শহুরে যান্ত্রিক জীবন প্রায়ই বড্ড ক্লান্ত হয়ে পড়ি। সত্য বলতে প্রতি মুহূতেই সুযোগ খুঁজি শহর থেকে পালাতে। কিছু করতে চাই । তাই ইচ্ছার বিরুদ্ধে রোবোটিক জীবন যাপন করতে হয় এ শহরে । জীবনের শুরুটা আমার ছোট এক শহরে। প্রাণবন্ত শহর ছেড়ে নিতান্ত বাধ্য হয়েই এই শহুরে জীবনের স্বাদ নিতে আসি। সত্যিই আবার ফিরে যাব আমার শহরে। আমি গুছিয়ে আমার ক্লান্তির কথা কাউকে বলতে পারি না, বলতে পারি না আমার স্বপ্ন কিংবা হতাশার কথা। তারপরও চেষ্টা করলাম " এই যান্ত্রিক শহর থেকে নিজেকে মুক্তির দেওয়ার পথটা জানানোর।
Saturday, May 7, 2022
পলাশের খিচুড়ি। আমাদের অর্থনীতি
পলাশের খিচুড়ি। আমাদের অর্থনীতি
ধোয়াঁ ওড়ানো গরম খিচুড়ি, আলু ভর্তা ও পিয়াজ-মরিচ ভর্তাসহ পুরো প্যাকেজ মাত্র বিশ টাকা। সাথে ডিম ভাজি বা ডিম ভুনা নিলে দাম হয় সবসহ ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা । ফুটপাতের রঙ্গিন ছাতার নিচে বসে পলাশের ভুনা খিচুড়ির স্বাদ যতটা ভাল লেগেছে। তারচেয়ে ভাল লেগেছে দুনিয়ার তাবৎ অর্থনীতির সংজ্ঞাকে পাশ কাটিয়ে দ্রবমূল্যের বাজারে গত ৪ বছরে খিচুড়ির দাম স্থিতিশীল রাখার সংজ্ঞা।
গেল ৪ বছরে দুনিয়াব্যাপী চাল,ডাল,তেল,নুন দাম বেড়েছে বহুগুণ। কিন্তু যে ডাল, চাল,তেল, নুন মিলিয়ে যে খিচুড়ি হয়, পলাশের খিচুড়ির দাম বাড়েনি এক টাকাও। অর্থনীতির মারপ্যাচ ডিঙ্গিয়ে পলাশ কি করে সম্ভব করেছেন?
ধানমন্ডি ২৭ থকে একটু এগিয়ে মোহাম্মদপুর যাবার রাস্তায় পশ্চিম পাশে র্যাবের অফিসের সামনে পলাশের সাথে কথা হল।
আমি: খিচুড়ির চাহিদা কেমন?
পলাশ: বেচা-কেনা ভালই, ১০০ থেকে ১২০ প্লেট বিক্রি হয়।
আমি: খিচুড়ি সাথে দুই পদের ভর্তা, ২০ টাকায় পুষা ক্যামনে?
পলাশ: পুষায় লাভ একটু কম হয় কিন্তু লস নাই।
আমি: দিনে থাকে কত, মাস্তান পুলিশকে টাকা পয়সা দিতে হয়?
পলাশ : নাহ কোন ঝামেলা নাই এখানে।
আমি: এত কম লাভে দিন চলে?
পলাশ: এখন সময় খারাপ মানুষের কাছে টাকা পয়সা নেই। গরীব মানুষ আমার কাছে আসে। দাম বাড়ালে মানুষ খাবে কি?
মামুন পেশায় খেলোয়াড়। প্রশিক্ষণের জন্য থাকেন মোহাম্মদপুরে। হাজার হাজার কোটি টাকার অর্থনীতির ঢাকায় ২০ টাকায় দিন পার করার চেষ্টায় আছেন মামুন। প্রতিদিন পলাশের হোটেলের খাবার খেতে আসেন। একটু বেলা করে খেলে দুপুরের খাবারও হয়ে যায় বিশ টাকায়।
মামুনের পাশে বসে খাচ্ছেন আর এক মামুন পেশায় আটো রিক্সা (সিএনজি) চালক। থাকেন আগারগাঁও। সকালের নাস্তায় তার বরাদ্দ ৩৫ টাকা। জনগণের সরকার কিভাবে কোম্পানির মুনাফা রক্ষার কান্ডারি হতে পারে তা নিয়ে ঝাল মিটালেন। ব্যবসায়িরা হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে যায় নানা ফাঁদে ফেলে। নানা ভাবে দাম বাড়ায় সরকার দেখে না।
রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ ব্যবসায়ীদের হাতে গেলে সবার আগে মুনাফা। মুনাফাই যেন সব। মানুষ বাঁচার অক্সিজেনের দামও তাড়া হাজার গুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল। চাহিদা সাথে জোগান কম হলে দাম বাড়ে, মূল্যস্ফীতির জন্য দাম বাড়ছে, আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই, রমজান-ঈদ-পূজা, ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ, করোনা কি যুক্তিতে দাম বাড়েনি পণ্যের। এত এত দাম বাড়ার অর্থনীতির তত্ত্বের মাঝে পলাশের খিচুড়ির অর্থনীতির তত্ত্বটা জানা প্রয়োজন। যা ৪ বছরে খিচুড়ি দাম বাড়াতে দেয়নি।
পলাশের খিচুড়ির অর্থনীতি আমাদের সাহস দেখায় বিকল্প অর্থনীতি সম্ভব। দূর্দিনে মুনাফা কমিয়ে ক্রেতাকে টিকিয়ে রাখার পলাশের ব্যবসায়ী নীতি যদি আমাদের বড় বড় কোম্পানিগুলো চর্চ্চা করে। তবে আমরা অন্য এক বাংলাদেশ পাব।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হাজার কোটি টাকার বিল গেট্স পড়ানোর সাথে, একজন পলাশকেও পড়ানো প্রয়োজন। যেন শিক্ষার্থীরা জানতে বিকল্প মানবিক অর্থনীতি ভাবনা অসম্ভব নয়। ক্রেতাকে জিম্মি করে মুনাফা নয়, ক্রেতাকে টিকিয়ে রেখে যে ব্যবসা পলাশ চর্চ্চা করে তাই উদাহরণ হোক আগামীর তরুন ব্যবসায়ীদের।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment