Tuesday, May 2, 2017

ভিন্ন পেশার এই মানুষগুলোকে একটা বৃত্তে আবদ্ধ করেছে যান্ত্রিক সাইকেল স্কুটি।

ও রে হাওয়ার উপর চলে গাড়ি, লাগে না পেট্রোল ডিজেল, মানুষ একটা দুই চাকার সাইকেল। হ্যাঁ মানুষ নামের সাইকেলে পেট্রোল ডিজেল না লাগলেও খুকুমনি, নিলুফা ইয়াসমিন শিলা, সোনিয়া লায়লা, মাহিনুর আক্তার, সাকিয়া হক, মানশি সাহা, মুক্তা, সুমা, নিপার দুই চাকার যান্ত্রিক সাইকেল স্কুটিতে পেট্রোল লাগে।


স্বপ্নচারিনী সদস্যদের আড্ডাবাজি, সংসদ চত্ত্বর

ঢাকার জীবনযাত্রায় একটা যান্ত্রিক সাইকেল নারীর জীবনে কতটা গতি আর স্বাধীনতা এনে দিয়েছে তারই গল্প শুনছিলাম সংসদ ভবন চত্ত্বরে। ফেইসবুকে স্বপ্নচারিনী নামের নারী স্কুটি চালকদের একটা ক্লোজগ্রুপ আছে তাদের। পেশায় তারা কেউ উন্নয়নকর্মী, কেউ হিসাবরক্ষক, কেউ ব্যবস্থাপক, কেউবা শখের ভ্রমণকারী। ভিন্ন পেশায় নিয়োজিত তারা, শহরের ভিন্ন ভিন্ন প্রান্তে তাদের অবস্থান। কাজের প্রয়োজনে ছুটতে হয় তাদের শহরে এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। আর এই ছুটাছুটিকে সহজ করে দিয়েছে স্কুটি।
গণ পরিবহনে রাষ্ট্র নয় সিট বরাদ্দ দিয়ে তার দায় দায়িত্ব শেষ করে ফেলেছে। পিক আওয়ারে তো নয় সিটের পর আর কোন নারীকে গাড়িতে তোলা হয় না সিট নেই, সিট নেই বলে। পিক আওয়ারে ঢাকায় নারীর যাত্রায় যে কতটা কষ্টকর তা শুধুই ভোক্তভোগী নারীরা জানে।
তবে স্কুটি চালক নারীরা এখন ঢাকায় চলাচলে অনেকটাই স্বাধীন। অফিস থেকে ফেরা পথে এখন আর বাসের ৯সিটের পিছনে ছুটতে হয় না। বাসের সিট না থাকলেও তাদের পিছনের সিটে সহকর্মীরা স্থান পায়।



নিলুফা ইয়াসমিন শিলা, কাজের প্রয়োজনের আর ঘুরাঘুরি।ঢাকায় স্কুটির বিকল্প স্কুটিই।

নিলুফা ইয়াসমিন শিলা, Nilufa Yesmin Shila কর্মরত আছেন, আগোরা’য় পাশের দেশের তুলনায় স্কুটির দামটা অনেক বেশি। রাস্তায় কোন নারী স্কুটি চালক দেখলেই আমাদের বন্ধুত্ব হয়ে যায়। এভাবেই আমাদের মাঝে নেটওর্য়াক তৈরি হচ্ছে। শহরে এখন নারী স্কুটি চালকের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। যাতায়াতের ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে যাদের একটু সামর্থ্য আছে তারাই স্কুটি কিনছে।
যারা একটু দক্ষ তাদের দায় দায়িত্ব যেন একটু বেশি। কারো স্কুটি বিষয়ক কোন সমস্যা হলে ফোন আসে। যেমন খুকুমনি Khuku Moni দুই চাকার যান্ত্রিক সাইকেল চালানোর তার অভিজ্ঞতা প্রায় ১৫ বছর। আর তাই তার কাছে ফোন আসে সবচেয়ে বেশি। নতুনরা ফোন দিয়ে আপা গাড়ি র্স্টাট হচ্ছে না, ইঞ্জিন গরম হয়ে যাচ্ছে বেশি, ইঞ্চিন ওয়েল কত কিলোমিটার চলার পর পরিবর্তন করব, কোথায় সার্ভিসিংয়ের জন্য ভাল। অভিজ্ঞতা থেকে হাসিমুখে খুকুমনি উত্তর দিয়ে যান।



