Showing posts with label পহেলা বৈশাখ. Show all posts
Showing posts with label পহেলা বৈশাখ. Show all posts

Monday, April 13, 2015

বৈশাখ মানে ইয়ুজু তোমার কাছে ক্ষমাপ্রাথী ।



২০০৭/০৮ সালের দিকে আমি টাঙ্গাইলের এক শাড়ী হাট থেকে একটি শাড়ী কিনলাম। আমার অসম্ভব রূপবতী বন্ধু ইয়ুজুর জন্য। শাড়ী কিনে তাকে জানালাম তোমার জন্য বিশেষ উপহার আছে। পহেলা বৈশাখের দিন দুয়েক আগে তার অফিসের কাজে বাংলাদেশে এসে হাজির।

আমাদের এখানে ছুটি থাকায় আমি ফোন বন্ধ করে বিশেষ ঘুম দিয়েছি। আমার বাসার লোকজন যেখানে যেখানে খুজেঁ পাওয়া যায় সবখানে খোজ নিল। আমি নেই।

ইয়ুজুকে জানানো হল আমাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।

অবশেষে একদিন পর। আমার বন্ধুর কল্যানে শেষ বিকেলে শাড়ী নিয়ে আমি ইয়ুজুর হোটেলে হাজির হলাম। সে আমাকে বলল তাকে শাড়ি পড়িয়ে দিতে। কিন্তু শুধু শাড়ি তো পড়া যায় না । সাথে আরো কিছু লাগবে। আমি ১ ঘন্টার মধ্যে ফিরব বলে, কি কি লাগবে তা আনতে গিয়ে পড়লাম সমস্যায়। ব্লাউজের সাইজ কি, পেটিকোটের রং কি হবে। সাথে শাড়ি আছে কিনা। তাহলে তারা মিলিয়ে দিবে।
রাত ৯টায় আমি বোনকে বললাম কোনভাবে সম্ভব হচ্ছে না। তুমি উদ্ধার কর। সে শাড়ি পড়ানো এবং ব্লাউজ,পেটিকোট কেনার দায়িত্ব নিয়ে আমাকে উদ্ধার করল।

রাতে যখন ফিরলাম ততক্ষনে ইয়ুজু ঘুম।

ঘুমানোর আগে সে ছোট চিঠি লিখে গিয়েছে কাউন্টারে। অনুরোধ করল আমি যেন হোটেলে থাকি। তা না হলে আবারও হারানোর সম্ভবনা আছে। থাকার ভাড়া সে দিবে। হোটেল কতৃপক্ষ জানিয়ে দিল কোন সিট ফাঁকা নেই। ম্যানেজার জাহাঙ্গীর সাহেবের বিশেষ ব্যবস্থাপনায় হোটেলে আমার ঘুমানোর ব্যবস্থা করা হল।
আমি আমার জন্য আনা বিশেষ ধরনের রেডিও শুনি । সাথে সাদা সাদা ডিম ফল খাচ্ছি। রেডিওতে কিছু শোনা যায না। শুধু ভু ভু আওয়াজ হয়। ভয়ানক রাত কোনভাব্ শেষ হয় না। এত নরম বিছানায় কি করে ঘুম হয়।

মহান ঘুম যখন আসি আসি, সূয উঠার সাথে সাথে ইয়ুজু রুমে ফোন দিল। কিন্তু ফোনের শব্দে কি আমার ঘুম ভাঙ্গবে? সাড়া না পেয়ে দরজা ভাঙ্গতে আসে। আমি ঘুম থেকে উঠে তার সাথে বের হলাম। ঢাকা শহর দেখতে।

লক্ষ লক্ষ মানুষ ঢাকার রাস্তায়। ইয়ুজু ছবি তোলে আর আমি আমাদের বিশেষ ধরনের তৈরি নবাবী রিকশায় ঘুমাই।

দুপুর ১২টার দিকে আমার আপার বাসায় গেলাম মিশন শাড়ী পড়া বাস্তবায়ন করতে। আপা বাসায় আমি ঘুমাই আমার ভাগ্নি, আপা সবাই মিলে তাকে শাড়ি পড়িয়ে দিল। দুপুরের মাঝামাঝি বের হলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দেখতে। নীলক্ষেত্রে এলাকা থেকে রিকশা প্রবেশ নিষেধ। আমরা হাটছি গন্তব্য টিএসসি হয়ে শাহবাগ।
টিএসসি থেকে শাহবাগ যাওয়া আগেই ইয়ুজু মহা বিরক্ত সে আর যাবে না। কারণ কারা যেন তার পেটে পিঠে চিমটি কাটছে বার বার। আমিও ভীড়ের মধ্যে না যাওয়ার পরামশ দিলাম। মহা বিরক্ত হয়ে আমরা রোকেয়া হল পার হয়ে ভিসি চত্ত্বরের দিকে হাটছি।
এদিকে রাস্তা কিছুটা ফাঁকা। চিমটি কাটার ভয় নেই। ইয়ুজু একটু হেটেই মিনিটের জন্য দাড়ায়। শিশুদের ছবি তুলে।
আমি সামনে সামনে হাঁটি একটু পর পর তার জন্য দাড়াই। কিছুক্ষণ পর দেখি মানুষজন সব আমার দিকে কেমন ভাবে তাকায় । ভাল লক্ষ্য করে দেখি ইয়ুজু তার শাড়ি খুলে হাতে নিয়ে হাটছে, শুধু ব্লাউজ আর পেটিকোট পড়ে। ভয়ানক দৃশ্য। ইয়ুজু স্বাভাবিক ভাবে মানুষের ছবি তুলছে। আমি ইয়ুজুকে তাড়াতাড়ি বুঝালাম যে সে এই ভাবে শাড়ি ছাড়া ঘুরতে পারে না।

শাড়িটিকে চাদরে মত তার শরীরে পেচিয়ে বাসার দিকে রওনা হলাম। লক্ষ্য করে দেখি তার ফসা পিঠে,পেটে অসংখ্য চিমটির দাগ।

রাস্তা সব মানুষজন আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কয়েকজন মহিলা পুলিশের সহযোগিতায় তাকে কিছুটা শাড়ি পড়িযে। বাসার দিকে রওনা হলাম।

যদি এইরকম হয় তাহলে মেয়েরা কি করে উৎসবে যোগ দিবে? তারা উৎসব করতে জানে না। তাদের উৎসব করা শিখাতে হবে। তুমি পুলিশকে ঘটনাটা বলো। কয়েকজন পুশিলসহ বলল এত বড় উৎসবে এই রকম কিছু হবেই। ছেলেরা একটু মজা করবেই।

আমার সাথে ইয়ুজুর যোগাযোগ নেই। বহুবছর হয়ে গেল। কিন্তু বছর বৈশাখ এলে মনে হয়।
আমি মনে প্রাণে বলি ইয়ুজু আমরা ক্ষমাপ্রাথী। আমরা সত্যি উৎসব করতে জানি না।