটা স্কুল নেই সীমার জন্য।

কত স্কুলে যে আমার গেলাম! যখন বলি একটা বাচ্চা ভর্তি করব। অনেকেই রাজি হয়। কিন্তু সীমার ছবিটা দেখে পরক্ষণেই বলে না ভর্তি সম্ভব নয়। কেউ কেউ বিনয়ের সঙ্গে বলে “ আসলে হয়ে কী! বছরে মাঝামাঝি আমরা ভর্তি করি না।” আবার কেউ সহানুভ’তি দেখিয়ে বলে “গ্রাম মেয়ে! বুঝেনই তো এখানে প্রতিযোগীতায় পারবে না।” যাদের বিষয়িক বুদ্ধি ভালো, তারা বলেন “আরে ভাই! এত টাকা খরচ করে পড়িয়ে লাভ কি বলুন তো?” আরেকজন আরো এককাঠি সরেস। যে কিনা স্কুলের মালিক। তার ভান্ডারে আছে ডজনখানিক দেশ দেখার অভিজ্ঞতা। তিনি পরামর্শ দিলেন, সীমার জন্য একটা স্কুল খুলে ফেলবার। আশ্বাস দিতেও কার্পন্য করেননি। বলেছেন, প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবেন। স্কুল খোলা পরই আমরা বুঝব কেন সীমাকে ভর্তি করা হয়নি। সীমার জন্য স্কুল না পেলেও বিনামুল্যে এমন হাজারও উপদেশ পাচ্ছি।


এখন সীমার কথা বলি। স্কুলে কাশ টুতে পড়ে। বয়স মাত্র নয়। চোখ বন্ধ করলেও, ভেসে ওঠে লাল টুকেটুকে জামা পড়া একটি দুরন্ত শিশুর মুখচ্ছবি। বুদ্ধিদীপ্ত, দুষ্টুমিভরা এক জোড়া চোখ। কিন্তু আমাদের সীমা এমন নয়। হয়ত এমনই হওয়া কথা ছিল। কিন্তু ওর বয়স যখন নয়, তখন তার পাষন্ড বাবা ও চাচা এসিড ঢেলে সীমা ও তার মায়ের মুখ জ্বলসে দেয়। ওর সুশ্রী চেহারার লাবন্যটুকু কেড়ে নিয়েছে এসিড। এরপর পদ্মায় মেঘনায় অনেক জল গড়িয়েছে। মাতৃক্রোড় হারিয়ে, সীমা এখন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুলের আবসিক ছাত্রী।


সীমার মা মীরা। সংসার হারিয়েছেন অনেককাল আগেই। নিজেও এসিডদগ্ধ। সব মেনে নিয়েছেন। শুধু এখন একটিই চাওয়া। নিজের মেয়েকে নিজের কাছে রাখতে চান। এই আকুতিই তার কন্ঠে। বলেন, “ইদানিং ঘুমের মাঝে মেয়েটাকে বেশি বেশি স্বপ্নে দেখি। মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে সারা রাত আর ঘুম আসে না। আমি জানি আর আমার আল্লাহ জানে কেমন লাগে। মনে হয় মেয়েটার কাছে ছুটে যাই রাতেই। প্রায়ই ভাবি মেয়েটাকে ঢাকায় নিয়ে আসব। কিন্তু এই শহরে তো কোন স্কুলে সীমারে স্কুলে ভর্তি করব না”।


আমার প্রবাসী বন্ধু এটম রহমান নিজের মাকে দেশে ফেলে হাজার মাইল দুরে থাকেন। তাই সীমার ও তার মায়ের কষ্টটা খুব করে বুঝেন তিনি। এই কষ্টের অবসান করতে চান। তাই নিজেই উদ্যোগ নিয়ে স্কুল খুজে বের করে সীমাকে ঢাকায় নিয়ে আসতে চান। সেই অনুযায়ী চেষ্টাও করছেন। সীমার মায়ের জন্য ঢাকায়  বাসস্থান ও কর্মসংস্থান দুই-ই খুব কঠিন নয়। কিন্তু সব উদ্যোগ আটকে গেছে, কেন না সীমার জন্য দুই কোটি মানুষের রাজধানীর কোন স্কুলেই একটি আসন নেই। অনেক চেষ্টা করেও পাওয়া যায় না। প্রতিবন্ধী স্কুল হয়ত সীমাকে ভর্তি করাবে। কিন্তু একটাই প্রশ্ন একজন স্বাভাবিক বুদ্ধির শিশুকে কেন ভর্তি হতে হবে বিশেষ শিশুদের স্কুলে?