খুকুমনি প্রায় ১৫ বছর যাবৎ ঢাকায় রাস্তায় যান্ত্রিক সাইকেল চালান তিনি

খুকুমনি বলেন, আমি যখন স্কুটি কিনেছি তখন ঢাকায় গুটা ১০ নারী স্কুটি চালক ছিল না। ঐ সময় রাস্তায় সবাই অবাক হয়ে দেখত। তখন গাড়ির কোন সমস্যা হলে কারো সাথে আলোচনা করব তার ব্যবস্থা ছিল না। এখন তো আমাদের বিশাল নেটওর্য়াক। নিমিষেই সবকিছুর উত্তর পাওয়া যায়।
আমরা সুযোগ পেলেই ঘুরতে বের হয়ে পড়ি। আমাদেরও কাছে ঘুরাঘুরি মানেই দিন তিনেকের জন্য সিলেট,চট্টগ্রাম, খুলনা নয়। আমরা ঢাকায় কিংবা ঢাকার আশে পাশে এলাকাগুলোতে ঘুরি ফিরি। কয়েকদিন আগে ঘুরে আসলাম মৈনটঘাট। সকাল নয়টায় রওনা হয়ে মৈনটঘাট ঘুরে চলে আসলাম দুপুর তিনটায়। সকাল ৯ টায় আমরা ১০ জনের দল রওনা হলাম। তারপর সারাদিন ঘুরে ফিরে সন্ধ্যায় বাসায় ফেরা।
Mahinur Aktar মাহিনুর আক্তার নিপা ভ্রমণ তার শখ নেশা যাই বলা হোক না কেন কোন আপত্তি নেই। নিজের পরিচয় ভ্রমনকারী হিসেবে দিতেই বেশি পছন্দ করেন। দেহকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য খাদ্য দরকার হয়। কিন্তু মনের? মনকে তো সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। জীবন মানেই শুধুই সময় পার করা নয়। সময় তো খাচাঁয় বন্দী পশু-পাখিও পার করে। আমরা জীবন উপভোগ করতে চাই। তাই যখনই সময় পাই আমরা ছুটে যাই। আমরা ছুটে যাই জীবন উপভোগ করব বলে রুহিতপুর, জাহাঙ্গীর নগর, বিরুলিয়া, মৈনটঘাট, বৈদ্যবাজার, চুনারচর, ওয়াসপুর, পুরান ঢাকা। ঘন্টায় ৩০ থেকে ৪০ গতিতে গাড়ি চালাই আমরা কারণ এই গতিটা নিরাপদ এবং জ্বালানী সাশ্রয়ী। আমাদের দলের হেলমেট পড়া এবং ট্রাফিক আইনমানা বাধ্যতামূলক। আমরা রাস্তায় পথচারীদের সম্মান করে চলি। তাই কখনোই ফুটপাতে স্কুটিটি তুলে দেই না।
ঢাকায় এখন অনেক গ্রুপ আছে নারী স্কুটি চালকদের। এই গ্রুপগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বেশ তৎপর। নারী স্কুটি চালকদের গ্রুপগুলো বেশির ভাগ ক্লোজগ্রুপ। সপ্তাহে বা মাসে কোন কোন দিন তারা ঘুরতে বের হয়ে যায় দলবেধে। তেমনি একটি গ্রুপ ট্রাভেলেটস্ অব বাংলাদেশ। ফেইসবুকে তাদের শুধুমাত্র নারী সদস্য সংখ্যা ৮ হাজার। ২০১৮ সালে এপ্রিল মাসে ৬৪টি জেলা ভ্রমণ করবে তারা। ইতিমধ্যে নারী চোখে বাংলাদেশ নামে তারা সারাদেশ ভ্রমণের পরিকল্পনা করেছে। ঢাকার কেন্দ্রিয় শহীদ মিনার থেকে গত ৬ এপ্রিল রওনা দিয়ে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত চারজনের দল ঘুরে আসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, নরসিংদি জেলা।
কেমন ছিল সেই ভ্রমন? কথা হয়েছিল সেই দলের নারী ভ্রমণকারী নাজমুন নাহার মুক্তা ও শামছুর নাহার সুমার সাথে। একজন ইডেন কলেজে অন্যজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। আমরা শুধুই ঘুরতে চাই না। ঘুরাঘুরি ছাড়াও আমরা চাই সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বিভিন্ন সামাজিক কাজে এগিয়ে আসতে।
তাই নারী চোখে বাংলাদেশ ভ্রমণে আমরা যেখানে গিয়েছি সেখানে বিভিন্ন স্কুল-কলেজে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, নারী ক্ষমতায়, পরিচ্ছন্নতা বিয়ষক প্রচারণা চালিয়েছি। আমাদের দলের সাকিয়া হক ও মানসি সাহা তুলি দুজনই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে পড়ে। তারা বর্তমানে মালেশিয়াতে আছেন। তারা ঢাকায় ফিওে আবারও শুরু করবে যাত্রা “নারীর চোখে বাংলাদেশ” ভ্রমনের ।



সোনিয়া লায়লা, প্রায় ১বছর যাবৎ স্কুটি চালাচ্ছেন।

সোনিয়া লায়লা Sonia Laila উন্নয়নকর্মী, মাত্র কয়েক মাসহল স্কুটি চালাচ্ছেন। নানা সীমাবদ্ধতার মাঝে তার নিজের একটা স্কুটি আছে তাতে গর্ববোধ করেন। পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে সকাল বিকাল রাত যখনই দরকার তখনই আমরা ছুটতে পারি।
ধরুন অফিস থেকে ফেরা পথে আমরা মিনিট তিরিশের জন্য এক হয়ে গোটা বিশ ত্রিশ টাকার বাদাম চিবুই। এটাই আমাদের বিনোদন। সারাদিনের ক্লান্তি ভুলে বাসায় ফিরি উৎফুল্ল মন নিয়ে। এক ফ্ল্যাটের মানুষ যখন একজন আর একজনকে চিনে না তখন আমরা দলবেধে ঘুরতে বের হই। কংক্রিটের শহরে জীবন মানেই আমি আর তুমিতে শেষ হয়ে যাচ্ছে। সেখানে আমরা দুই চাকার সাইকেল স্কুটিকে কেন্দ্র করে শহরের অনেক নারী ঐক্যবদ্ধ হচ্ছি। একে অপরের সমস্যা এগিয়ে আসি।

