Tuesday, April 28, 2009

আমার শিশু, আমার ঘরের জীবন্ত এক আসবাব।

শিশুদের যথাযথ শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য নিয়মিত খেলাধূলা, বইপড়া, সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা খুবই জরুরী। এগুলো সাধারণতঃ ছেলে বেলা থেকেই গড়ে ওঠে। অথচ শহরের শিশুদের এসব করার সুযোগ অপর্যাপ্ত। ইট, কাঠ পাথরের জঞ্জালে চাপা পড়ে যাচ্ছে তাদের স্বাভাবিক বিকাশ। শহরের শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত খেলার মাঠ নেই এবং বিকল্প খেলার স্থান তৈরির কোন উদ্যোগও খুবই সামান্য। বরং শিশুদের অনেক খেলার যায়গায় উঠে যাচ্ছে দালান, দলীয় কার্যলয়, আবর্জনার স্তুপ জমছে বা গাড়ি পার্কিং হচ্ছে। কার জন্য কিসের প্রয়োজনে আমরা সম্পদের পাহাড় গড়ছি? 
আমার ঘরে টিভির সামনে বসে থাকা আমার শিশুটিকে দেখলে আজ আমার অন্য আট দশটা আসবাবের মতই মনে হয়। কম্পিউটার গেমস কিংবা টিভির নামক যন্ত্রের কাছে সে তার শৈশব সপে দিয়েছে নিতান্ত অপারগ হয়ে। শহরের কোন পরিকল্পনায় তাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি। রাজউক সকল বাড়িতে গাড়ির জন্য পার্কিং প্লেস বাধ্যতামূলক করেছে। কিন্তু শিশু জন্য খেলার জায়গা কিংবা বেচে থাকার সবচেয়ে প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের উৎস গাছের জন্য এক ইঞ্চি জায়গায় কথা নেই। শিশু, যার জন্য বাড়ি আর প্রয়োজনীয় গাছ এই দুটিই পরিকল্পনার বাইরে। 
 
একটা খাঁচার মত ভ্যানে চেপে স্কুল, স্কুলের গন্ডি থেকে আবার সেই খাঁচায় চেপে বাসা নামের আরেকটি খাঁচায় ফেরা। আর বাসার অবসরের সঙ্গী টেলিভিশন। এই জড় বস্তুটির সাথেই গড়ে উঠছে তাদের সখ্যতা। অন্যদের সাথে খেলাধূলা, মেলামেশা বা সামাজিক সম্পর্কে জড়ানো এমনকি তাদের যথাযথ শারীরিক ও মানসিক বিকাশের যে সুযোগ রয়েছে তা খুবই সামান্য। এমন একটা সময় ছিল যখন গ্রাম শহর সকল স্থানের শিশুর খেলাধূলা, ছুটোছুটিসহ বিনোদনের পর্যাপ্ত সুযোগ ছিল। কিন্তু বর্তমানে শহরাঞ্চলে নানা কারণে শিশুদের এই সুযোগ সীমিত হয়ে এসেছে। আজকাল কবিতা, গান, লেখা-লেখি, আলোচনা বা আড্ডাতে প্রায়ই একথা উঠে আসছে। অনেকেই নিজের দুরন্ত শৈশবের স্মৃতি রোমন্থন করে পুলকিত হই। পাশাপাশি শহরের শিশুদের বিনোদনের সুযোগের অপর্যাপ্ততার জন্য হতাশা প্রকাশ করি।

শিশুদের যথাযথ বিকাশের অনুকূল অবস্থা তৈরীর উদ্যোগ খুব সামান্য বরং শিশুটি বাইরে না গিয়ে ঘরে বসে টেলিভিশন দেখে সময় কাটাচ্ছে এতে অনেকেই স্বস্তি বোধ করেন। কিন্তু শিশুর শারীরিক ও মানসিক সু-স্বাস্থ্যের জন্য, তার সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার জন্য সকলের উচিৎ একটু অন্যভাবে চিন্তা করা।

দেশের ছোট শহরগুলোতে এখনো শিশুদের খেলার উপযোগী পরিবেশ থাকলেও বড় শহরগুলোতে এ ব্যবস্থা অপ্রতুল। দেশের অধিকাংশ বড় শহরগুলোতে শিশুদের যথাযথ শারিরিক ও মানসিক বিকাশের উপযোগী পরিবেশ নেই। তাই ক্রমেই সন্তানকে ঘরের মধ্যে আবদ্ধ করার প্রচ্ছন্ন একটা চেষ্টা অধিকাংশ অবিভাবকের। ফলে শিশুরা আবদ্ধ হয়ে পড়ছে টেলিভিশনের সামনে গন্ডিবদ্ধ জীবনে। যা একটি শিশুর স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্থ করছে। তার বিকাশের পথকে সংকুচিত করছে।
ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের গবেষণায় দেখা যায়, ঢাকা শহরে ৩৭% শিশু ঘরের মধ্যে খেলা-ধূলা করে এবং ২৯% শিশু কোন খেলা-ধুলা করে না। ব্যপারটা অবশ্যই দুঃখজনক যে, ৩৭% শিশু ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে খেলে আর ২৯% শিশু কোন খেলাধূলাই করে না। এই শিশুদের বিনোদনের একমাত্র সংগী টেলিভিশন। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে যে প্রায় সকল শিশুর (৯৮%) বাসায় টেলিভিশন আছে এবং ১৯% টেলিভিশন দেখার ব্যবস্থা শিশুর নিজের ঘরেই। ১৬% শিশু গড়ে প্রতিদিন ১ ঘন্টা, ৩৭% ২ ঘন্টা, ২৯% ৩ ঘন্টা, ১৩% ৪ ঘন্টা এবং ৫% শিশু প্রতিদিন ৪ ঘন্টার ও অধিক সময় টেলিভিশন দেখে। এদের মধ্যে ৭০% শিশু মনে করে টেলিভিশনে দেখা প্রোগ্রাম তাদের পড়ালেখায় কোন কাজেই আসেনা।
খেলাধূলার সুযোগ টেলিভিশন দেখা বিষয়ে জানার পাশাপাশি শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করা হয়েছে। উপাত্ত শিশুদের মধ্যে ১৮% শিশু প্রচুর বই পড়ে এবং ১১% শিশু পাঠ্য পুস্তকের বাইরে কোন বই পড়ে না। ২২% শিশুর বাড়িতে তার পড়ার উপযোগী ১ থেকে ১০ টি বই রয়েছে ৪০ এর উপরে বই আছে ২৮% শিশুর বাড়িতে এবং ৩% শিশুর বাড়িতে তার পড়ার উপযোগী কোন বই নেই। এ সকল বইয়ের মধ্যে প্রায় ১০% শিশু কোন বই পড়েনি। শিশুরা যে সকল বই পড়ে তার ৬৩% এর উৎস বাবা-মা এবং নিজে বই কেনে ১৫ % শিশু। 

অভিভাবকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে দৈনিক গড়ে ৪ ঘন্টা বা তারো বেশি সময় টেলিভিশন দেখে ২৩% শিশু এবং টেলিভিশন দেখেনা মাত্র ০.২%।
সার্বিক গবেষণায় ঢাকা মহানগরীর বাস্তব অবস্থা ফুটে উঠেছে শিশুদের খেলাধূলার পরিবেশ ও সুযোগের অপ্রতুলতা, টেলিভিশন দেখে তাদের সময় কাটানো এবং বই পড়ার সুযোগ ও আগ্রহের অভাব আমাদের শিশুদের শারিরীক মানসিকভাবে সুস্থ্য হয়ে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা। এ সকল প্রতিবন্ধকতা দুর করে কিভাবে তাদের উপযোগী করে ঢাকা মহানগরীকে গড়ে তোলা যায় তা আমাদের ভাবতে হবে।