সবাই মিলে রোজই স্কুল খুঁজি। ভাবি হয়ত পরের স্কুলেই একটা আসন হয়ে যাবে সীমার জন্য। অষ্ট্রেলিয়ায় ফোন করে, এটম ভাইকে বলতে পারব “ভাই...! স্কুলটা আমি পেয়ে গেছি সত্যি। এখন আর কেউ আটকাতে পারবে না।” আমি জানি এটম ভাইও এই কথা শুনতে অধীর অপেক্ষায় আছেন।তার বিশ্বাস আমরা আমরা সীমা পূরনে একটা স্কুল খুঁজে পাবই। এই বিশ্বাস নিয়ে আমাদেরও সকাল শুরু হয়। আমরা স্কুল খুঁজি। আজও খুঁজব।


এই শহরে সভা সেমিনারে আমিও চিৎকার করেছি বহুবার বলেছি অধিকার! অধিকার! শতবার পড়েছি পাঠ বই, পত্র-পত্রিকাতে। সভা সেমিনার, ভাষণে শ্লোগানে কতবার শিক্ষাকে দেখেছি অধিকারের মোড়কে। আমার  সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৭এ একই পদ্ধতির গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা দানের কথা বলা হয়েছে। অনুচ্ছেদ ১৯ (১) সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতার নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে।


প্রাথমিক শিক্ষা (বাধ্যতামূলক করণ) আইন, ১৯৯০. ( ১৯৯০ সনের ২৭ নং আইন ). [১৩ ফেব্রুয়ারী,, ১৯৯০]. প্রাথমিক শিা বাধ্যতামূলক করণকল্পে প্রণীত আইন৷. যেহেতু প্রাথমিক শিক্ষা      বাধ্যতামূলক করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়;. সেহেতু এতদ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইল :-. সংপ্তি শিরোনামা. ১৷ এই আইন প্রাথমিক শিা (বাধ্যতামূলক করণ) আইন, ১৯৯০ নামে অভিহিত ...


বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৩ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ ও ১৯৮১ সালে প্রাথমিক শিা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৯০ সালে জাতীয় সংসদ কর্তৃক প্রাথমিক শিা (বাধ্যতামূলককরণ) আইন পাস করে।



এদেশের সংবিধান,আইনে সুস্পষ্ট করে না ছলে শত শত বার লিখা আছে সীমার অধিকারের কথা। কিন্তু আজ কোন আইন, অধিকারই সীমার জন্য স্কুলের সন্ধান দিতে পারছেনা। তারপরও আমাদের স্কুল খোজার দলটা ক্রমেই বড় হচ্ছে। এক সময় হাজার ব্যস্ততার মাঝেও বিদেশ থেকেই নানাভাবে এটম রহমান একাই সীমার জন্য যে স্কুলটা খোঁজ বেড়িয়েছেন। আজ সেই দলে অনেক বড়। প্রতিদিনই একজন না একজন যুক্ত হয় কাল রাতে এসে যুক্ত হয়েছেন ইটিভির সাঈদ মুন্না, সমকালের আমার বন্ধু রাজিব আহাম্মদ। দলটা এখন প্রায় ত্রিশ ছুঁয়েছে। আমরা সীমার স্বপ্নপূরনে একটা স্কুল খুঁজে বের করার স্বপ্ন দেখি। এই নগরে একটা স্কুল খুঁজে পেতেই হবে।


আমার একবন্ধু (বড় আপা) ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছেন দুই বছর ধরে। গত মাসে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে। স্কুল খোঁজা, অফিস, আড্ডা দরকারি ও অদরকারি শত কাজের মাঝেও দিনে অন্তত একবার তাকে দেখতে যেতে হয়। মানুষটা মৃত্যূর জন্য অধীর হয়ে অপেক্ষা করছেন। আপার মোবাইল ফোন থেকে কল আসলে আমি রিসিভ করি না। প্রায় ভয় হয়। আপাও ঘটনাটা বুঝে ফেলেছেন। তাই উনি আমাকে এখন ফোন না দিয়ে এসএমএস করেন। শোভন স্কুল কি পেলি? গত এগারোদিনে ১৮টি এসএমএস দিলেন। একই শব্দ, একই বাক্য কাট এন্ড পেস্ট । শোভন স্কুল কি পেলি? কিন্তু এই প্রশ্নের জবাব যাদের কাছে আছে, তারা আমাকে দেয় না। তাই আমিও আপাকে রিপ্লাই দিতে পারি না।


আমরা বিশ্বাস করি ইট-পাথরের এই শহরের সবগুলো মানুষের হৃদয় এখনও পাথর হয়ে যায়নি। এই হাজারো সীমাবদ্ধতার মাঝেও আমরা একটা স্কুল পাব। কারো দয়া কিংবা করুনায় নয়। সীমা তার সাংবিধানিক অধিকার, মানবিক অধিকার বলে মাথা উচুঁ করে স্কুলে যাবে। সীমার পরশে আমাদের সমাজ প্রতিবন্ধী মানসিকতা থেকে মুক্তি পাবে।