ক্লান্তি আর ব্যস্ততার পরও শহরের খুকু,সোনিয়া, নিপার মত নারীদের সেতুবন্ধনের নাম স্কুটি। ভিন্ন পেশার এই মানুষগুলোকে একটা বৃত্তে আবদ্ধ করেছে যান্ত্রিক সাইকেল স্কুটি।




অফিস থেকে ফেরার পথে চলছে আড্ডা।সংসদ ভবন চত্ত্বর, ঢাকা।

ওস্তাদ নাজমা আক্তার। পেশায় রিকশা মিস্ত্রি।

ঢাকার রিকশা, ঢাকার গন্ডি পেরিয়ে স্থান করে নিয়েছে গ্রিনেস ওয়ার্ল্ড বুকে। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি রিকশা চলাচল করে ঢাকায়। সংখ্যা তার ৫ লক্ষের বেশি। ঢাকার রিকশা এখন এই শহরের কোটি মানুষের চলাচলের মাধ্যম। এই পরিবেশবান্ধব যানটার নিয়ে নানা অযৌক্তি, অবৈজ্ঞানিক ধারনা প্রচলিত আছে। বলা হয় রিকশা ঢাকার যানজটের অন্যতম কারণ। কিন্তু নগরবিদ এবং পরিবহন পরিকল্পনাবিদরা এখন একমত যে এই ধারনাটি ভুল এবং মনগড়া। আর এই ভুল ধারণার ভিত্তি করে রিকশা উচ্ছেদের সিদ্ধান্তটাও ছিল ভুল।
রিকশা নিয়ে এক বৃট্রিশ নগর পরিকল্পনাবিদ রব গ্যালাগার, রিকশা অব বাংলাদেশ নামে হাজার পৃষ্ঠার বই লিখে ফেলেছেন। রিকশা নিয়ে এমন হাজার পৃষ্ঠার বইয়ের পাশাপাশি হাজার হাজার গল্প করা যাবে। তবে আজ যে গল্প শুনাতে চাই তাহল নাজমা আক্তার।

