নন্দিত চলচ্চিত্র নির্মাতা ও গুণী চিত্রশিল্পী খালিদ মাহমুদ মিঠুর
হত্যাকারী কৃষ্ণচূড়া গাছটির ছবি আজ অনেক পত্রিকায় ছাপা হয়েছে/হবে। ঘাতক সেই
গাছ ঘিরে অনেকের ক্ষোভ। এই শহরের রাস্তার ধারে আর কোন গাছ থাকবে কিনা তা
নিয়েও অনেক মন্তব্য চলছে/চলবে। কিন্তু এই কৃষ্ণচূড়া গাছটিকে যারা ঘাতক
বানিয়ে দিল তাদের কোনদিন বিচার হবে না?
সব দোষ কৃষ্ণচূড়া আর সাজ্জা খালিদ মাহমুদ মিঠুর।
কিন্তু
দিন কয়েক আগেই এই গাছটির রূপে মুগ্ধ হয়ে হাজার মানুষ প্রশান্তি নিঃশ্বাস
নিয়েছে। গেল বসন্তে হাজার কপোত-কপোতীর মন রাঙিয়েছে এই কৃষ্ণচূড়ার রূপে। কত
সৌখিন ক্যামেরাম্যানের ক্যামেরায় ধারণ করা হয়েছে এর রূপ তার হিসেবে নেই।
আজ এই গাছটি শুধুই ঘাতক কৃষ্ণচূড়া, শত শত মানুষের মন রাঙানো, জীবনের জন্য অক্সিজেনের জোগানদাতা আজ সকলের কাছে ঘাতক!!!
এই
গাছটি কি বয়সের কারণে ভেঙ্গে পড়েছে? ঢাকার রাস্তার ধারের প্রতিটি গাছকে
মাটি থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। ক্রংকিটের চাপা দেওয়া আছে গাছগুলোর
চারপাশে। উন্নয়ন করতে গেলেই বার বার গাছগুলোর শিকড় কেটে দেওয়া হয় কিংবা
পুরো গাছ কেটে ফেলা হয়।
ঢাকায় এমন শত শত গাছ আছে যা ভেঙ্গে পড়ার
অপেক্ষায় আছে। এই গাছগুলো কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত হবে নিশ্চয় কয়েকদিনের
মধ্যেই। কিন্তু এটি আর একটি ভুল পদক্ষেপ হবে। যে গাছগুলো ঢাকার কোটি
মানুষের বাঁচার অন্যতম মাধ্যম অক্সিজেনের জোগান দাতা তাদের রক্ষার জন্য
কোথাও কোন পরিকল্পনা নেই। বৃক্ষরোপনের নামে প্রতি বছর যে গাছ লাগানো হয়
ঢাকায়, তার কতটা এই শহরের জন্য উপযোগী তা বিবেচনা করা হয় না। নেই কোন
নীতিমালা। সিটি করপোরেশনের আরবরি কালচার নামের একটা বিভাগ ছিল। এখন আর আছে
বলে মনে হয় না।
এই শহরে কত কারণে যে গাছ কাটা হয় তার কোন পরিসংখ্যান
নেই। ভিআইপি চলাচল, নিরাপত্তা, উন্নয়ন, বিশ্বকাপ, সৌন্দর্যবর্ধন, সংস্কার
শত অযুহাতে গাছ কাটা হয়। সেখানে গাছের চাপায় পড়ে একজন গুণী মানুষের মৃত্যুর
পর হয়তবা আরো শত শত গাছ কাটার সিদ্ধান্ত আসবেই। কিন্তু কোটি কোটি মানুষের
জীবন রক্ষাকারী গাছগুলো রক্ষার জন্য এ শহরের কোন সিদ্ধান্ত আসে না।
এই
শহরে গাছ লাগানো হয় শুধু্ই সৌন্দর্যবর্ধন আর ঠিকাদারের ব্যবসায়ী উদ্দ্যেশ
সাধনের জন্য।ঢাকা শহরের রাস্তার সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য দায়িত্ব দেওয়া আছে
১২৯টি প্রতিষ্ঠানকে। এসব প্রতিষ্ঠান মূলত রাস্তার মাঝখানে ডিভাইডার দিয়ে
ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগিয়েছে। প্রতি বছর গাছ লাগানো হয় এবং কয়েক মাস
পরই ঐ স্থান শূণ্য। কারণ গাছগুলো লাগানোর সময় ভাবা হয় না এটি উপযোগী কিনা।
সড়কের মাঝে অসংখ্য গাছ লাগানো হচ্ছে যা একটু বড় হলেই ভেঙ্গে পড়তে বাধ্য ।
কারণ গাছগুলোর সাথে মাটির তেমন কোন যোগাযোগ নেই। আর এই গাছ পড়া দায় যদি
গাছের উপরই পরে তবে বলতেই হয় আমরা নিজেদের দোষ অন্যের উপর চাপিয়ে ভাল থাকতে
চাওয়া প্রচেষ্টায় আছি।
কিন্তু কতদিন আর ঘাতক কৃষ্ণচূড়ার উপর দায়
চাপিয়ে নিরাপদে থাকব। তারচেয়ে বরং এবার সাজ্জা দেওয়া হোক সিটি করপোরেশনসহ ঐ
সকল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে যারা উন্নয়নের নামে গাছগুলোকে মাটি থেকে
বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। যারা তাদের পরিকল্পনা এক ইঞ্চি জায়গা রাখে না গাছের
জন্য।
খালিদ মাহমুদ মিঠুর হত্যাকারী কৃষ্ণচূড়া হয়তবা আমাদের এই
জানান দিচ্ছে। এশহর শুধুই মানুষের জন্য নিরাপদ নয়। আমরা গাছগুলোও এই শহরে
নিরাপদ নই। খালিদ মাহমুদ মিঠুর মৃত্যুর পথ ধরে আমাদের সমাধানের পথে হাঁটতে।
গাছ লাগানোর একটা নীতিমালা তৈরি করতে হবে। গাছ রক্ষায় আইন তৈরি করতে হবে।
ক্রংকিটে চারপাশ চাপা দিয়ে গাছগুলোকে ঘাতক বানানোর প্রক্রিয়া বন্ধ করতে
হবে।
খালিদ মাহমুদ মিঠুর আর কৃষ্ণচূড়া মৃত্যুর পরও যেন আমরা শিক্ষা
নেই। বড্ড ভুল পথে এগিয়ে যাচ্ছে ঢাকার কথিত উন্নয়ন। ঘাতক কৃষ্ণচূড়াকে
শাস্তি নয়, শাস্তির আওতায় আসুক তারা যারা প্রাণরক্ষাকারী গাছগুলোকে ঘাতকের
ভূমিকায় অবর্তীন করছে।
ছবি: বাংলা ট্রিবিউন
No comments:
Post a Comment