মানুষকে বিভিন্ন নাগরিক সুযোগ সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে গড়ে উঠেছে নগর। উন্নত কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি সুযোগ-সুবিধার লাভের আশায় মানুষ নগরমুখী। বর্তমানে উন্নত জীবন-জীবিকার আকর্ষণে নগরমুখী এই মানুষগুলো শহরে এসে ক্রমশ যান্ত্রিক হয়ে পড়ছে। ব্যস্ততার মাঝে মাঝে মানুষের বিনোদনের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে সুস্থ নির্মল বিনোদনের ক্ষেত্র তৈরীর উদ্যোগ নগরগুলোতে নানা কারণে উপেক্ষিত হচ্ছে। শিশুদের বেড়ে ওঠার জন্য একটা সুন্দর পরিবেশ আমাদের সবার কাম্য। আমাদের সকল কাজ, সকল চিন্তার প্রধান উপাদান তার শিশু সন্তান। প্রধানত শিশু সন্তানকে ঘিরেই আমাদের প্রতিদিনের স্বপ্ন, সাধ, সংগ্রাম, শ্রম ও আকাংখ্যা। তাই তাদের সুস্থ্যভাবে বেড়ে ওঠা, যথাযথ শারিরীক ও মানসিক বিকাশের বিষয় টি আমাদের গুরুত্বসহকারে ভাবতে হবে। শিশু যেন আনন্দপূর্ণ শৈশবের মধ্যদিয়ে শারিরিক ও মানসিকভাবে বিকশিত হয় তার জন্য সকলকেই কাজ করতে হবে।

Saturday, April 11, 2009

মুক্তি হোক গৃহবন্দী শিশুদের। যারা চার দেওয়ালে মাঝে একান্ত অপারগ হয়েই কাটাচ্ছে শৈশব ভিডিও গেমস, টেলিভিশন নামক যন্ত্রের সাথে।

গোটা দুনিয়াই বদলে গেছে এবং যাচ্ছে। বদলে যাচ্ছে বস্তুর প্রকৃতি ও জীবের জীবনধারা, এ বদলের কারণ পুঁজির বিকাশ , অসম পুঁজির গতিময়তা এবং দৌরাত্ম। পুজির প্রতিযোগিতা বাড়ছে, বাড়ছে পণ্য দস্যুতা । মানুষকে পণ্য বানাচ্ছে সাম্রাজ্যবাদ,সে সূত্রে বদলে যাচ্ছে সামাজিক ও পারিবারিক কাঠামো। পরিবর্তন ঘটছে নগরজীবনে, জীবনযাপনে। আরবান লিভিং কনসেপ্ট এর অন্তরালে আমরা অস্থির এবং অসুস্থ জীবনধারাকে আমরা বেছে নিচ্ছি। আমরা পৃথিবীতে থেকেও মাটি থেকে বিছিন্ন। আমরা মাটির গন্ধ পাই না, পাই না মাটির ছোঁয়া। পাশের ফ্ল্যাটের মানুষগুলোকে চিনি না, তারা যেন অন্য কোন গ্রহের। ক্রমেই আমরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ছি ইট-রড-সিমেন্টের চার দেয়ালের স্কয়ারফিটের জীবন ধারার মাঝে। আজ পরিবার ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে আমি আর তুমিতে এসে দাঁড়িয়েছে। স্কয়ারফিটের জীবনই যেন আজকের নাগরিক বাস্তবতা।

"কি ছোবেন নাকি আকাশটাকে" শিরোনাম নিয়ে আমার সবাই আকাশ ছুঁতে ব্যস্ত। আমরা আকাশ ছুঁতে চাই। আকাশ ছোঁয়া এ সংস্কৃতির যুগে আমার একবারও লক্ষ্য করতে চাই না- আমি যে বাড়িটি করছি কিংবা কিনছি সে বাড়িটির পাশে কতটুকু জায়গা নির্ধারিত আছে জীবনধারণের অপরিহার্য গাছের জন্য। আমরা চাই নির্মল বাতাস। অথচ আমাদের আশেপাশের গড়ে উঠা এ আকাশ ছোঁয়া বিল্ডিংগুলোর চারপাশে বিন্দুমাত্র জায়গা নেই যেখানে নিম, হিজল, আম কিংবা একটা সরু সুপারি গাছ বেড়ে উঠবে। এখানেই আমরা একটি ফ্ল্যাট বা প্ল্লট কিনে আগামী প্রজন্মের জন্য নিশ্চিন্ত হচ্ছি। কিন্তু সে ফ্ল্যাট বা প্লট কী আমাদের কিংবা আগামী প্রজন্মের সুস্থভাবে বসবাসের উপযোগী থাকবে?