রিকশা মেরামতে ব্যস্ত নাজমা আক্তার।
ঢাকায় রিকশার সাথে জড়িত সকল পেশাই মূলত পুরুষের দখলে। আর তাই যদি আমার মত আপনার ধারনা হয়ে থাকে। তবে পরিচয় হোন নাজমা আক্তারের সাথে । নাজমা আক্তার বয়স ৪৫। জন্ম ঢাকায়। গ্রামের বাড়ি বরিশালের মাঠবাড়িয়া। প্রায় ৩০ বছর যাবত ঢাকায় রিকশা মেরামতের কাজ করেছেন। বর্তমানে ধানমন্ডির আবহানী মাঠের পশ্চিম পাশে তার ভাসমান রিকশা মেরামতের স্থান।
কি করে এই পেশায়? বাবা রশিদ মিয়া ছিলেন রিকশা মিস্ত্রী তার কাছ থেকে হাতে খড়ি। তবে রশিদ মিয়া রিকশা মেরামতের পেশা ছেড়ে ফলের ব্যবসায় চলে যান। নাজমা আক্তার রিকশা মেরামতের পেশাটাই স্থায়ী হয়ে গেলেন। এখন ঢাকায় নাজমা আক্তারের শিষ্য আছে গোটা ৩০। নিজের দুই মেয়েও শিখেছে রিকশা মেরামতের কাজ তার কাছে। মেঝ মেয়ে আবহানী মাঠের কাছে রিকশা মেরামত করেন। ছোট মেয়ে রুমি সাথে কথা হল আবহানী মাঠের কাছে। সে জানাল সে রিকশা মেরামতের সকল কাজই জানে। তবে এখন একটা চাকুরী করে। তবে মাঝে মাঝে সময় পেলে মেঝ বোনের দোকানে বসে। বোনের টুকটুাক সহযোগিতা করে।
স্বামী আব্দুর রহমান হৃদয় মিস্ত্রী নাজমা আক্তারের শিষ্য। আব্দুর রহমান বলেন ঢাকায় যদি দুই/চারজন শ্রেষ্ঠ রিকশা মিস্ত্রী থাকে। তবে তার উস্তাদ নাজমার নাম আসবে এক, দুই,তিনের মধ্যে। রিকশার এক্সেলের টাল ভাঙ্গার কঠিন কাজে থেকে শুরু করে চাকায় হাওয়া দেওয়ার মত কাজে আমার ওস্তাদ নাজমা আক্তারের দক্ষতার জুড়ি নেই। বছর বিশ আগে নাজমা আক্তারের শিষ্য হন আব্দুর রহমান হৃদয়। তারপর এখন পর্যন্ত ওস্তাদের সাথে আছেন।
আব্দুর রহমান মূলত সাইকেল সারাতে ব্যস্ত থাকেন বেশি। সাইকেলে সারাতেই তার দক্ষতা বেশি। কিন্তু নাজমা আক্তারের দক্ষতা সবখানে সে রিকশা, সাইকেল, বাচ্চাদের খেলনার সাইকেল-রিকশা সবকিছুতে সে দক্ষ। রিকশা মেরামতের কাজ যতই সহজ আর কঠিন হোক জোর দিয়ে হবে না। রিকশা মেরামত করতে হয় রিকশার সাথে ভাব জমিয়ে। তা না হলে একটা সমস্যা ঠিক হলে আর একটা তৈরি হবে।
ধরেন হাতুরি দিয়ে টুকটুক বারি দিয়ে যেমন রিকশার টাল ভাঙ্গতে হয়। আবার সেই বারি একটু উনিশ-বিশ হলেই রিকশা টাল হয়। রিকশার চাকা বা এক্সেল টাল হলে যে শুধু চালকের রিকশা চালাতে সমস্যা হয় তা নয়। যাত্রীও রিকশায় চড়ে স্বস্তি পায় না। রিকশার চাকায় হাওয়া দিতে হয় পরিমাণ মত। সামনের চাকায় এক রকম, পিছনের চাকাগুলোতে আর এক রকম। আমরা তো হাওয়া মাপার মেশিন ব্যবহার করি না। তাই চোখের মাপ আর অভিজ্ঞতা দিয়ে আমাদের মাপতে হয়। আমাকে যারা চিনে তারা ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, কলাবাগান, জিগাতলা, রায়েরবাজার যেখানেই থাকুক না কেন আমার কাছে চলে আসে। আমার কাছে কাজ করিয়ে সন্তুষ্ট হয়। নতুন কেউ কেউ ভাবে আমি আর কতটা রিকশা ভাল ভাবে ঠিক করতে পারব। তাই আমাকে এড়িয়ে যেতে চায়। কিন্তু যখন দেখে আমার কাজের মান অন্যদের থেকে ভাল তখন আমার কাজ নিয়ে আর অপত্তি থাকে না। আমি কখনোই কারো সাথে কাজের জন্য র্তকে জড়াই না। আমি আমার মেধা আর আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করি। আমার নিজের কাজের প্রতি আমি আস্থাশীল তাই বুঝি কেউ একবার আমার কাছে কাজ করলে বার বার আসবেই। গত ৩০ বছরের তার ব্যাতিক্রম হয়নি।

সারাদিন রিকশার টাল ভাঙ্গে, বাড়ি ফিরে সংসারে টাল ভাঙ্গতেও পারদর্শি নাজমা
এখন স্বামী-স্ত্রী কাজ করে কুলাতে পারি না। প্রতিদিন শত শত রিকশা আসে আমাদের এখানে। ঢাকায় হাজার হাজার মানুষ রিকশা চালায় কিন্তু মানুষগুলোর কোন দাম নাই। একদিন গাড়ি বন্ধ থাকলে কত হাউকাউ। কিন্তু একদিন যদি রিকশা বন্ধ থাকে তাহলে কি হবে চিন্তা করেন? তারপর মানুষ রিকশা চালকদের সম্মান করে না। মাঝে মাঝে মাইর খাইয়া রিকশা চালকরা আসে। পুলার সমান পুলাপাই মারছে ভাড়া দেয় নাই। রিকশা ভাইঙ্গা দিচ্ছে। গত ৩০ বছরে কত রিকশা ড্রাইভারে চোখের পানি দেখছি। কত রিকশা ড্রাইভার দেখছি শূণ্য থেকে কত কি হয়ে গেলে।
একজন কর্মীজীবি নারীর পরও আমার পরিচয় আমি কারো মা, স্ত্রীর সংসার আমাকে সমালাতে হত। রাস্তায় রিকশার টাল ভাঙ্গি আর বাসায় সংসারের টাল ভাঙ্গি। ভিক্ষা করা থেকে রাস্তায় বসে রিকশা মেরামতের কাজ অনেক ভাল। আমি আমার শ্রম,বুদ্ধি দিয়ে কাজ করি। কারো কাছে হাত পাতি না। এটাই আমার সুখ।

Monday, March 13, 2017

আগামী ১৫মার্চ তারিখ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন দিবস।

আগামী ১৫মার্চ তারিখ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন দিবস।
দেখি কি হয়!!!!