বি :দ্র : সীমা এবং মীরাকে (সীমার মা) এসিড নিক্ষেপের অপরাধে নিম্ন আদালত যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত মানুষগুলো উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে ভাল আছে।

Monday, March 21, 2011

বাবা অসম্ভব মনে পড়ে, প্রচন্ড মনে পড়ে তোমাকে। যতই রাত হোক, ভোর হোক, দেরি হোক, তুমি আসো বাবা।

এটা সময় ছিল ঈদ মানে আমার বাবার জন্য অপেক্ষা করা। সব বন্ধুদের মাঝে আমার বাবাই ঢাকা থাকতেন। পুরো পরিবার আমরা অপেক্ষায় থাকতাম বাবা আসবে।
বাবা বাড়িতে আসার উপর নির্ভর করত আমাদের ঈদ আর ঈদের নতুন কাপড়। আর তাই বাবার বাড়িতে আসাটাই ছিল আমাদের ঈদ।র্

প্রতিবারই বাবা বড্ড দেরি করে আসতেন। কখনো আসতেন গভীর রাতে, কখনো ঈদের দিন ভোরে। এমনও হয়েছে সারারাত অপেক্ষা করে আমি নতুন কাপড়ের জন্য কান্নাকাটি করে ঘুমিয়ে পড়েছি। কোন উপায় না দেখে রাতেই মা গত ঈদের পাঞ্জাবি ইস্ত্রি করে রেখেছেন। যেন সকালে ঐ পাঞ্জাবি পড়ে নামাজ পড়তে যেতে পারি।

বাসা থেকে কয়েকশ গজ দূরে আমার স্কুল ছিল। স্কুলের তিনতলার ছাদ থেকে রেলগাড়ির আসা যাওয়া দেখা যেত। আমার ছাদের ওঠা নিয়ে ভয়ানক ভয় কাজ করত।
আমি কখনেই ছাদে ওঠতাম না। কিন্তু ঈদের দুই তিন আগ থেকে প্রতিদিন আমি বিকেলে আমার সকল ভয়কে জয় করে ছাদে উঠতাম আর রেল গাড়ি দেখতাম।

গোধূলি নামের একটা ট্রেন ছিল। ঠিক গোধূলি বেলায় ট্রেনটা আমার শহরে এসে থামতো। ঐ ট্রেনটা ঘিরে শুধু আমার না । পুরো এলাকার অনেকেরই উৎকন্ঠা থাকত।
ঢাকা থেকে ঈদের কয়েকদিন আগ থেকে প্রতিদিনই কেউ না কেউ আসত ঐ ট্রেনটা চেপে। ট্রেনটা আসলে আমরা সবাই ছাদ থেকে নেমে বড় রাস্তায় গিয়ে অপেক্ষা করতাম ঢাকা থেকে আসা অতিথিদের জন্য।

অতিথিদের রিকসার পিছনে পিছনে একেবারে বাড়ি পযন্ত পৌছে দিয়ে আসতাম। আমার বাবার কখনো ঈদের আগে ঐ ট্রেনে এসেছিলেন বলে মনে করতে পারছি না। কিন্তু আমি প্রতিবারই অন্যবন্ধুদের সাথে বড় রাস্তায় অপেক্ষা করেছি বাবার জন্য।

বাবা হয়ত বড্ড ব্যস্ত ছিলেন কিংবা এত বড় একটা সংসারের প্রয়োজনীয় ঈদের সকল সামগ্রীসহ আসাটা তার কঠিন হয়ে পড়ত।
বাবার সেই কষ্ট, সামর্থ্য বুঝার কখনোই চেষ্টা করিনি ।

বরং বড্ড রাগ হত বাবার উপর। কত প্রশ্নই না করেছি মাকে। সারাদেশের মানুষ ঈদে বাড়িতে আসে আমার বাবার কি কাজ? কত কাজ? কিসের এত ব্যস্ততা তার?

এমনও ঈদ এসেছে জীবনে সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি, বাবা আমার জন্য নতুন প্যান্ট আর শার্ট নিয়ে হাজির।

গতরাতে জমানো হাজারো রাগ, অভিমান, অভিযোগ, কান্না ভুলে পকেটে বাবার দেওয়া নতুন চকচকে টাকা নিয়ে। বাবার হাত ধরে গিয়েছি নামাজ পড়তে। আসার সময় রঙ্গিন বেলুন হাতে বাড়ি ফিরেছি।

এখনো শহরে গোধূলিবেলায় গোধূলি নামের ট্রেনটা এসে থামে, সময়ের আগে জোড়ায় জোড়ায় নতুন কাপড় আসে আমার জন্য। কাপড়ের জন্য আমার আর অপেক্ষা করতে হয় না। শুধু অপেক্ষা আমার বাবার জন্য, আমার বাবা আসে না।