প্রিয় ব্লগার একজন শাওনের গল্প বলি তিন তলা বাড়ির দুই রুম। আশেপাশে বড় বড় বিল্ডিং সবারই প্রতিযোগীতা আকাশটাকে ছোঁবার। তার মাঝেও নগরী গোলাপবাগ এলাকার শিশু শাওন ভাগ্যবান। বিকেলে বাড়ী সামনে গোলাপবাগ মাঠে খেলে শাওন ও তার বন্ধুরা । স্কুলের অন্য বন্ধুদের অবসর যখন কাটে টিভি দেখে কিংবা মাসের দু একটা ছুটির দিনে হয়ত একটু সুযোগ মিলে মা-বাবার হাত ধরে কিছুক্ষনের জন্য খোলা আকাশের নিচে ঘুরে বেড়ানোর। তখন বাড়ীর পাশের এই মাঠটির জন্য শাওন নিজ গর্ব বোধ করে। হাজারো গল্প এই মাঠ ঘিরে।

একদিন একদল লোক আসে নিমিষে দখল হয়ে যায় গোলাপবাগ মাঠ। ফ্লাইওভার হবে এই অজুহাতে নিমার্ণ সামগ্রী রেখে মাঠটি দখল হয়ে গেছে। এখন স্কুল থেকে ফিরে টিভি দেখে কিংবা জানালার ফাক দিয়ে এক চিলতে আকাশ দেখা ছাড়া অবসর কাটানোর মত কিছুই করার নেই। হাজার ক্লান্তি মাঝেও জানালার ফাঁকা দিয়ে আকাশের দিকে তাকালেই নিমিষেই ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। তবুও ভয় হয় একদিন হয়ত এই এক চিলতে আকাশ দেখার সুযোগটা গুড়িয়ে এখানেও গড়ে উঠবে কোম্পানীর হাইরাইজ বিল্ডিং।

কিন্তু ভেবে দেখুন আপনার আমার শৈশবের কথা। খেলার ছলে গ্রামের এ পাড়া থেকে ও পাড়া, কোথায় পড়েনি আমাদের পদচিহ্ন? অধুনিক নগরায়নের খেলার মাঠের স্বল্পতা, সময় সল্পতা, নিরাপত্তার অভাব, ব্যস্ততা প্রভৃতির কারণে শিশুদের চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দি করে রাখছি। বন্দী শিশুরা অবসর কাটানোর জন্য বেছে নিয়েছে টিভি কিংবা কম্পিউটার যন্ত্রটাকে। এ কথা সত্যি শিশুর সুষ্ঠু শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলার বিকল্প নেই ।

সীমাবদ্ধতা আছে, আছে সাধ আর সামর্থ্যের মাঝে ব্যবধান কিন্তু হাতাশ হলে চলবে না কিছু একটা করতে হবে। আর কিছু একটা করার আগ্রহ নিয়ে ২০০৫ সালে ফ্ল্যাট বন্দী এই শিশুদের কৈশরকে একটু আনন্দময় তোলার লক্ষ্যে স্থানীয় অধিবাসীরা ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের সহায়তায় শিশুদের জন্য সপ্তাহে দুদিন আয়োজন করেছে বিনা খরচে সাইকেল প্রশিক্ষণ কর্মসূচী। হাজার সীমাবদ্ধতার মাঝেও সপ্তাহের দু'দিন বৃহস্পতি ও শনিবার ধানমন্ডি ৪/এ সড়ক শুধু শিশুদের জন্য। বিকাল ৪টা থেকে ৬টা ধানমন্ডি ৪/এ সড়ক যেন এক শিশু রাজ্য। দুপুর তিনটার পর থেকে শিশুদের জমায়েত শুরু হয়। ঐ নিদিষ্ট সময় রাস্তায় কেউ জোরে গাড়ি চালায় না। পুরো রাস্তাটাই থাকে শিশুদের নিয়ন্ত্রণে। খুব প্রয়োজন না পড়লে কেউ তেমন একটা গাড়ি রাস্তায় বের করে না। ঐ দু ঘন্টা সময়। তামজিদ বার বার পড়ে যাচ্ছে তারপরও এক পা দুপা করে এগিয়ে গিয়ে সাইকেলে উঠে। সাইকেলটাকে নিয়ন্ত্রনে আনার আবার প্রচেষ্টা। আজকের ভারসাম্যহীন এই সাইকেলটাকে হয়ত আগামীকালই সে নিয়ন্ত্রনে আনবে। জয় হবে তার প্রচেষ্টার, যা তার আত্নবিশ্বাস বৃদ্ধির জন্য সহায়ক। তামজিদের মত অনেক শিশুই সাপ্তাহিক বিনোদনের একটি বিশেষ অংশে পরিণত হয়েছে এই সাইকেল প্রশিক্ষণ।