২০১৫ সালে আমি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে দেশের অন্যতম এক বহুজাতিক কোম্পানীর পণ্যের মোড়কে উৎপাদন তারিখ ও মেয়াদ উত্তীনের তারিখ ব্যবহার না করার মর্মে একটি অভিযোগ দায়ের করি যা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ৩৭ ধারার অধীন দন্ডনীয় অপরাধ।
গত ২০১৫,২০১৬ এবং ২০১৭ সালে এই অভিযোগের জন্য শুনানীর জন্য বেশ কয়েকবার তারিখ নিধারণ করা হলেও প্রতিবার নানা সমস্যার কথা বলে তারা সময় নিচ্ছে। গত ১মার্চ ২০১৭ সালে শুনানীর কথা থাকলেও তারা সকালে এসে কর্তপক্ষ থেকে আবারও সময় নিয়ে যায়।
আগামীকাল ১৪ মার্চ ২০১৭ তারিখে সকাল ১১টায় আবারও শুনানীর তারিখ নিধারণ করা হয়েছে। দেশের কোটি কোটি মানুষের কাছে তারা তাদের পণ্য বিক্রি করে। সে পণ্যের মান রক্ষা করার দায়িত্ব তাদের। তারা দাবী করে তারা বিশ্ব বিখ্যাত কোম্পানী এবং তাদের পণ্যের মান বিশ্বমানের তাহলে তারা কেন পণ্যের গায়ে উৎপাদন তারিখ ব্যবহার করে না?
আমি আগামীকাল সকাল ১১টায় যাব জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে শুনানীর জন্য। ক্রেতা স্বার্থ রক্ষায় আমার এই শুনানীর জন্য আল্লাহ-ই জানে আর কতদিন যেতে হবে।
২০১৫ সাল থেকে আমি শুধুই ঘুরছি আর ঘুরছি। আমার জানা এটি দেশের একমাত্র অভিযোগ | যা নিষ্পত্তি হতে সবচেয়ে বেশি সময় লাগছে। কেন লাগছে এত সময় দয়া করে তা কেউ জিজ্ঞাসা করবেন না।
শুধু জানি হারা যাবে না। আগামীকাল বিশ্বমানের পণ্য উৎপন্নকারী, বিশ্ববিখ্যাত কোম্পানীর বিখ্যাত কোম্পানী দেখি গ্রাহক স্বার্থ রক্ষায় আবার কি পদক্ষেপ নেয়। কাল সকাল ১১টা পর্যন্ত শুভ কামনা।

Saturday, February 4, 2017

নীলক্ষেত গাউছুল আযম মার্কেটের সামনের ফুটপাতের মুড়ি ভর্তা

 ঢাকায় কোথায় কি খাবার পাওয়া যায় তা নিয়ে আপনাকে জ্ঞান দেওয়ার সাহস আমি করি না। তবে বলি কি সুযোগ পেলে একবার নীলক্ষেত গাউছুল আযম মার্কেটের সামনের ফুটপাতের মুড়ি ভর্তা খেতে পারেন।
আপনার মুখে ঢাকার হাজার টাকার মুড়ি ভর্তা খাওয়ার স্বাদ লেগে আছে তা জানি । কিন্তু এখানে পাবেন অন্যরকম স্বাদ সাথে বিক্রেতার ভালবাসা।



ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিন্নীর বইশ (মহিষ)।


ইদন আর বাবুল পেশা তাদের দিনমুজুর। কিন্তু বছরের এই সময়টা তারা গ্রামে গ্রামে সিন্নীর বইশ নিয়ে হাঁটে । গেল সপ্তাহে আমার সাথে দেখ হল সিন্নীর বইশসহ। গ্রাম ওয়ারু,থানা নবীনগর, জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

আমরা নবীনগর থেকে মটর সাইকেল যোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাচ্ছি। বিলের মাঝখান দিয়ে তৈরি সরু রাস্তায় দেখা মিলল বাবুল আর ইদনের সাথে। ধূলায় মাখামাখি। গ্রামের পর গ্রাম সিন্নীর বইশ নিয়ে হেটে বেড়ানো ওদের পেশার অংশ।


সিন্নীর বইশ মানেটা কি? এই মহিষটি কেনা হয়েছে করিম শাহ’র মাজারে ওরস উপলক্ষ্যে। ওরসের দিন এটি জবাই করা হবে। এটি ছাড়াও আর একটি মহিষ কেনা হয়েছে। দুইটি মহিষ সাজিয়ে কর্তৃপক্ষ তাদের তাদের গ্রাম ভাগ করে দিয়েছেন। তারা মহিষ নিয়ে গ্রামে গ্রামে যায়। বাড়ি বাড়ি থেকে চাল, টাকা সংগ্রহ করে।

আর এর বিনিময়ে তারা দৈনিক কিছু টাকা পায়। টাকা চেয়ে বড় পরী-আউলিয়ার দোয়া । বাড়ি বাড়ি থেকে সংগ্রহ করা এক মুঠো চাল ওরসের দিন হাজার হাজার মানুষের খাবারের জোগান হবে। কতদূর দূর থেকে মানুষ আসে এই করিম শাহ্’র মাজারে। বাবুল-ইদনের মুখে তৃপ্তির ছাপ।

আমি বললাম বাবুল ভাই আমাদের যেতে হবে। আমাদের এই শহুরে জীবনে তৃপ্তি নেই, আছে ক্লান্তি । শুধুই আছে ছুটে চলা। যন্ত্র আর আমাদের মাঝে কাগজ কলমে পাথ্যর্ক যাই থাকুক না কেন। আমি বলি পাথ্যর্ক নেই। আমরা যেখানে এখনো শুধুই নিজের কথা সেখানে বাবুল-ইদনরা মাইলের পর মাইল পাড়ি দিচ্ছে হাজার মানুষের একবেলার সংগ্রহের জন্য। আর তাই তাদের ক্লান্তি নেই, আছে শুধুই তৃপ্তি।