১৫টি ঈদ পার করলাম বাবাকে ছাড়া। ১৬ তম ঈদের প্রস্তুতি চলেছে।

চারিদিকে নতুন কাপড়, চকচকে টাকা, রঙ্গিন বেলুনের সুবাস, গরু-খাসি কেনার প্রস্তুতি। এই সকল প্রস্তুতির মাঝে বিশাল শূণ্যতা বাবাকে নিয়ে।

বাবা অসম্ভব মনে পড়ে, প্রচন্ড মনে পড়ে বাবা তোমাকে।
যতই রাত হোক, ভোর হোক, দেরি হোক, তুমি আসো বাবা।
আবারও আমাদের ঈদ হয়ে, আমার ঈদ হয়ে আসো তুমি।

Sunday, July 25, 2010

কেন পালাই শহর থেকে শহুরে জীবন থেকে।



শহুরে এই যান্ত্রিক জীবন আমি প্রায়ই বড্ড ক্লান্ত হয়ে পড়িসত্য বলতে প্রতি মুহূতেই সুযোগ খুঁজি এই শহর থেকে পালাতেকিছু করতে চাই, কিছু হবে আর অসংখ্য স্বপ্নপূরণ করার একটা পথ বের করতে চাই এই শহর থেকেআর তাই ইচ্ছার বিরুদ্ধে রোবোটিক্স জীবন যাপন করতে হয় এ শহরে

জীবনের শুরুটা আমার ছোট এক শহরেশহরের প্রায় প্রতিটি মানুষই সবাই সবাইকে চিনেএরকম একটা প্রাণবন্ত শহর ছেড়ে নিতান্ত বাধ্য হয়েই আমি আপনাদের এই শহুরে জীবনের স্বাদ নিতে আসি

তবে বার বার মুক্তি পাবার তাগিদে একটা উপায় আমি খুঁজে পাইএকদিন এক সন্ধ্যায় একটা স্লিপিং ব্যাগ কিনি আর গিফট পাওয়া ছোট একটা তাবু সঙ্গে নিয়ে বের হয়ে পড়িএ জীবনের অন্যরকম স্বাদ

আর এখন যখনি একটু সময় পাই, আমি ছুটে যাইমুক্তি পাবার ইচ্ছা"য় দেশের বিভিন্ন গ্রামে-গঞ্জেআমার ব্যাগ, তাবু আর আমি এই তিনের সমন্বয়ে সত্যি প্রায়ই এক অবিশ্বাস রকম মুক্তির স্বাদ পাই

এত কিছুর মাঝেও স্বপ্ন দেখি সুযোগ পেলে আমি আবার ফিরে যাব আমার শহরেআপনার মত এত গুছিয়ে আমার ক্লান্তির কথা কাউ বলতে পারি না, বলতে পারি না আমার স্বপ্ন কিংবা হতাশার কথাতারপরও চেষ্টা করলাম " এই যান্ত্রিক শহর থেকে নিজেকে খানিকটা মুক্তির দেওয়ার পথটা জানানোর

সময় থাকলে একবার ঘর থেকে পালাতে পারেন এ অন্যরকম এক স্বাদতবে স্থায়ী অভ্যাস যেন না হয়
শুভ কামনা

Tuesday, April 28, 2009

আমার শিশু, আমার ঘরের জীবন্ত এক আসবাব।

শিশুদের যথাযথ শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য নিয়মিত খেলাধূলা, বইপড়া, সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা খুবই জরুরী। এগুলো সাধারণতঃ ছেলে বেলা থেকেই গড়ে ওঠে। অথচ শহরের শিশুদের এসব করার সুযোগ অপর্যাপ্ত। ইট, কাঠ পাথরের জঞ্জালে চাপা পড়ে যাচ্ছে তাদের স্বাভাবিক বিকাশ। শহরের শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত খেলার মাঠ নেই এবং বিকল্প খেলার স্থান তৈরির কোন উদ্যোগও খুবই সামান্য। বরং শিশুদের অনেক খেলার যায়গায় উঠে যাচ্ছে দালান, দলীয় কার্যলয়, আবর্জনার স্তুপ জমছে বা গাড়ি পার্কিং হচ্ছে। কার জন্য কিসের প্রয়োজনে আমরা সম্পদের পাহাড় গড়ছি? 
আমার ঘরে টিভির সামনে বসে থাকা আমার শিশুটিকে দেখলে আজ আমার অন্য আট দশটা আসবাবের মতই মনে হয়। কম্পিউটার গেমস কিংবা টিভির নামক যন্ত্রের কাছে সে তার শৈশব সপে দিয়েছে নিতান্ত অপারগ হয়ে। শহরের কোন পরিকল্পনায় তাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি। রাজউক সকল বাড়িতে গাড়ির জন্য পার্কিং প্লেস বাধ্যতামূলক করেছে। কিন্তু শিশু জন্য খেলার জায়গা কিংবা বেচে থাকার সবচেয়ে প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের উৎস গাছের জন্য এক ইঞ্চি জায়গায় কথা নেই। শিশু, যার জন্য বাড়ি আর প্রয়োজনীয় গাছ এই দুটিই পরিকল্পনার বাইরে। 
 
একটা খাঁচার মত ভ্যানে চেপে স্কুল, স্কুলের গন্ডি থেকে আবার সেই খাঁচায় চেপে বাসা নামের আরেকটি খাঁচায় ফেরা। আর বাসার অবসরের সঙ্গী টেলিভিশন। এই জড় বস্তুটির সাথেই গড়ে উঠছে তাদের সখ্যতা। অন্যদের সাথে খেলাধূলা, মেলামেশা বা সামাজিক সম্পর্কে জড়ানো এমনকি তাদের যথাযথ শারীরিক ও মানসিক বিকাশের যে সুযোগ রয়েছে তা খুবই সামান্য। এমন একটা সময় ছিল যখন গ্রাম শহর সকল স্থানের শিশুর খেলাধূলা, ছুটোছুটিসহ বিনোদনের পর্যাপ্ত সুযোগ ছিল। কিন্তু বর্তমানে শহরাঞ্চলে নানা কারণে শিশুদের এই সুযোগ সীমিত হয়ে এসেছে। আজকাল কবিতা, গান, লেখা-লেখি, আলোচনা বা আড্ডাতে প্রায়ই একথা উঠে আসছে। অনেকেই নিজের দুরন্ত শৈশবের স্মৃতি রোমন্থন করে পুলকিত হই। পাশাপাশি শহরের শিশুদের বিনোদনের সুযোগের অপর্যাপ্ততার জন্য হতাশা প্রকাশ করি।

শিশুদের যথাযথ বিকাশের অনুকূল অবস্থা তৈরীর উদ্যোগ খুব সামান্য বরং শিশুটি বাইরে না গিয়ে ঘরে বসে টেলিভিশন দেখে সময় কাটাচ্ছে এতে অনেকেই স্বস্তি বোধ করেন। কিন্তু শিশুর শারীরিক ও মানসিক সু-স্বাস্থ্যের জন্য, তার সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার জন্য সকলের উচিৎ একটু অন্যভাবে চিন্তা করা।

দেশের ছোট শহরগুলোতে এখনো শিশুদের খেলার উপযোগী পরিবেশ থাকলেও বড় শহরগুলোতে এ ব্যবস্থা অপ্রতুল। দেশের অধিকাংশ বড় শহরগুলোতে শিশুদের যথাযথ শারিরিক ও মানসিক বিকাশের উপযোগী পরিবেশ নেই। তাই ক্রমেই সন্তানকে ঘরের মধ্যে আবদ্ধ করার প্রচ্ছন্ন একটা চেষ্টা অধিকাংশ অবিভাবকের। ফলে শিশুরা আবদ্ধ হয়ে পড়ছে টেলিভিশনের সামনে গন্ডিবদ্ধ জীবনে। যা একটি শিশুর স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্থ করছে। তার বিকাশের পথকে সংকুচিত করছে।
ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের গবেষণায় দেখা যায়, ঢাকা শহরে ৩৭% শিশু ঘরের মধ্যে খেলা-ধূলা করে এবং ২৯% শিশু কোন খেলা-ধুলা করে না। ব্যপারটা অবশ্যই দুঃখজনক যে, ৩৭% শিশু ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে খেলে আর ২৯% শিশু কোন খেলাধূলাই করে না। এই শিশুদের বিনোদনের একমাত্র সংগী টেলিভিশন। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে যে প্রায় সকল শিশুর (৯৮%) বাসায় টেলিভিশন আছে এবং ১৯% টেলিভিশন দেখার ব্যবস্থা শিশুর নিজের ঘরেই। ১৬% শিশু গড়ে প্রতিদিন ১ ঘন্টা, ৩৭% ২ ঘন্টা, ২৯% ৩ ঘন্টা, ১৩% ৪ ঘন্টা এবং ৫% শিশু প্রতিদিন ৪ ঘন্টার ও অধিক সময় টেলিভিশন দেখে। এদের মধ্যে ৭০% শিশু মনে করে টেলিভিশনে দেখা প্রোগ্রাম তাদের পড়ালেখায় কোন কাজেই আসেনা।
খেলাধূলার সুযোগ টেলিভিশন দেখা বিষয়ে জানার পাশাপাশি শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করা হয়েছে। উপাত্ত শিশুদের মধ্যে ১৮% শিশু প্রচুর বই পড়ে এবং ১১% শিশু পাঠ্য পুস্তকের বাইরে কোন বই পড়ে না। ২২% শিশুর বাড়িতে তার পড়ার উপযোগী ১ থেকে ১০ টি বই রয়েছে ৪০ এর উপরে বই আছে ২৮% শিশুর বাড়িতে এবং ৩% শিশুর বাড়িতে তার পড়ার উপযোগী কোন বই নেই। এ সকল বইয়ের মধ্যে প্রায় ১০% শিশু কোন বই পড়েনি। শিশুরা যে সকল বই পড়ে তার ৬৩% এর উৎস বাবা-মা এবং নিজে বই কেনে ১৫ % শিশু। 

অভিভাবকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে দৈনিক গড়ে ৪ ঘন্টা বা তারো বেশি সময় টেলিভিশন দেখে ২৩% শিশু এবং টেলিভিশন দেখেনা মাত্র ০.২%।
সার্বিক গবেষণায় ঢাকা মহানগরীর বাস্তব অবস্থা ফুটে উঠেছে শিশুদের খেলাধূলার পরিবেশ ও সুযোগের অপ্রতুলতা, টেলিভিশন দেখে তাদের সময় কাটানো এবং বই পড়ার সুযোগ ও আগ্রহের অভাব আমাদের শিশুদের শারিরীক মানসিকভাবে সুস্থ্য হয়ে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা। এ সকল প্রতিবন্ধকতা দুর করে কিভাবে তাদের উপযোগী করে ঢাকা মহানগরীকে গড়ে তোলা যায় তা আমাদের ভাবতে হবে।

মানুষকে বিভিন্ন নাগরিক সুযোগ সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে গড়ে উঠেছে নগর। উন্নত কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি সুযোগ-সুবিধার লাভের আশায় মানুষ নগরমুখী। বর্তমানে উন্নত জীবন-জীবিকার আকর্ষণে নগরমুখী এই মানুষগুলো শহরে এসে ক্রমশ যান্ত্রিক হয়ে পড়ছে। ব্যস্ততার মাঝে মাঝে মানুষের বিনোদনের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে সুস্থ নির্মল বিনোদনের ক্ষেত্র তৈরীর উদ্যোগ নগরগুলোতে নানা কারণে উপেক্ষিত হচ্ছে। শিশুদের বেড়ে ওঠার জন্য একটা সুন্দর পরিবেশ আমাদের সবার কাম্য। আমাদের সকল কাজ, সকল চিন্তার প্রধান উপাদান তার শিশু সন্তান। প্রধানত শিশু সন্তানকে ঘিরেই আমাদের প্রতিদিনের স্বপ্ন, সাধ, সংগ্রাম, শ্রম ও আকাংখ্যা। তাই তাদের সুস্থ্যভাবে বেড়ে ওঠা, যথাযথ শারিরীক ও মানসিক বিকাশের বিষয় টি আমাদের গুরুত্বসহকারে ভাবতে হবে। শিশু যেন আনন্দপূর্ণ শৈশবের মধ্যদিয়ে শারিরিক ও মানসিকভাবে বিকশিত হয় তার জন্য সকলকেই কাজ করতে হবে।

Saturday, April 11, 2009

মুক্তি হোক গৃহবন্দী শিশুদের। যারা চার দেওয়ালে মাঝে একান্ত অপারগ হয়েই কাটাচ্ছে শৈশব ভিডিও গেমস, টেলিভিশন নামক যন্ত্রের সাথে।

গোটা দুনিয়াই বদলে গেছে এবং যাচ্ছে। বদলে যাচ্ছে বস্তুর প্রকৃতি ও জীবের জীবনধারা, এ বদলের কারণ পুঁজির বিকাশ , অসম পুঁজির গতিময়তা এবং দৌরাত্ম। পুজির প্রতিযোগিতা বাড়ছে, বাড়ছে পণ্য দস্যুতা । মানুষকে পণ্য বানাচ্ছে সাম্রাজ্যবাদ,সে সূত্রে বদলে যাচ্ছে সামাজিক ও পারিবারিক কাঠামো। পরিবর্তন ঘটছে নগরজীবনে, জীবনযাপনে। আরবান লিভিং কনসেপ্ট এর অন্তরালে আমরা অস্থির এবং অসুস্থ জীবনধারাকে আমরা বেছে নিচ্ছি। আমরা পৃথিবীতে থেকেও মাটি থেকে বিছিন্ন। আমরা মাটির গন্ধ পাই না, পাই না মাটির ছোঁয়া। পাশের ফ্ল্যাটের মানুষগুলোকে চিনি না, তারা যেন অন্য কোন গ্রহের। ক্রমেই আমরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ছি ইট-রড-সিমেন্টের চার দেয়ালের স্কয়ারফিটের জীবন ধারার মাঝে। আজ পরিবার ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে আমি আর তুমিতে এসে দাঁড়িয়েছে। স্কয়ারফিটের জীবনই যেন আজকের নাগরিক বাস্তবতা।

"কি ছোবেন নাকি আকাশটাকে" শিরোনাম নিয়ে আমার সবাই আকাশ ছুঁতে ব্যস্ত। আমরা আকাশ ছুঁতে চাই। আকাশ ছোঁয়া এ সংস্কৃতির যুগে আমার একবারও লক্ষ্য করতে চাই না- আমি যে বাড়িটি করছি কিংবা কিনছি সে বাড়িটির পাশে কতটুকু জায়গা নির্ধারিত আছে জীবনধারণের অপরিহার্য গাছের জন্য। আমরা চাই নির্মল বাতাস। অথচ আমাদের আশেপাশের গড়ে উঠা এ আকাশ ছোঁয়া বিল্ডিংগুলোর চারপাশে বিন্দুমাত্র জায়গা নেই যেখানে নিম, হিজল, আম কিংবা একটা সরু সুপারি গাছ বেড়ে উঠবে। এখানেই আমরা একটি ফ্ল্যাট বা প্ল্লট কিনে আগামী প্রজন্মের জন্য নিশ্চিন্ত হচ্ছি। কিন্তু সে ফ্ল্যাট বা প্লট কী আমাদের কিংবা আগামী প্রজন্মের সুস্থভাবে বসবাসের উপযোগী থাকবে?

প্রিয় ব্লগার একজন শাওনের গল্প বলি তিন তলা বাড়ির দুই রুম। আশেপাশে বড় বড় বিল্ডিং সবারই প্রতিযোগীতা আকাশটাকে ছোঁবার। তার মাঝেও নগরী গোলাপবাগ এলাকার শিশু শাওন ভাগ্যবান। বিকেলে বাড়ী সামনে গোলাপবাগ মাঠে খেলে শাওন ও তার বন্ধুরা । স্কুলের অন্য বন্ধুদের অবসর যখন কাটে টিভি দেখে কিংবা মাসের দু একটা ছুটির দিনে হয়ত একটু সুযোগ মিলে মা-বাবার হাত ধরে কিছুক্ষনের জন্য খোলা আকাশের নিচে ঘুরে বেড়ানোর। তখন বাড়ীর পাশের এই মাঠটির জন্য শাওন নিজ গর্ব বোধ করে। হাজারো গল্প এই মাঠ ঘিরে।

একদিন একদল লোক আসে নিমিষে দখল হয়ে যায় গোলাপবাগ মাঠ। ফ্লাইওভার হবে এই অজুহাতে নিমার্ণ সামগ্রী রেখে মাঠটি দখল হয়ে গেছে। এখন স্কুল থেকে ফিরে টিভি দেখে কিংবা জানালার ফাক দিয়ে এক চিলতে আকাশ দেখা ছাড়া অবসর কাটানোর মত কিছুই করার নেই। হাজার ক্লান্তি মাঝেও জানালার ফাঁকা দিয়ে আকাশের দিকে তাকালেই নিমিষেই ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। তবুও ভয় হয় একদিন হয়ত এই এক চিলতে আকাশ দেখার সুযোগটা গুড়িয়ে এখানেও গড়ে উঠবে কোম্পানীর হাইরাইজ বিল্ডিং।

কিন্তু ভেবে দেখুন আপনার আমার শৈশবের কথা। খেলার ছলে গ্রামের এ পাড়া থেকে ও পাড়া, কোথায় পড়েনি আমাদের পদচিহ্ন? অধুনিক নগরায়নের খেলার মাঠের স্বল্পতা, সময় সল্পতা, নিরাপত্তার অভাব, ব্যস্ততা প্রভৃতির কারণে শিশুদের চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দি করে রাখছি। বন্দী শিশুরা অবসর কাটানোর জন্য বেছে নিয়েছে টিভি কিংবা কম্পিউটার যন্ত্রটাকে। এ কথা সত্যি শিশুর সুষ্ঠু শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলার বিকল্প নেই ।