শিশুদের পাশাপাশি অভিভাবকরাও তাদের সাথে সময় কাটান। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সাইকেল প্রশিক্ষণ হয়ে উঠেছে অভিভাবক-শিশুদের মিলনমেলায়। ঢাকা শহরে একই বিল্ডিং-এ থেকেও পাশের ফ্ল্যাটের মানুষরাই থাকে অচেনা। কিন্তু ধানমন্ডি ৪/এ এলাকার পরিবেশ ব্যতিক্রম। এখানকার বেশিভাগ শিশুই তাদের পাশের ফ্ল্যাটই নয় আশেপাশে অন্য বিল্ডিংয়ের শিশুদেরও চিনে। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে শিশুরা পরষ্পরের মধ্যে সহজে গড়ে নিয়েছে স্বভাবজাত বন্ধুত্বের সর্ম্পক।

আপনিও ঘুরে আসতে পারেন ছেলেমেয়ে নিয়ে ধানমন্ডি লেক ঘেষা এই শিশু রাজ্যে। আপনার শিশুর সাইকেল চালানোর শেখার প্রচেষ্টা আপনাকে মুগ্ধ করবে। হয়তবা আবারও ফিরিয়ে নিয়ে যাবে আপনার সেই র্দুদান্ত শৈশবের স্মৃতিরগুলোর কাছে । সাইকেল চালানো শেখার জন্য এখানে কোন টাকা দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। এক কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি ও ফরম পূরণ করেই সদস্য হওয়া যায়। নিজের সাইকেল না থাকলেও সমস্যা নেই, আয়োজকরাই ব্যবস্থা করে দেন সাইকেলের। প্রশিক্ষনার্থীদের সহয়তার জন্য রয়েছে কিশোর-তরুনের সমন্বয়ে একদল সেচ্ছাসেবক বিশাল কর্মবাহিনী। এছাড়াও বিভিন্ন বয়সী শিশুর জন্য রয়েছে বিভিন্ন রকমের সাইকেল। যাদের নিজস্ব সাইকেল আছে কিন্তু খোলা জায়গার স্বল্পতার জন্য সাইকেল চালাতে পারছে না। তারাও আসতে পারে এখানে সাইকেল নিয়ে। জয় হোক তাদের, যারা এই অপরিকল্পিত নগরে নিজেদের প্রচেষ্টায় শিশুদের বিনোদনের জন্য বিকল্প আয়োজন নিয়েছেন। মুক্তি হোক গৃহবন্দী শিশুদের যারা চার দেওয়ালে মাঝে একান্ত অপারগ হয়েই কাটাচ্ছে শৈশব।

আমাদের স্বপ্ন হোক কদম, হিজল কিংবা কোন বুনো ফুলের গন্ধে আবারও সুবাসিত হবে ঢাকার বাতাস। আকাশ ছোঁয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা নয়, স্বপ্ন হোক একটা ঘুঘু বাসা বুনতে খড় কুটা সংগ্রহে ব্যস্ত হবে, এই নগরীর অফিস পাড়া ব্যস্ত মতিঝিলে। আবারও মুখরিত হবে ঢাকার আকাশ হাজারো নাম জানা অজানা পাখির কলতানে। ইট, সিমেন্টের শহরে রোবটের মত নয়, আমরা চাই চারাপাশের সবুজ বৃক্ষরাজি নিয়ে প্রকৃতির বুকে আমাদের নব প্রজন্ম বেড়ে উঠবে।