আমরা ধূলার সাথে লড়াই করে একের পর এক গ্রাম পারি দিচ্ছি। সন্ধ্যার আগেই পৌছাতে হবে গোকর্ণঘাটের এপারে তারপর নদী পাড়ি দিয়ে রেলগাড়িতে করে ঢাকায়।

আপনি কি কখনো সিন্নীর বইশ দেখেছেন? শুনেছেন রাত জেগে পালা-গান?
নবীনগর, নাসিরনগর, আখাউড়া, কসবা, সরাইলসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বেশ কিছু স্থানে এই মৌসুসে দেখা পেতে পারেন শিন্নীর বইস কিংবা বাবুল-ইদনদের। হয়তবা বুঝতে পারবেন জীবনমানে শুধুই আমি আর তুমি নয়।
জীবন আমরা হতে পারে, চারপাশের মানুষগুলো নিয়ে আমরা।
#ব্রাহ্মণবাড়িয়া, #সিন্নী

Tuesday, November 22, 2016

পেশায় তারা ভূতওয়ালা।

না ভুল শুনেনি। পেশাই তাদের ভূতওয়ালা। ভূতই তাদের রুটি,রুজি। ভূত নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়ান। গ্রামের ছেলে-বুড়ো সবাই ‍ভূতওয়ালা বলেই জানে তাদের। আর আমিতো ভূত দেখতেই গেলাম। 
সারারাত ট্রেন জার্নি (ভ্রমণ করে) যখন আমরা পৌঁছালাম ভূতওয়ালাদের গ্রামে তখন বেলা শুরু। বছরে এই সময় তাদের কাজের চাপ কিছুটা থাকে। তবে চৈত্র মাসে চাপ খুব বেশি। ঐ সময় ভূতওয়ালাদের ঘুমও নাকি হারাম।
তবে আজ ভূতওয়ালাদের বিন্দুমাত্র সময় নেই আমাদের সাথে কথা বলবে। গত রাতে উত্তর পাড়া থেকে ডাক এসেছিল। সন্ধ্যার আগে আগে যেতে হবে আরো তিন বাড়ি। সারারাত উত্তর পাড়ায় ভূত নিয়ে কাজ করতে হবে। 
এ বাড়ি ঐ বাড়ি সবার ডাকাডাকি ও ভূতওয়ালা আমাদের বাড়ি আসো তোমার ভূত নিয়ে। ভূতের কদর, ভূতওয়ালার কদর। আমাদেরও কদর কম নয়। আমরা মেহমান। তাই হাজার ব্যস্ততার মাঝে বাড়ির লোকজন আমাদের খোঁজ খবর নিচ্ছেন। আমরা তাদের কাজের ব্যাঘাত না ঘটিয়ে চলে আসলাম। অবসরে দেখা হবে। কথা হলে আড্ডা। শহরবাসীও না হয় জানাব কে ভূতওয়ালা । কি ভূত তারা পোষেন।






ওরা তিনজন ভূতওয়ালা।

এ কেমন পেশা?
মাসখানিক পর আমরা আবারও গেল ভূতওয়ালাদের গ্রামে। ওহ ভূতওয়ালা একটু সময় হবে ভাই? না সময় নেই। নতুন ফসল আমাদের তাদের নাওয়া খাওয়া কেড়ে নিয়েছে। আমি তিনজের দলে আর একজন । সারাদিনের জন্য দিনমজুর হয়ে গেলাম। খাওয়া ফ্রি। বিনিময়ে কোন টাকা মিলবে না।

পাবনার বিভিন্ন গ্রামে ভূত ও ভূতওয়ালাদের দেখা মিলবে। তারা গ্রামে গ্রামে ছুটে চলেন ভূত নিয়ে। ভূত এক ধরনের মটর চালিত মাড়াই যন্ত্র। ধান, গম,ভুট্টা, তিল, তিশি, মাসকলাই, সরিষাসহ নানা ফসল মাড়াই করা হয় এই মেশিনের সাহায্যে। এই মেশিনের একদিকে দিয়ে পুরো কান্ডসহ বিভিন্ন ফসল ডুকিয়ে দেওয়া হয়। অন্যদিক দিয়ে ফসল ও উচ্ছিষ্ট আলাদা হয়ে বের।




ফসল মাড়াই যন্ত্র ভূত।

এই মেশিনের নাম স্থানীয় ভাবে ভূত । যারা মেশিন চালায় তারা ভূতওয়ালা। ভূতওয়ালাদের নিয়ে গ্রামে নানা কথা প্রচলিত আছে এখন। বলা হয় ভূতওয়ালাদের পেট নাকি ভূতের ন্যায়। আস্ত গরু খেয়ে ফেলতে পারে তারা। ধান,সরিষা,ভুট্টা,তিল,তিশি, মাসকলাই যাই মাড়াই করা হোক ভূতওয়ালাকে প্রতি মণে তিন কেজি দিতে হয়। সাথে খাবার সারাদিনের খাবার, পান, চা, বিড়ি তো আছেই।