সীমাবদ্ধতা আছে, আছে সাধ আর সামর্থ্যের মাঝে ব্যবধান কিন্তু হাতাশ হলে চলবে না কিছু একটা করতে হবে। আর কিছু একটা করার আগ্রহ নিয়ে ২০০৫ সালে ফ্ল্যাট বন্দী এই শিশুদের কৈশরকে একটু আনন্দময় তোলার লক্ষ্যে স্থানীয় অধিবাসীরা ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের সহায়তায় শিশুদের জন্য সপ্তাহে দুদিন আয়োজন করেছে বিনা খরচে সাইকেল প্রশিক্ষণ কর্মসূচী। হাজার সীমাবদ্ধতার মাঝেও সপ্তাহের দু'দিন বৃহস্পতি ও শনিবার ধানমন্ডি ৪/এ সড়ক শুধু শিশুদের জন্য। বিকাল ৪টা থেকে ৬টা ধানমন্ডি ৪/এ সড়ক যেন এক শিশু রাজ্য। দুপুর তিনটার পর থেকে শিশুদের জমায়েত শুরু হয়। ঐ নিদিষ্ট সময় রাস্তায় কেউ জোরে গাড়ি চালায় না। পুরো রাস্তাটাই থাকে শিশুদের নিয়ন্ত্রণে। খুব প্রয়োজন না পড়লে কেউ তেমন একটা গাড়ি রাস্তায় বের করে না। ঐ দু ঘন্টা সময়। তামজিদ বার বার পড়ে যাচ্ছে তারপরও এক পা দুপা করে এগিয়ে গিয়ে সাইকেলে উঠে। সাইকেলটাকে নিয়ন্ত্রনে আনার আবার প্রচেষ্টা। আজকের ভারসাম্যহীন এই সাইকেলটাকে হয়ত আগামীকালই সে নিয়ন্ত্রনে আনবে। জয় হবে তার প্রচেষ্টার, যা তার আত্নবিশ্বাস বৃদ্ধির জন্য সহায়ক। তামজিদের মত অনেক শিশুই সাপ্তাহিক বিনোদনের একটি বিশেষ অংশে পরিণত হয়েছে এই সাইকেল প্রশিক্ষণ।

শিশুদের পাশাপাশি অভিভাবকরাও তাদের সাথে সময় কাটান। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সাইকেল প্রশিক্ষণ হয়ে উঠেছে অভিভাবক-শিশুদের মিলনমেলায়। ঢাকা শহরে একই বিল্ডিং-এ থেকেও পাশের ফ্ল্যাটের মানুষরাই থাকে অচেনা। কিন্তু ধানমন্ডি ৪/এ এলাকার পরিবেশ ব্যতিক্রম। এখানকার বেশিভাগ শিশুই তাদের পাশের ফ্ল্যাটই নয় আশেপাশে অন্য বিল্ডিংয়ের শিশুদেরও চিনে। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে শিশুরা পরষ্পরের মধ্যে সহজে গড়ে নিয়েছে স্বভাবজাত বন্ধুত্বের সর্ম্পক।

আপনিও ঘুরে আসতে পারেন ছেলেমেয়ে নিয়ে ধানমন্ডি লেক ঘেষা এই শিশু রাজ্যে। আপনার শিশুর সাইকেল চালানোর শেখার প্রচেষ্টা আপনাকে মুগ্ধ করবে। হয়তবা আবারও ফিরিয়ে নিয়ে যাবে আপনার সেই র্দুদান্ত শৈশবের স্মৃতিরগুলোর কাছে । সাইকেল চালানো শেখার জন্য এখানে কোন টাকা দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। এক কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি ও ফরম পূরণ করেই সদস্য হওয়া যায়। নিজের সাইকেল না থাকলেও সমস্যা নেই, আয়োজকরাই ব্যবস্থা করে দেন সাইকেলের। প্রশিক্ষনার্থীদের সহয়তার জন্য রয়েছে কিশোর-তরুনের সমন্বয়ে একদল সেচ্ছাসেবক বিশাল কর্মবাহিনী। এছাড়াও বিভিন্ন বয়সী শিশুর জন্য রয়েছে বিভিন্ন রকমের সাইকেল। যাদের নিজস্ব সাইকেল আছে কিন্তু খোলা জায়গার স্বল্পতার জন্য সাইকেল চালাতে পারছে না। তারাও আসতে পারে এখানে সাইকেল নিয়ে। জয় হোক তাদের, যারা এই অপরিকল্পিত নগরে নিজেদের প্রচেষ্টায় শিশুদের বিনোদনের জন্য বিকল্প আয়োজন নিয়েছেন। মুক্তি হোক গৃহবন্দী শিশুদের যারা চার দেওয়ালে মাঝে একান্ত অপারগ হয়েই কাটাচ্ছে শৈশব।

আমাদের স্বপ্ন হোক কদম, হিজল কিংবা কোন বুনো ফুলের গন্ধে আবারও সুবাসিত হবে ঢাকার বাতাস। আকাশ ছোঁয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা নয়, স্বপ্ন হোক একটা ঘুঘু বাসা বুনতে খড় কুটা সংগ্রহে ব্যস্ত হবে, এই নগরীর অফিস পাড়া ব্যস্ত মতিঝিলে। আবারও মুখরিত হবে ঢাকার আকাশ হাজারো নাম জানা অজানা পাখির কলতানে। ইট, সিমেন্টের শহরে রোবটের মত নয়, আমরা চাই চারাপাশের সবুজ বৃক্ষরাজি নিয়ে প্রকৃতির বুকে আমাদের নব প্রজন্ম বেড়ে উঠবে।