আমি ভূতের ভাগ বুঝে নিচ্ছি। প্রতি মণে তিন কেজি।

উত্তরপাড়া যাবার আগেই আমি ক্লান্ত দেহ নিয়ে চলে আসলাম। সারা শরীরে আমার মাসকলাইয়ের গন্ধ। সবাই আমাকে নবান্নের আমন্ত্রণ দিল। আর মাসখানি পর শুরু হবে নবান্ন উৎসব। শহুরে সেই ব্যানার, পোস্টার, পত্রিকার পাতায় কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সেই স্বাদ-গন্ধহীন কৃত্রিম নবান্ন উৎসব নয়। এই গ্রামে নবান্ন মানে দলে দলে গ্রামের মেয়েরা বাড়ি আসবে। সাথে শিশুরা। জামাইদের জন্য শত পদের পিঠা বানানো হয় এই গ্রামে। 
ভূতের মালিক সামছু ভাই আমাকে এগিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন। ভাই ভূত মেশিন ভাল না। অনেক মানুষ বেকার হইয়া গেছে। দশজনের কাজ একাই করা যায়। এতগুলা মানুষের রুটি-রুজি শেষ করে দিল। 
আসলেন আর যাবেন। একদিন থেকে যান। তিলের পিঠা বানাবে আপনার ভাবি। কিছুই তো খাওয়া হল না। থাকলে সমস্যা কি একদিন বেশি থাকলে। একদিনের সম্পক তার চোখে পানি। একদিনের সম্পর্কের সামছু ভাই আমার স্মৃতি চাঁদের মত উজ্জ্বল হয়ে থাকবেন।
আমি সন্ধ্যার ট্রেনে ঢাকায় ফিরছি। সারা আকাশ জুড়ে আজ চাঁদের রাজত্ব। আজব চাঁদ। আমার ঢাকায় ফিরতে ইচ্ছে করছে না। জয়দেবপুর নেমে গেলেই ভাল হয়। ঢাকার আকাশে চাঁদ ভাল লাগে না। ঢাকার আকাশে ধূলার স্তর অনেক বেশি। তাই চাঁদের রূপ ভাল ভাবে উপভোগ করা যায় না। 
এই নবান্নে না হোক পরে নবান্নে পাবনার, চাটমোহর,অটলংকার গ্রামের সেই চিকনাই নদীর পাড়ের চাঁদ আর ভূতওয়ালা সামছুর দুজনের সাথে আবার দেখা হবে। এই প্রত্যাশা নিয়ে আরো কয়েক যুগ বাঁচতে চাই।

Wednesday, November 2, 2016

নগর চড়াই/চড়ুই

'বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই, কুড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াইআমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে তুমি কত কষ্ট পাও রোদ বৃষ্টি ঝড়ে

স্বাধীনতার সুখ নামক কবিতায়  রজনীকান্ত সেন এর চড়াইয়ে সুখের গল্প সবাই জানলেও। সুপরিচিত চড়াইয়ে নগর জীবনের সুখ শূন্যের কোটায় । বিশেষ করে ঢাকার মত শহরগুলোতে চড়াই/চড়ুই দেখা পাওয়াই কঠিন।

যেকোন লোকালয়ের আশেপাশে চড়ুই একটি সুপরিচিত পাখিএরা জনবসতির মধ্যে থাকতে ভালোবাসে তাই এদের ইংরাজি নাম হাউস স্প্যারো অর্থাৎ "গৃহস্থালির চড়াই/চড়ুই।

পৃথিবীতে মোট ৪৮ প্রজাতির চড়ুই দেখতে পাওয়া যায়জীববিজ্ঞান অনুযায়ী এদের পরিবার ১১টি গণে বিভক্ত। "গৃহস্থালির চড়ুই" এদের মধ্যে সবচেয়ে সুপরিচিতএদের আদি নিবাস ছিল মূলত ইউরেশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশ  

কয়েক দশ আগেও ঢাকা শহরে বাড়ির উঠান, ঘরের কোনে, বারান্দায় চড়ুইয়ের উপস্থিতি ছিল খুবই স্বাভাবিক চড়ুইয়ের ডাকে শুরু হত সকাল। আর সন্ধ্যায় চড়ুইয়ের ডাকে আমরা বুঝতাম মাঠ থেকে বাড়ি ফিরতে হবে। ঘরের ভেন্টিলেটারে চড়াই দম্পতির সংসারটায় সদ্য জন্ম নেওয়া চড়াই আমাদের পরিবারের অংশই ছিল। ভোর রাতে রোজার সময় প্রায়ই দেখতাম চড়াই এসে খাবার নিচ্ছে টেবিল থেকে। মাঝে বারান্দায় রেখে যাওয়া চায়ের কাপে খুই উৎসাহ নিয়ে চড়াই ঠোট ভিজায়। এসব খুব বেশিদিন আগের নয়। গেল দুই দশ আগের গল্প।

শহরটা ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে চড়াইয়ের জন্য। স্বাধীনতার সুখ কবিতার বাবুই তো শহর ছেড়ে পালিয়েছে বহু আগে।  আর চড়াই গত কয়েক শতকে ইট কংক্রিটের নগর জীবনের সাথে শহুরে জীবন যাত্রা মানিয়ে নিতে পারলেও।   বতমানে নগরগুলো চড়াই শূন্য হয়ে পড়ছে। নগরগুলোতে চড়াই কমে যাবার অন্যতম কারণ হল মোবাইল অপারেটরদের টাওয়ারগুলোযেখান দিয়ে তরঙ্গ প্রবাহিত করে সেই জায়গাগুলোই চড়াইদের উড়ার জন্য প্রকৃত উচ্চতাফলে তারা বেশীর ভাগ সময়ই সাবলীলায় উড়তে পারে না, পথ হারায়

ইট কংক্রিটের শহরে মানুষের তৃষ্ণনা মেটাতে নগর কতৃপক্ষে হাজার কোটি টাকা বাজেট থাকলেও কোথাও চড়াইয়ের তৃষ্ণনা মেটাবার জলের ব্যবস্থা নেই। নগরে কোটি টাকা ব্যয়ে সৌন্দযবধনের সারি সারি গাছ লাগনো হয় । কিন্তু ক্ষুদ্র চড়াইয়ে খাদ্যের জোগান দিবে তেমন গাছ নেই। সব মিলিয়ে নগরগুলো চড়াই বান্ধব নয়।

আমাদের এই পরিবেশ বিধ্বংসী উন্নয়নের কারনে হয়ত একদিন নগর থেকে চড়াই বিলুপ্ত হয়ে যাবে।  কিন্তু বিলুপ্ত শুধু চড়াইয়ের মত ক্ষুদ্র পাখিটির বিলুপ্ত হওয়া নয়। চড়াইয়ের বিলুপ্তি নগরগুলো যে ক্রমেই মনুষ্য বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে তারই প্রমান।

এত হতাশার মাঝে ঢাকা শহরে কিছু কিছু স্থানে আমি সুখ নিয়ে চড়াই দেখি। সন্ধ্যায় কিচির মিচির শব্দে কানে তালা লাগার মত অবস্থা। আমি অস্থির চোখে তাকিয়ে দেখি চড়াই দম্পতির ব্যস্ততা। তারপর সন্ধ্যার আলো নেভার আগেই চড়াইগুলো কোথায় যেন মিলিয়ে যায়।

তবে কিছু কিছু এলাকায় ভিন্ন আচরনের চড়াই দেখি। দেখি সারারাত শত শত চড়াই দম্পতি গাছে ডালে বসে থাকে। তাদের কোন ঘর নেই। পাশে বড় বড় অট্টালিকা থাকলে শত শত চড়াইয়ে কেউ সেই অট্টালিকাগুলোতে যায় না। মোহাম্মদপুর বেড়িবাধ এলাকার সাদেক খান ফিলিং স্টেশনে বাগান বিলাশ গাছের ঝোপে আমি এমন কয়েকশ চড়াই দেখেছি। দিনের পর দিন সারা রাত জেগে থেকে লক্ষ্য করেছি পাখিগুলো রাতে কোথাও যায় কিনা। ভোর হবার আগ পযন্ত ওরা ওখানে বসে থাকে। তেল পাম্পের কতৃপক্ষ চড়াইয়ের জন্য খাবার পানি ও খাদ্যের বিশেষ ব্যবস্থা করেছে।

রজনীকান্ত সেন  এর স্বাধীনতার সুখ নামক কবিতা আর আমাদের ভেন্টিলেটারে থাকা চড়াই দম্পতি দেখে বুঝতে শিখে ছিলাম চড়াইরা অট্টালিকায় আশ্রয় নেয়। কিন্তু সাদেক খান পাম্পের নগরের এই চড়াইগুলো দেখি ভিন্ন কিছুতারা সারারাত গাছেই থাকে। হয়তবা প্রতিকূল পরিবেশ বেঁচে থাকার জন্য ভিন্ন কোন কৌশল রপ্ত করছে। 

কৌশল যাই হোক চড়াইগুলোকে বাঁচতে দিতে হবে। আমাদেরও কৌশলী হতে হবে। আমাদের চারপাশের পরিবেশ চড়াইবান্ধব করতে হবে। যে শহরে এই ছোট প্রাণী চড়াই নিরাপদ নয় সেই শহরে আমরা এত বড় প্রাণী আর কতটাই নিরাপদ থাকবে। বিলুপ্ত হওয়া চড়াই রক্ষার স্বার্থে একদল লোক ২০১০ সাল থেকে ২০ মার্চ   পালন করছে চড়ুই দিবসবা World Sparrow Day
 শুধুই নগরে চড়াই বিলুপ্ত হয়ে যাওয়াই সমস্যা নয়। সমস্যা হল এই শহরে চড়াই বিলুপ্ত হওয়াটা আমি দেখছি মানুষ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার পদধ্বনি হিসেবে।